জীবননগর ও বারাদী এলাকায় হিটস্ট্রোকে তিনজনের মৃত্যু

 

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ভ্যাপসা গরমের মাঝে কয়েকটি স্থানে বৃষ্টি হলেও পূর্ণ স্বস্তি ফেরেনি। গত তিন দিনে জীবননগরে দু জনের হিটস্ট্রোকে মৃত্যু হয়েছে। মেহেরপুরের বারাদীতে মারা গেছেন একজন। গতকাল শনিবার বিকেলে বৃষ্টির মাঝে বজ্রপাতে দামুড়হুদার ধান্যঘরা ও কার্পাসডাঙ্গায় পৃথক বজ্রপাতে দু বোনসহ তিনজন আহত হয়েছে।

গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গায় ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৮ দশমিক ২ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ২২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বোচ্চ তামপত্রা রেকর্ড করা হয় খুলনায় ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

           জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে,গত তিনদিনের তীব্র দাবদাহ আর অসহনীয় ভ্যাপসা গরমে এ জীবননগরের মানুষ ও প্রাণিকূল অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। বেলা বৃদ্ধির সাথে সাথে গরমের হাত থেকে বাঁচতে মানুষ ও পশুপাখি ছায়া-শীতল আশ্রয়ের খোঁজে বেরিয়ে পড়ছে। তীব্র গরমের কারণে মাথা ব্যথাসহ জ্বর, সর্দি-কাশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ও তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে গত শুক্র ও গতকাল শনিবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ চিকিৎসাসেবা নেয়াসহ ভর্তি হয়েছে বলে জানা গেছে। গত দু দিনে এ উপজেলায় হিটস্ট্রোকে আরো দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এরা হচ্ছে- লক্ষ্মীপুর মিলপাড়ার অজ্ঞাত মানসিক প্রতিবন্দ্বী (৪৫) ও রাজনগরের আব্দুল খালেক চৌকিদার (৫৫)। এ নিয়ে গত ৩ দিনে এ উপজেলায় হিটস্ট্রোকে ৫ জনের মৃত্যু হলো।

বারাদী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুর জেলা সদরের বারাদী মোমিনপুর গ্রামের আজিজুল শেখ (৫৫) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে ক্ষেতে কাজ শেষে বাড়ি ফিরে তিনি স্ট্রোক করেন। বারাদীর একটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সে ওই গ্রামের মৃত নেহাল উদ্দীনের ছেলে। আজিজুলের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকালে তিনি গ্রামের এক ব্যক্তির পাটক্ষেতে দিনমজুরি করতে যান। প্রচণ্ড গরমে মাঠে থাকতে না পেরে বাড়ি ফিরে আসেন। এক পর্যায়ে তিনি স্ট্রোক করেন। তার মৃত্যুতে দরিদ্র পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

কুড়ুলগাছি প্রতিনিধি জানিয়েছেন,দামুড়হুদায় পৃথক স্থানে বজ্রপাতে স্কুল ছাত্রীসহ ৩ জন আহত হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেল ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। দামুড়হুদার কুড়ুলগাছি ইউনিয়নের ধান্যঘরা গ্রামের মোফা শাহর স্ত্রী রেহেনা খাতুন (৪০) নিজ ঘরের বারান্দায় বসে ছিলেন। এসময় টিনের চালে বজ্রপাত ঘটলে তিনি গুরুতর আহত হন। একই সময়ে কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের সর্দারপাড়ার (আধিবাসী পাড়ায়) সোনাতন মণ্ডলের (ভুজুর) ৫ম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে দেবী রাণী (১২) ও তার বোন অলোক রাণী (২২) উঠোনে বৃষ্টিতে ভেজার জন্য যায়। ঠিক সেই সময় বজ্রপাত ঘটে। এতে তারা উভয়ই গুরুতর আহত হয়। আহতদেরকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দেবী রাণী ও তার বোন অলোক রাণীর অবস্থা আশঙ্কাজনক।

দৌলতপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় কালবোশেখি ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের পর থেকে দৌলতপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা বিদ্যুতবিহীন অবস্থায় আছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের ভুরকা ও প্রাগপুর ইউনিয়নের মহিষকুণ্ডি মাঠপাড়া ও বিলগাথুয়া গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবোশেখি ঝড় প্রায় ৩ শতাধিক আধাপাকা ও কাঁচা ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। প্রায় দেড় হাজার বিঘা জমির ধান, পাট, ভুট্টা, পেঁপে, কলাবাগান ও শতাধিক পানবরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়ে উপজেলার মহিষকুণ্ডি মাঠপাড়া এলাকায় একটি শতবর্ষী বটগাছ ভেঙে বাড়িঘরের ওপর পড়ে দুটি বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। এ সময় জাহাঙ্গীর (৪৬), ময়না খাতুন (৩৪), তিতু (২০), লোকমান (৩৫), সাজদুল (৩০), সাইফুল (২৮), লতিফসহ (৩৬) ১৫ জন আহত হয়। ঝড়ের কারণে সেখানে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে ও তার ছিঁড়ে বিদ্যুতব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে।

বাংলাদেশ আবহওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি পশ্চিমা লঘুচাপ অবস্থান করছে যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম মরসুমী বায়ু বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। চট্টগ্রাম, বরিশাল, রংপুর, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা-ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। খুলনা, বরিশাল, ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের কোথাও কোথাও মৃদু ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।