জামায়াত নেতার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের পর সীতাকুণ্ডে রণক্ষেত্র

স্টাফ রিপোর্টার: চট্রগ্রামের সীতাকুণ্ডে জামায়াত নেতার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের পর পুরো সীতাকুণ্ড রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বিজিবি, ৱ্যাব ও পুলিশের সাথে জামায়াত শিবিরকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। জামায়াত শিবিরের কর্মীরা আওয়ামী লীগের নেতা ও মুক্তিযোদ্ধাসহ ছয়টি বাড়িতে আগুন দিয়েছে। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা ছয় গাড়িতেও আগুন দিয়েছে। গতকাল চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।

বাড়বকুণ্ড ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম রোববার স্ত্রীসহ ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসার পথে কুমিল্লায় একটি রেস্তোরাঁ থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তাকে অপহরণ করা হয়। এ খবর সীতাকুণ্ডের জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা জানার পর রোববার রাত ও সোমবার ১৪টি গাড়িতে আগুন দেয়, ভাঙচুর করে এক হাজারেরও বেশি গাড়ি। আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। পুলিশ ৩০ জামায়াত-শিবিরকর্মীকে আটক করে।

গতকাল সকালে স্থানীয় লোকজন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শেখপাড়ায় কসাইখানার পাশে একটি জমিতে গুলিবিদ্ধ একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেয়। এ সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে জড়ো হয়। তার ভাই বেলাল উদ্দীন এসে লাশটি শনাক্ত করে। দুপুরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।

নিহত আমিনের পরনে পাঞ্জাবি ও পায়জামা ছিলো এবং তার মুখ ও চোখ গামছা দিয়ে বাঁধা ছিলো। তার মাথা এবং পিঠে ৪টি গুলির চিহ্ন রয়েছে। গভীররাতে তাকে হত্যা করে মহাসড়কের পাশে ফেলে দেয়া হয়েছে। সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে পুরো সীতাকুণ্ডে তাণ্ডব চালায় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। বিভিন্ন স্থানে অর্ধশত গাড়ি ভাঙচুর ও বাঁশবাড়িয়া এলাকায় ৩টি ও বানুর বাজার এলাকায় ২টি গাড়িসহ ৬টি পন্যবাহী ট্রাকে আগুন দেয়। এ সময় তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে বিকেল ২টা থেকে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। বিকেল ৪টায় জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা বাড়বকুণ্ড ইউপি চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছাদাকাত উল্লাহর বাড়ি ঘেরাও করে তার বাড়িসহ আশেপাশের ১০/১২টি বাড়িতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। এছাড়া পৌর সদরের আমিরাবাদ এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুবুল হকের বাড়িতেও হামলা চালায় তারা। সন্ধ্যায় পন্থিছিলা এলাকায় আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

ওসি এস এম বদি উজ্জামান জানান, জামায়াত নেতা আমিন গত রোববার নিখোঁজ হন। গতকাল তার লাশ পাওয়া যাওয়ার পর তার ভাই তাকে শনাক্ত করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিজিবি, ৱ্যাব ও পুলিশ যৌথভাবে কাজ করছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালমর্গে পাঠানো হয়েছে।

নিহতের ভাই মোহাম্মদ বেলাল জানান, কুমিল্লা থেকে তাকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে অপহরণ করে। থানায় অভিযোগ দেয়ার জন্য গেলেও পুলিশ কোনো অভিযোগ গ্রহণ করেনি। তিনি আওয়ামী লীগের সহযোগিতায় গোয়েন্দা পুলিশই আমার ভাইকে অপহরণের পর হত্যা করেছে।

পৌর জামায়াতের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনের ছত্রছায়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের দু চেয়ারম্যান পরিকল্পিতভাবে আমিনকে হত্যা করেছে। চট্রগ্রাম শহরের প্যারেড ময়দানে আজ বৃহস্পতিবার সকালে জানাজা শেষে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। নিহত আমিনের পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করে সীতাকুণ্ড সার্কেল এএসপি সৈয়দ ইকবাল আলী জানান, পুলিশ বা আইনশৃংখলা বাহিনীর কোনো সদস্য তাকে আটক করেছিলো বলে তার জানা নেই।

এদিকে বাড়বকুণ্ড ইউপি চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লাহ মিয়াজি জানান, জামায়াত-শিবির ক্যাডারা তার বাড়বকুণ্ডস্থ নিজ বাড়িসহ আশপাশের বাড়িতে আগুন দিয়েছে। পুরো বাড়বকু্ল এলাকায় তাণ্ডব চালিয়েছে তারা।