জাল ডলার চক্রের ৪ বিদেশি সদস্যের খোঁজে গোয়েন্দারা

 

স্টাফ রিপোর্টার: রমজানমাসে অর্থের প্রবাহ বেড়ে যায়। এ অবস্থায় দেশীয় প্রতারক চক্রের সহযোগিতায়জাল ডলারের আন্তর্জাতিক চক্রের কিছু সদস্য বাংলাদেশে সক্রিয় হয়ে ওঠেছে।তাদের গ্রেফতারে মাঠে নেমেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম।চক্রটির বিদেশি সদস্যরা ঢাকায় বেশ কিছুদিন ধরেই আত্মগোপন করে আছে। তারাবিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের নামেও জাল ডলার দিয়ে প্রতারণা করেছে।প্রতারণার সুবিধার্থে এরা আন্তর্জাতিক দুটি সংস্থার লোগো সংবলিত গাড়িব্যবহার করে। এদের মধ্যে চারজনের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টগোয়েন্দা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, প্রযুক্তি জানা ওইসিন্ডিকেট সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানের একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান নিয়েবিপুল অংকের জাল ডলার অপর একটি সিন্ডিকেটের কাছে হস্তান্তর করে। গোয়েন্দারাচক্রের মূল হোতাকে গ্রেফতারের জন্য এক সপ্তাহ ধরে অভিযান চালাচ্ছেন। তারাট্যুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে অপকর্ম করে যাচ্ছে। গোয়েন্দারা চক্রের সদস্যমাইকেল ও মিখাইল এবং মাইক মুটুজুয়া ও চার্লিকে গ্রেফতারে তৎপর রয়েছেন।চলতিবছর ২০ জানুয়ারি জাল ডলার তৈরির সরঞ্জামসহ রাজধানীর উত্তরা থেকে তিনবিদেশি নাগরিক পেরেজ ওয়াই পেরেজ ইফরায়ন, সেনকারিন নাট্টি ও মিকু সানডিওনাথালি লাওরেলকে গ্রেফতারের পর চাঞ্চল্যকর এ তথ্য আসে গেয়েন্দাদের হাতে।চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করে জাল ডলার তৈরি করে মানুষকেপ্রতারিত করছে। তারা মধ্যম সারির ব্যবসায়ীদের অনলাইনে বিনিয়োগের নামে জালডলার দিয়েও প্রতারণা করেছে। রাজধানীতে এ ধরনের বেশ কিছু আন্তর্জাতিক অপরাধীআত্মগোপন করে আছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-কমিশনার (ডিসি) শেখ নাজমুল আলম জানান, বিদেশি জাল ডলার প্রতারক চক্রেরসদস্যরা একাধিক পাসপোর্ট ব্যবহার করে থাকে। তাদের সাথে দেশীয় সিন্ডিকেটেরযোগসূত্রও পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, আমরা একটি বড় সিন্ডিকেটের সন্ধানে কাজকরছি। এজন্য একাধিক টিম মাঠে সক্রিয় রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইন্টারপোলের কাছথেকে আমরা একটি মেইল বার্তায় কয়েকজনের নাম পেয়েছি। যাদের বিষয়ে অনুসন্ধানচলছে। এরা মানুষকে নানা ভাবে প্রতারিত করছে। তারা সুন্দরী নারীদেরও এ কাজেব্যবহার করছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ইন্টারপোল থেকে আগেই তিন বিদেশিরবিষয়ে সতর্ক বার্তা পাঠানো হয়েছিলো। কিন্তু এদের গ্রেফতারের পর সিন্ডিকেটেরমাঝে জাল ডলার হাতবদলের চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায়। এদেরই বিশেষচক্ররাজধানীতে অবস্থান করছে।অনুসন্ধানে কাজ করা গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের একজন ব্যবসায়ীকে বিনিয়োগের কথা বলে বিদেশিএকটি জাল ডলার চক্রের গ্রুপ প্রতারণা করে। ওই ব্যবসায়ীও টানা এক বছর ধরেতার প্রতিষ্ঠানের জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারী খুঁজছিলেন। ইন্টারনেট ঘেঁটে তিনিবিদেশি একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করেন। একপর্যায়ে বিনিয়োগপ্রত্যাশী ব্যবসায়ী বিদেশিদের সাথে ফোনে কথা বলেন। তাদের সাথে কথা বলারপর মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে ইমেইল আইডি পাঠায় বিদেশিরা। এ মেইলে তাদেরকাছে ওই ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠানের প্রোফাইল এবং ব্যবসার চাহিদা অনুযায়ী কিধরনের অর্থ প্রয়োজন সেই চাহিদাপত্রও পাঠাতে বলা হয়।

বিদেশিদের সাথেযোগাযোগের পর বিনিয়োগ নিয়ে কথাবার্তার একপর্যায় ব্যবসায়ী বড় ধরনেরপ্রতারণার শিকার হন। বিষয়টি জানতে পান গোয়েন্দা সংস্থার একজন উচ্চপদস্থকর্মকর্তা। তিনি বিদেশিদের সব যোগসূত্রগুলো খতিয়ে দেখতে পান এরা বাংলাদেশেবসে বড় ধরনের জালিয়াতির সাথে জড়িত। গুলশান এবং বারিধারায় তাদের একাধিকঅফিসও আছে। মাইক মুটুজুয়া, চার্লি নামে একটি গ্রুপ এ প্রতারণা করে।অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রামের ওই ব্যবসায়ী বিদেশিদের সাথে কয়েক মাসআগে আগ্রাবাদের একটি হোটেলে বৈঠক করেন। চক্রের বিদেশি সদস্যরা তার ব্যবসায়৮০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয়। বিনিয়োগকারী প্রতারক মাইকমুটুজুয়া জাতিসংঘে এবং চার্লি ইউএনডিপি ঢাকা অফিসে চাকরি করেন বলে ওইব্যবসায়ীকে জানায়। এমনকি তারা এই দু আন্তর্জাতিক সংস্থার লোগো লাগানোগাড়িও ব্যবহার করেছিল। কিন্তু প্রতারণার শিকারের পর ব্যবসায়ীর পক্ষেখোঁজ-খবর নেয়া হলে দেখা যায় এই দু সংস্থায় এ নামে কেউ চাকরি করে না।

অভিযোগেজানা যায়, বিদেশিদের সাথে সব ধরনের চুক্তির পর তাদের হাতে তিন দফায় ২৬লাখ টাকা দেয়া হয়। প্রথম দফায় ১০ লাখ ও পরে দুই দফায় ১০ এবং ৬ লাখ টাকাদেয়া হয়। মাইক ও চার্লি ব্যবসায়ীর কাছে কিছু ডলারও দিয়ে এসেছে। কিন্তুডলারগুলো আসল নয়।নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তাবলেন, চক্রটি বিপুল অংকের জাল ডলার দিয়ে প্রতারণা করেছিলো। এ কর্মকর্তাবলেন, এরা আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্রের সদস্য। তাদের সাথে বাংলাদেশি কয়েকজনজড়িত আছে। এদের একজনকে শনাক্ত করা গেছে। যার সূত্র ধরে অভিযান চলছেগোয়েন্দাদের।