জীবননগর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখক সমিতির বেপরোয়া চাঁদাবাজি

জীবননগর থেকে ফিরে আলম আশরাফ: জীবননগরে দলিল লেখক সমিতির নামে ভূমি রেজিস্ট্রেশনের (নিবন্ধন) ক্ষেত্রে চলছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি। সমিতির হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা। দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে গেলেই সরকার নির্ধারিত ৯ হাজার টাকার স্থলে ১৪ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ফি আদায় করছে সমিতি। সাধারণ দলিল লেখকরাও জিম্মি হয়ে পড়েছেন সমিতির কাছে। জমি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে তাদের কোনো হাত নেই। তারা সমিতির বাইরে গিয়ে কোনো জমি রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন না। রেজিস্ট্রি অফিসকে জিম্মি করে আইনে নির্ধারিত ফির ৩০ থেকে ৪০ ভাগ বেশি টাকা আদায় করছে সমিতি। সাধারণ জনগণ বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত টাকা দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করছেন। জনগণকে জিম্মি করে আদায়কৃত টাকা ভাগ হচ্ছে সমিতির সকল সদস্যের মধ্যে। জীবননগর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যঙ্গত্ম্যক করে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আপনি কি খুব সহজেই কোটিপতি হতে চান, তাহলে আর দেরি নয়, আজই জীবননগর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে একটি দলিল লেখার লাইসেন্স করে নিন। এখানে প্রতি সপ্তাহে ৩ থেকে ১০ লাখ টাকার ভাগ হয়, যা আপনিও পাবেন।
সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে, আইন অনুযায়ী দলিল লেখকরা দলিল লেখার বিনিময়ে প্রতি পৃষ্ঠা বাবদ ১৫ টাকা করে পাবেন। আর লেখকের লেখনি ফি হার প্রতিটি সাবরেজিস্ট্রার অফিসের সামনে একটি করে তালিকা টানিয়ে রাখার কথা। এছাড়া দলিল লেখা বাবদ আইনে নির্ধারিত ফি ক্রেতার কাছ থেকে রসিদের মাধ্যমে নিতে হবে। কিন্তু জীবননগর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে এসব নিয়ম-কানুনের কোনো তোয়াক্কা করা হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক লাখ টাকা মূল্যের একটি জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য আইনে নির্ধারিত ফি বাবদ ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে ৯ হাজার ৫৪০ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হয়। আর এ দলিল লেখা বাবদ ৫ হাজার টাকা দিতে হয় দলিল লেখককে দলিল লেখার কাজটি সম্পাদন সম্পন্ন করার জন্য। অথচ আইন অনুযায়ী এ দলিল লেখার কাজটি সম্পাদন করতে তার খরচ হওয়ার কথা দুইশ থেকে তিনশ টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন দলিল লেখক বলেন, সমিতির পক্ষ থেকে ২০১৬ সানের ৫ জুন কবলা দলিল এবং হেবা দলিলের জন্য প্রতি লাখে কতো টাকা করে নিতে হবে তার একটি তালিকা সমিতির পক্ষ থেকে সব সদস্যকে দেয়া হয়েছে। সে তালিকা মোতাবেক কবলা দলিলে প্রতি লাখে ৩ হাজার ১শ টাকা এবং হেবা দলিলে ৩৩ শতকে ২ হাজার ২শ টাকা নিয়ে সমিতিতে জমা দিতে হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জীবননগর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, সমিতির নামে যে টাকা ওঠানো হয় তা সমিতির যারা কোনো কাজ পায় না সেসব সদস্যকে সাথে নিয়ে সবার মধ্যে পুরো টাকাটা ভাগ করে দেয়া হয়। প্রতি লাখে কতো টাকা করে সমিতির নামে নেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, একেক জন একেক রকম নেন। তবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হয় ৯ শতাংশ। লেখকের লেখনী ফি নেয়ার সময় জমি ক্রেতাকে রসিদ দেয়া হয় কি-না? এ প্রশ্নের জবানে তিনি বলেন, দেশে তো কতো নিয়ম আছে, কিন্তু কয়জন মানছেন!
এ ব্যাপারে জেলা রেজিস্ট্রার খন্দকার জামিলুর রহমান বলেন, সমিতির নামে জিম্মি করে জনগণের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। যদি কেউ নেই তবে সেটা সম্পূর্ণ বেআইনি। দলিল লেখকরা একটি দলিল লেখার জন্য লেখকের লেখনি ফি কেবল আইনে নির্ধারিত হারে আদায় করতে পারেন। এক্ষেত্রেও লেখনির আদায়কৃত ফির রসিদ অবশ্যই জমি ক্রেতাকে দিতে হবে।