জীবননগরে প্রচণ্ড শীতে আরো একজনের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার: তীব্র শীত আর সেইসাথে শৈত্যপ্রবাহে সারাদেশে জীবনযাত্রা ব্যাহত এবং বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। উত্তরবঙ্গ এবং দেশের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে তীব্র শৈত্যপ্রবাহে সাধারণ জনজীবনে অচলপ্রায় দশা। দরিদ্র জনপদে এবং অতি দরিদ্র পরিবারে শীতার্ত মানুষের দুঃসহ দিনযাপনের করুণ-কঠোর চিত্র খুব অল্পই জাতীয় পর্যায়ের সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় উঠে আসছে। স্থানীয় সংবাদপত্রে হয়তো দুঃসহ-দুর্গতির এ চিত্র কিছুটা বেশি প্রকাশ পাচ্ছে। শীত ও শৈত্যপ্রবাহের সাথে তীব্র-ঘন কুয়াশা জনজীবনের পাশাপাশি যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে করে তুলেছে ব্যাহত, বিপর্যস্ত। বিশেষত নৌপথে যোগাযোগ ও যাতায়াত মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার কবলে পড়েছে। এদিকে চুয়াডাঙ্গা জীবননগরে তীব্র শীতে আরো একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া কৃষি কাজের প্রতিবন্ধকতা, বিশেষভাবে প্রাথমিক ধাপে বাধার মুখে পড়ছে কৃষিজীবীরা। শীতে মৃত্যুর ঘটনাও অব্যাহত রয়েছে। টানা ১১ ঘণ্টা ঘন কুয়াশার কারণে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকার পর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কুয়াশা কমে গেলে ফেরি চলাচল শুরু হয়। এ সময়ে লঞ্চ চলাচলও বন্ধ থাকে। ঘন কুয়াশায় মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে ১১ ঘণ্টা পর ফেরি পারাপার শুরু হলেও মাওয়ায় এখন মালবাহী ট্রাকের জট লেগেছে। বৃহস্পতিবার রাত ১১টা থেকে শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সময়ে চৌরাস্তা এলাকায় অন্তত ৭ শতাধিক মালবাহী ট্রাক আটকা পড়ে। এর সাথে কিছু যাত্রীবাহী বাস ও ছোট ছোট যানবাহনও রয়েছে। ট্রাকের এ জট মাওয়া চৌরাস্তা থেকে খানবাড়ি এলাকা ছাড়িয়ে যায়

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগরে তীব্র শীতে আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলা শহরের হাইস্কুলপাড়ার কামালউদ্দীনের স্ত্রী লাল বানু (৫২) গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এ নিয়ে চলতি শীত মরসুমে দ্বিতীয় দফা শৈত্যপ্রবাহে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে জীবননগর উপজেলায় ৩ জনের মৃত্যু হলো।

দ্বিতীয় দফায় শুরু হওয়া শৈত্যপ্রবাহের কারণে হাড়কাঁপানো শীতে উপজেলার জনজীবন একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শৈত্যপ্রবাহের কারণে সৃষ্ট হাড়কাঁপানো শীতে মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশু-পাখিও কাবু হয়ে পড়েছে। শীতের কারণে উপজেলায় মাথাব্যাধা, কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসনালীর প্রদাহ ও সর্দি-জ্বরসহ বিভিন্ন শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এছাড়া গত কয়েকদিনের তীব্রশীত ও ঘন কুয়াশার কারণে রবি ফসলসহ বোরো বীজতলায় নানা রোগের আক্রমণ শুরু হয়েছে।

এদিকে জীবননগরে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। ছিন্নমূল, হতদরিদ্র ও শীতার্ত মানুষদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। কীটনাশক কোম্পানি ইনতেফার উদ্যোগে গতকাল শুক্রবার শীতার্তদের মাঝে চাঁদর বিতরণ করা হয়। ইনতেফার জীবননগর উপজেলা বাবুল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবু সাঈদ বাবুল এ শীতবস্ত্র বিতরণ করেন।

কীটনাশক ব্যবসায়ী আবু সাঈদ বাবুল জানান, প্রতিবছর ইনতেফার উদ্যোগে জীবননগর উপজেলা ছিন্নমূল, হতদরিদ্র ও শীতার্ত মানুষদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল শীতার্তদের মাঝে চাঁদর বিতরণ করা হয়। তিনি জানান, গতকাল প্রায় দেড় শতাধিক শীতার্তদের মাঝে এ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়।

ভ্রাম্যমা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা বাজার দোকান মালিক সমিতির উদ্যোগে দুস্থ শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধায় সমিতির কার্যালয়ে এ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। এ সময় উপস্থিতি ছিলেন কার্পাসডাঙ্গা বাজার দোকান মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মারুফ শাহ, সহসভাপতি রাসেল আহম্মেদ, সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন টোটন, যুগ্মসম্পাদক, আমিনুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ইমদাদুল হক ইমন, কোষাধ্যক্ষ মাহাবুব হোসেন, প্রচার সম্পাদক শিলু খান, সদস্য আরিফুল ইসলাম, আতিয়ার রহমান, মাহাবুবুর রহমান মনি প্রমুখ।