জানাজায় জনতার ঢল : একদিকে দাফন অপরদিকে প্রতিপক্ষের ঘরবাড়ি ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ

হরিণাকুণ্ডু উপজেলা বিএনপি সভাপতি দৌলতপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন খুন : দায়েরকৃত মামলার ২৪ আসামির অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী

 

খুনের প্রতিবাদ ও হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে ঝিনাইদহের ৬টি উপজেলায় আজ বুধবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল

 

ঝিনাইদহ অফিস/হরিণাকুণ্ডু প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ সদরসহ জেলার ৬টি উপজেলায় আজ বুধবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল। হরিণাকুণ্ডু বিএনপির সভাপতি দৌলতপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসনকে খুনের প্রতিবাদে স্থানীয় বিএনপি এ হরতাল আহ্বান করেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে কেবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়মাঠে জানাজা শেষে নিজ গ্রাম মাহরাজপুরে পারিবারিক কবরস্থানে দাফনকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। জানাজায় দলীয় নেতাকর্মী, আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকার অসংখ্য মুসল্লি শরিক হন। লাশ দাফনের পর পরই মহাজনপুর সংশ্লিষ্ট তিনটি গ্রামের কমপক্ষে ৫ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। ধরিয়ে দেয়া হয়েছে আগুন। লুটপাটও করা হয় বলে অভিযোগ।

Abul Hossen

হরিণাকুণ্ডুর কেবি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উপচেপড়া মুসল্লির অংশগ্রহণে জানাজাপূর্ব আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মসিউর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য এমএ ওহাব, শহিদুল ইসলাম মাস্টার, বিএনপি নেতা আব্দুল মালেক, এমএ মজিদ প্রমুখ। বক্তারা বলেন, ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার হতে চললো। অথচ খুনিদের একজনকেও পুলিশ ধরতে পারলো না। পুলিশ খুনিদের চেনে। অথচ ধরছে না। খুনিদের গ্রেফতারের দাবি ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আহুত হরতাল পালনেরও আহ্বান জানান নেতৃবৃন্দ।

জানাজার পরপরই লাশ নেয়া হয় নিজ গ্রামে। ক্ষুব্ধ কিছু ব্যক্তি পারদখলপুর পশ্চিমপাড়ায় প্রতিপক্ষের চারটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। মহারাজপুর, দখলপুর ও পারদখলপুর গ্রামে আওয়ামী লীগ সমর্থক রেজাউল ইসলাম, গোলাম নবী, ইয়াকুব আলী, আজগর আলীসহ বেশ কয়েকজনের বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। গত ২৮ অক্টোবর খুনের ঘটনার পরও ক্ষুব্ধ জনতা ভাঙচুর করে। হরিণাকুণ্ডু আওয়ামী লীগ অফিসসহ শহরের বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে পড়লে মোতায়েন করা হয় বিজিবি। পুলিশ ও র‌্যাবের টহল জোরদার করা হয়। এক পর্যায়ে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত হরিণাকুণ্ডুতে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। হরিণাকুণ্ডু থানার ওসি মহিবুল ইসলাম জানান, খুনিদের গ্রেফতারে নানামুখি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মাঝে আওয়ামী লীগের ৫ জনের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যা থেকে হরিণাকুণ্ডু পৌর ও আশপাশের এলাকায় পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত জারিকৃত ১৪৪ ধারা বলবত রয়েছে। পরশু সোমবার দিবালোকে বেলা ১২টার দিকে দখলপুরবাজার ব্রিজের নিকট বোমা মেরে ও কুপিয়ে খুন করা হয় আবুল হোসেনকে। নিহতের বড় ছেলে সাইদুর রহমান পান্নু বাদী হয়ে গতকাল মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে হরিণাকুণ্ডু থানায় এ মামলা দায়ের করেন।

সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে, মামলার ২৪ আসামির অধিকাংশই স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। এদিকে বুধবার জেলার ৬ উপজেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতালের সমর্থনে শহরে মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে শহরের আরাপপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে এক সমাবেশে জেলা বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম পিন্টু, জেলা যুবদলের যুগ্মআহবায়ক মীর ফজলে এলাহী শিমুল, ছাত্রদলের যুগ্মআহ্বায়ক সাইফ মাহমুদ মামুন, মোস্তাক আহমেদ ও পৌর যুবদলের সভাপতি লোকমান হোসেন বক্তব্য রাখেন। বক্তারা অবিলম্বে আবুল হোসেনের হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

ডাকবাংলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডাকবাংলা বাজারে গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় ১৮ দলের পক্ষে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। হরিণাকুণ্ডু উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন চেয়ারম্যানকে খুনের প্রতিবাদে ঝিনাইদহ জেলায় বুধবার সকাল-সন্ধা হরতালের পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেন নেতৃবৃন্দ। মিছিল শেষে সাধুহাটি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাধুহাটি ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, ৩ নং সাগান্না ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলাউদ্দীন আল মামুন, ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি জাহাঙ্গীর আনাম, ঝিনাইদহ সদর উপজেলা যুবদলের সহসভাপতি শাহীন রেজা (সোহরাব), ওলিয়ার রহমান, আব্দুর রাজ্জাক, রিপন, আব্দুল মেম্বার প্রমুখ। বক্তরা বলেন, বুধবার সকাল সন্ধ্যা ডাকবাংলা বাজারে কোনো দোকানপাট খুলবে না, গাড়ির চাকা ঘুরবে না। হরতাল সফল করার লক্ষ্যে গতকাল বিকেলে বিএনপি পৌরসভা সংলগ্ন কুলবাড়িয়া বাজারে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করে।