জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির আলোচনা হচ্ছে না

আওয়ামী লীগের অনীহায় ড. গওহর রিজভী ও শমসের মবিন চৌধুরীকে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব তারানকোর ফোন

স্টাফ রিপোর্টার: জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনার যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তা আপাতত হচ্ছে না। বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট ও আগামী নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে নিউইয়র্কে আলোচনার জন্য সরকারি দল রাজি না হওয়ায় বিএনপির প্রতিনিধি দলও জাতিসংঘে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল করেছে।

বান কি মুন গত ২৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে ফোন করে সবার অংশগ্রহণে আগামীতে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সমঝোতায় যেতে দ্রুত একটি কার্যকর সংলাপে বসার আহ্বান জানান।

জানা গেছে, ওইদিনই তিনি দু নেত্রীকে দু দলের প্রতিনিধিদের জাতিসংঘে পাঠানোর প্রস্তাব দেন। জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছিলেন, সংস্থার ৬৮তম সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে তিনি দু দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি ও আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করতে চান। বিএনপি চেয়ারপারসন তাত্ক্ষণিকভাবে তার পরামর্শে সম্মতি দিলেও সরকারি দলের পক্ষ থেকে তখন ‘হ্যাঁ বা না’ সূচক কিছু জাননো হয়নি বান কি মুনকে।

সূত্র মতে, জাতিসংঘের মহাসচিবের পক্ষে এর সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীসহ আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যোগাযোগ করেন। তখন এ ধরনের আলোচনার জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিনিধি জাতিসংঘে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হয়। এরপর তারানকো একাধিকবার ফোন করেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীকে। সর্বশেষ ফোন করেন মঙ্গলবার রাতে। তিনি শমসের মবিনের মাধ্যমে বিএনপিকে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন। এ কারণে বিএনপির প্রতিনিধি দলও আর জাতিসংঘে যাচ্ছে না।

শমসের মবিন চৌধুরী গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো আমাকে বেশ কয়েকবার ফোন করেছেন। তার কাছ থেকে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের কথা জানার পর আমরাও মনে করলাম- তাহলে আর সেখানে (জাতিসংঘে) গিয়ে তো কোনো কাজ নেই। বিএনপি সেখানে গিয়ে কার সাথে আলাপ করবে। কথা ছিলো সেখানে জাতিসংঘের মহাসচিবের মধ্যস্থতায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা হবে। যেহেতু আওয়ামী লীগ কাউকে পাঠাবে না, সে কারণে বিএনপির পক্ষ থেকেও কেউ নিউইয়র্কে যাচ্ছে না। এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এ কূটনীতিক বলেন, বান কি মুনের পক্ষ থেকে এটি কোনো আমন্ত্রণ ছিলো না। এটাকে পরামর্শ বলা যায়। আমরা তার পরামর্শকে গুরুত্ব দিয়েছিলাম কিন্তু সরকারি দল আমলে নেয়নি। তিনি আরো জানান, এ আলোচনা বাতিল হয়ে যাওয়ার পর জাতিসংঘের পক্ষ থেকে নতুন করে এখন পর্যন্ত তাদের আর কোনো পরামর্শ বা প্রস্তাব দেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীর সাথে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির দু সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিউইয়র্ক যাওয়ার সিদ্ধান্ত ছিলো। জাতিসংঘে গিয়ে তারা কি বলবেন বা কি প্রস্তাব রাখবেন, সে বিষয়েও তাদের প্রস্তুতি ছিলো। এ প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে একটি রূপরেখাও তৈরি করে বিএনপি।