জীবননগর বাঁকায় দ্বিতীয় স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ : স্বামী পক্ষের দাবি সড়ক দুর্ঘটনা!

জীবননগর ব্যুরো: জীবননগর উপজেলার বাঁকা আঁশতলাপাড়ায় দ্বিতীয় স্ত্রী সবেরা খাতুনকে (৩২) হত্যা করা হয়েছে বলে তার পিতার পরিবারের পক্ষ হতে অভিযোগ করা হয়েছে। অপর দিকে স্বামী পক্ষের লোকজনের দাবি রাত ৩টার সময় সবেরা খাতুনকে তার পিত্রালয় পার্শ্ববর্তী বৈদ্যনাথপুর গ্রামে রেখে আসার জন্য স্বামী নজরুল ইসলাম পিলু (৫২) মোটরসাইকেলযোগে নিয়ে যাওয়ার পথে পেছন হতে জেআরপরিবহনের একটি নৈশকোচ ধাক্কা দিলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। গতকাল বুধবার ভোরে নিহত সবেরার লাশ বাড়ির সন্মূখ জীবননগর-কালীগঞ্জ সড়কের ধার হতে উদ্ধার করা হয় এবং একই স্থান হতে স্বামী নজরুল ইসলাম পিলুকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে পরে তাকে যশোর হাসাপাতালে নেয়া হয়। সাবেরার পিতা পক্ষের দাবি পিলু প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার জন্যই আহত হওয়ার নাটক করছে। এদিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে লাশ ময়নাতদন্ত করতে নেয়া হলে দুপক্ষের মধ্যে মারামারি সংঘটিত হয়। এতে বাকার রতন নামের একজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও সে সরে পড়ে বলে জানা গেছে।

নিহত সবেরার ভাই হাতেম আলী অভিযোগ করে বলেন তার বোনকে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করার পর পরিকল্পিতভাবে লাশ রাস্তার পাশে ফেলে রেখে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়ার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা হাসপাতালমর্গে পাঠিয়েছে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, জীবননগর উপজেলার বাঁকা গ্রামের মৃত আবুল মণ্ডলের ছেলে নজরুল ইসলাম পিলুর ঘরে প্রথম স্ত্রী মাছুরা খাতুন থাকতেও সে বাঁকা পূর্বপাড়ার দোকান কর্মচারী ইকবালের স্ত্রী সবেরা খাতুনের সাথে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। বিগত ১২ বছর পূর্বে সে সবেরাকে ভাগিয়ে এনে বিয়ে করে। এলাকাবাসী জানায় সবেরা স্বামীগৃহে থাকাকালে এক সময় তার ওপর ব্যপক নির্যাতন করা হলে সে তার পিতার বাড়ি বৈদ্যনাথপুরে গিয়ে আশ্রয় নেয়। প্রথম স্ত্রী মাছুরা বাড়ির বাইরে গেলে এ সুযোগে পিলু তার দ্বিতীয় স্ত্রী সবেরাকে তার পিত্রালয় বৈদ্যনাথপুর থেকে নিজ বাড়ি বাঁকায় নিয়ে আসতো। আবার সকাল হলে বৈদ্যনাথপুরে দিয়ে আসতো। এছাড়াও পিলু লক্ষ্মীপুরে চাতাল ব্যবসা করতো। যে রাতে সে চাতালে অবস্থান করতো সে রাতে সে সবেরাকে বৈদ্যনাথপুর থেকে চাতালে নিয়ে এসে কাছে রাখতো। প্রথম স্ত্রী মাছুরা বাড়ি না থাকার সুযোগে গত মঙ্গলবার বিকেলে পিলু কালা গ্রামে যাওয়ার কথা বলে সবেরাকে নিয়ে আসে। এরপর ভোর রাতে বাড়ির অদুরে জীবননগর-কালীগঞ্জ সড়কের মাইল পোষ্টের কাছে তাদের দু জনকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে মানুষ। এসময় তাদেরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে চিকিৎসক সবেরাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। অন্যদিকে পিলুর অবস্থা খারাপ থাকায় তাকে যশোর আড়াইশো বেড হাসপাতালে রেফার করেন। পিলুর চাচাতো ভাই সাবেক পৌর কাউন্সিলর শাখাওয়াত হোসেন ফরজ জানান, পিলু তার স্ত্রীকে মোটরসাইকেলে নিয়ে রাত ৩টার সময় বৈদ্যনাথপুর গ্রামে দিতে যাওয়াকালে পেছন হতে ঢাকাগামী নৈশকোচ জেআর পরিবহন তাদেরকে ধাক্কা দিলে সবেরা নিহত ও পিলু মারাত্মক আহত হয়।

নিহত সবেরার ভাই হাতেম আলী অভিযাগ করে বলেন সবেরাকে পরিকল্পিতভাবে উপর্যুপরি কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। পরে তার লাশ সড়কের ধারে ফেলে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চক্রান্ত করা হচ্ছে। তিনি বলেন রাত ৩টার সময় সবেরাকে কী উদ্দেশে তার পিত্রালয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো?নিহত সবেরার সারা শরীরে কোপানোর চি‎হ্ন‎ থাকলেও দুর্ঘটনা কবলিত এলাকায় রক্তের কোনো দাগ কিংবা সেরকম কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। পেছন হতে পরিবহন ধাক্কা দিলেও মোটরসাইকেলটি অক্ষত থাকলো কী ভাবে। তিনি অভিযোগ করে বলেন নিহত সবেরার মুখমণ্ডলসহ সারা শরীর ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করার দাগ স্পষ্ট রয়েছে। লাশের ময়নাতদন্ত করলেই প্রকৃত রহস্য উন্মোচিত হবে বলে তিনি দাবি করেন। নিহত সবেরার ফুফাতো ভাই আশরাফ আলী ও সাইদুর রহমান অভিন্ন অভিযোগ এনে বলেন তাকে খুবই ঠাণ্ডা মাথাই অন্য কোথাও খুন করে লাশ ওই স্থানে এনে ফেলে রাখা হয়েছে।

জীবননগর থানার ওসি এসএম ইকবাল আহমেদ জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। স্বামী নজরুল ইসলাম পিলুর পক্ষ হতে দাবি করা হচ্ছে মোটরসাইকেলযোগে রাত ৩টার দিকে স্ত্রীকে নিয়ে তার পিত্রার বাড়ি বৈদ্যনাথপুরে যাওয়ার পথে নৈশকোচের ধাক্কায় সবেরার মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে সবেরার পরিবারের পক্ষ হতে অভিযোগ করা হয়েছে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ অবস্থায় প্রকৃত রহস্য উন্মোচনে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা হাসপাতালমর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।