জাতিসংঘ স্কুলে ফের ইসরাইলি হামলা

 

শিশুসহ ১০ জন নিহত : হাসপাতালগুলোতে লাশের স্তুপ

মাথাভাঙ্গা মনিটর: ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার জাতিসংঘ পরিচালিত আরেকটি স্কুলে বিমান হামলাচালিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। গাজার রাফাহতে হামলায় গতকাল রবিবারই নিহতহয়েছেন ৩০ জন। স্কুলে আশ্রয়গ্রহণকারীরা যখন খাদ্যের জন্য লাইনেদাঁড়িয়েছিলেন তখন নৃশংস এই হামলা চালিয়ে ইসরাইল শিশুসহ ১০ জনকে হত্যা করে।গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে জাতিসংঘ পরিচালিত কোনো স্কুলে ইসরাইলের এটিদ্বিতীয়বারের মতো হামলা। গতকাল গাজায় ইসরাইলি হামলার ২৭তম দিনে নিহতেরসংখ্যা সাড়ে ১৭শতে পৌঁছেছে।

এদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজায় স্বাস্থ্যসেবাভেঙে পড়ছে। হাসপাতালগুলোতে লাশের স্তুপ হয়ে আছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায়হাসপাতালের রান্নাঘরেও লাশ রাখা হচ্ছে।

জাতিসংঘের অন্যতম মুখপাত্র ক্রিসগানেস জানিয়েছেন, গাজার দক্ষিণের রাফাহ এলাকার এই স্কুলে অনেক নাগরিক আশ্রয়নিয়েছিলেন। কিন্তু গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে বিমান হামলাচালানো হয়। তবে এই হামলা যে ইসরাইলের পক্ষ থেকেই করা হয়েছে সেটা তিনিনিশ্চিত করেননি। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্কুলের প্রবেশমুখেইবিমান হামলা চালায় ইসরাইলি সেনাবাহিনী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এ সময়খাদ্যের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন নিহতরা। মোহাম্মেদ মুয়াফাই নামে বেঁচেযাওয়া জাতিসংঘের একজন কর্মী জানিয়েছেন, বিমান থেকে ক্ষেপনাস্ত্র হামলাচালানোর সময় তিনি স্কুলের ভেতরেই ছিলেন। তিনি ফ্লোরে লাশ পড়ে থাকতেদেখেছেন। নিহতদের মধ্যে দুজন নিরাপত্তারক্ষী এবং একজন সুইপার ছিলেন বলেজানান ওই কর্মী। বাকি সাতজনের সবাই এখানে জীবন বাঁচাতে আশ্রয়ের জন্যএসেছিলেন। স্কুলটিতে প্রায় ৩ হাজার ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন। পুরোরাফাহ এলাকায় গতকালের হামলায় নিহত হয়েছে ৩০ জন। আহত হয়েছে দেড়শরও বেশি।

ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের আছেন ৯ জন।রাফাহ’র আবু ইউসেফ আল-নাজ্জার হাসপাতালের ডাক্তার আব্দুল্লাহ শিহাদাজানিয়েছেন, ওই স্কুল থেকে ৩০ জনের বেশি আহতকে হাসপাতালটিতে ভর্তি করাহয়েছে। গত বুধবার জাবালিয়ায় জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলে ইসরাইলি সেনাবাহিনীরমর্টার হামলায় নিহত হয় ১৬ জন। ওই স্কুলটিও শরনার্থী ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহূতহচ্ছিলো। গতকাল ইসরাইলি বাহিনী রাফাহ এলাকায় ১৩ বার বিমান হামলা চালিয়েছে।আর হামাস ইসরাইলে নিক্ষেপ করেছে দুটো রকেট।

হাসপাতালে লাশের স্তুপ:গাজাররাফাহ এলাকার হিলাল এমিরাতি মেটারনিটি হসপিটাল। মাতৃসদনটি ব্যবহূত হয় মাএবং শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য। কিন্তু মাতৃসদন এখন আর সেই সেবারদিতে পারছে না। সেখানে এখন মা এবং শিশুরা চিকিত্সার জন্য আসছেন না। এখনোঅনেকেই সেখানে আসছেন, তবে জীবিত নয়, লাশ হয়ে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষজানিয়েছেন, তারা এখন আর নতুন জীবনকে স্বাগত জানাতে পারছেন না। মাতৃসদনটিএখন মর্গ হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। মাতৃসদনটির ফ্লোরেই কেবল লাশের স্তুপ নয়, রান্নাঘরেও লাশের সারি দেখা গেছে। মাতৃসদনের কর্মীরা এখন নিহতদেরআত্মীয়-স্বজনের অপেক্ষায় আছেন। পরিচয় পেলেই তাকে কবর দেয়া হচ্ছে।

অঙ্গকার রক্ষা করেনি ইসরাইল: শনিবাররাতে এক টেলিভিশন ভাষণে ইসরাইল প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ২৭ দিনের হামলাআর বাড়ানো হবে কিনা তা পুনর্নীরিক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছিলেন। গাজা থেকেসৈন্য প্রত্যাহার করা হতে পারে বলেও জানিয়েছিলেন। কারণ ইসরাইলি সেনাবাহিনীদাবি করেছে, তারা হামাসের সব সুড়ঙ্গ ধ্বংস করতে সমর্থ হয়েছেন। ইসরাইল এরআগে জানিয়েছিলো, তাদের মূল লক্ষ্য হামাসের সুড়ঙ্গ ধ্বংস করা যাতে সেখান থেকেতারা ইসরাইলকে লক্ষ্য করে কোনো রকেট হামলা চালাতে না পারে। কিন্তু এতকিছু বলার পরও গতকালও ত্রিমুখিহামলা অব্যাহত রাখে ইসরাইল। সাংবাদিকরাজানিয়েছেন, ইসরাইল জনসম্মুখে হামলা কমানোর কথা বললেও বাস্তবে গাজারবিভিন্ন এলাকায় আগের মতোই হামলা অব্যাহত রেখেছে। খবরে বলা হচ্ছে, গাজারকোনো কোনো এলাকা থেকে ইসরাইল তার কিছু সৈন্য প্রত্যাহার করেছে। তবে এরকোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। গত শুক্রবার তিন দিনের যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায়ত্রিমুখি হামলা চালায় ইসরাইল। এতে ২৪ ঘণ্টায় ২শ’র বেশি বেসামরিক নাগরিকনিহত হন। তবে ইসরাইল অভিযোগ করে, তাদের এক সৈন্যকে হামাস অপহরণ করেছে।কিন্তু একদিন পর ইসরাইলই জানায়, তাদের ওই সৈন্য নিহত হয়েছেন।

স্বাস্থ্য সেবা ভেঙে পড়ছে: জাতিসংঘেরএকজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, গাজায় স্বাস্থ্য সেবা ভেঙে পড়ার পর্যায়ে রয়েছেএবং সেখানে যেকোনো সময় চিকিত্সা সেবায় বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিতেপারে। জাতিসংঘের ত্রাণ ও পূর্ত বিভাগের কর্মকর্তা ক্রিস গানেস বলেন, গত তিনসপ্তাহের তীব্র সংঘাতে ১৭ শ’র বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়াজাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে আড়াই লক্ষেরও বেশি ফিলিস্তিনি।তিনি জানান, ৪০ শতাংশ চিকিত্সা কর্মী কাজে যোগ দিতে পারছেন না। তিনিবলেন, গাজার হাসপাতালগুলোর এক-তৃতীয়াংশ, ১৪টি ক্লিনিক এবং অনেকগুলোঅ্যাম্বুলেন্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দায়িত্ব পালনকালে পাঁচজন চিকিত্সা কর্মীনিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন অনেকে।