জীবননগরে আ.লীগের দু গ্রুপের ব্যাপক সংঘর্ষ : ককটেল বিস্ফোরণরাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ

 

বোমার আঘাত ও রবার বুলেটে পুলিশ সদস্যসহ আহত১১: পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে ১৪৪ ধারা জারিকরেছে উপজেলা প্রশাসন

জীবননগর ব্যুরো: জীবননগর উপজেলা শহরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপের মধ্যে দফায়-দফায় হামলা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় উভয় গ্রুপকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ সর্টগান থেকে ২০ রাউন্ড রাবারবুলেট বর্ষণ ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করেছে। হামলায় পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ উভয় গ্রুপের ৯ জন এবং বোমার স্প্লিন্টারের আঘাতে এক পুলিশ কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাগ্নে গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদেরকে জীবননগর, চুয়াডাঙ্গা ও যশোর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে উপজেলা প্রশাসন জীবননগর পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে।শহরে বিপুল পরিমাণ দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

স্থানীয়দের অনেকেই বলেছেন, গত পরশু শুক্রবার জাতীয় সংসদের হুইপ চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনকে সংবর্ধিত করা হয়। সংবর্ধনা সভায় সংবর্ধিত অতিথি বক্তব্য দিতে গিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগরকে উদ্দেশ্য করে নানা অভিযোগ উত্থাপন করেন। এর পরদিন গতকাল শনিবার সকাল থেকেই জীবননগরে উত্তেজনা দানা বাধে। দু পক্ষ পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেন। সংঘর্ষও শুরু হয়। বেলা গড়ানোর সাথে সাথে জীবননগর উপজেলা শহরের চিত্র পাল্টাতে থাকে। সন্ধ্যায় জীভননগর উপজেলা শহর রণক্ষ্রেত্রে রূপ নেয়।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এমপি আলী আজগার টগর গ্রুপের সমর্থক ছাত্র ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা জীবননগর ডিগ্রি কলেজে উপস্থিত হয়। এসময় তারা কলেজ মিলনায়তনে নবাগত শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময়সভায় ঢুকে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন গ্রুপের নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন মিয়া ও পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নাসিরউদ্দিনকে লাঞ্ছিত করে। এরপর তারা জীবননগর ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাস থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের কেবি মার্কেটের ভেতর দিয়ে বের হওয়ার সময় হুইপ ছেলুন জোয়ার্দ্দার গ্রুপের সমর্থকদের সামনে পড়ে। সমর্থক বিল্লাল হোসেন ও ডাবলু কলেজে আওয়ামী লীগের দু নেতাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনার প্রতিবাদ করে এবং মিছিলে বাধা দেয়। এ ঘটনায় উভয় গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে হুইপ ছেলুন জোয়ার্দ্দার গ্রুপের নেতা পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নাসিরউদ্দিন (৪৭), বিশারত আলী বিশু (৪৮), আসাদুল ইসলাম (৪৮), যুবলীগ নেতা ডাবলু (৩৮), বিল্লাল হোসেন (৩২), ছাত্রলীগ কর্মী সুমন (২৬), জসিম (১৯) ও এমপি টগর গ্রুপের সমর্থক ছাত্রলীগ নেতা খায়রুল বাশার শিপলু (২৮) ও কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান ডেও (২৩)) গুরুতর আহত হন। এসময় ছেলুন গ্রুপের নেতা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম মোর্তুজার মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষের এ খবর ছড়িয়ে পড়লে উভয় গ্রুপের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বাসস্ট্যান্ডসহ শহরজুড়ে মহড়া দেয়া শুরু করে। অবস্থা খারাপের দিকে মোড় নেয়ায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে শহরের ব্যবসায়ীরা। এ ঘটনার পর থেকে শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিলো। রাবার বুলেটবিদ্ধ দর্শনা শ্যামপুরের আবেদন আলীর ছেলে যুবলীগকর্মী সাইফুলকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। তার হাতে রাবার বুলেট গেঁথে যাওয়ায় অস্ত্রোপচার করে তা অপসারণ করতে হয়।

জানা গেছে, বিকেলে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর উপজেলা কার্যালয়ে যান এবং দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন। সন্ধ্যায় এ ঘটনার প্রতিবাদে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম মোর্তুজার নেতৃত্বে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় প্রতিবাদ মিছিল বের করলে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত মুখোশ পরিহিত একদল যুবক তাদেরকে ধাওয়া করে। মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। এসময় সভাপতি গোলাম মোর্তুজা শহরের কাজি টাউয়ারে এসে আশ্রয় নিলে হামলাকারী সেখানে ধাওয়া করে। এসময় পুলিশ হামলার হাত থেকে রক্ষাসহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টাকালে সেখানে পর পর ৩টি শক্তিশালী ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ককটেলের স্প্লিন্টারের আঘাতে থানার এএসআই সিরাজুল ইসলাম ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবু মো. লতিফ অমলের ভাগ্নে শোভন (২২) মারাত্মকভাবে আহত হন। তাদেরকে উদ্ধার করে হাসাপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ সর্টগান থেকে ১৫ থেকে ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনার পর পুলিশ পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। উদ্ভূত এ পরিস্থিতিতে শহরের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ বজায় রাখতে রাত পৌনে ৮টার দিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইউএনও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো নূরুল হাফিজ পৌর এলাকায় সকল প্রকার সভা-সমাবেশ ও মিছিল পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ১৪৪ ধারা জারি করছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শহরে বিপুল পরিমাণ দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। যেকোনো সময় আবারো বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে শহরবাসী।

হুইপ ছেলুন জোয়ার্দ্দার পক্ষের নেতা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি গোলাম মোর্তূজা সাংবাদিকদের জানান, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার হুইপ নির্বাচিত হওয়ায় শুক্রবার তাকে সংবর্ধনা জানানো হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগরের লোকজন এই হামলা চালায়।

সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর পক্ষের নেতা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান আবু মো. আ. লতিফ অমল সাংবাদিকদের জানান, নবাগত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা জানানোর পর ছাত্রলীগ শহরে মিছিল বের করলে ছেলুন জোয়ার্দ্দারের অনুসারীরা প্রথমে হামলা চালায়। এরপর পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ হয়।

চুয়াডাঙ্গার সহকারী পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের নিকট ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।