জনগণের অবিচ্ছেদ্য অংশ সেনাবাহিনী : প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার: রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার সোনাকান্দ গ্রামে গড়াই নদীর পারে শীতকালীন প্রশিক্ষণ মহড়া-২০১৪ শেষ হয়েছে। কাল্পনিক একটি যুদ্ধক্ষেত্র তৈরি করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের ওই মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। পরে দরবার হলে সমাবেশে প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনা সদস্যদের উদ্দেশে বলেছেন, দেশের অখণ্ডতা রক্ষায় যেকোনো অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করতে আমাদের সেনাবাহিনী সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সৈনিকদের উদ্দেশে বলেন, জনগণই দেশের শক্তি। সেনাবাহিনী জনগণের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের সবার দায়িত্ব জনগণের ভাগ্য উন্নয়ন করা। তাই জনগণের আস্থা অর্জন জরুরি।

দুপুর পৌনে ১২টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার সোনাকান্দ গ্রাম সংলগ্ন গড়াই নদীর পারে নির্মিত মঞ্চে আসেন। এরপরই শুরু হয়ে যায় যুদ্ধ (কাল্পনিক)। হঠাৎ গোলাবর্ষণে কয়েক ফুট উচ্চতায় উঠে আছড়ে পড়ে গড়াই নদীর পানি। গোলাবর্ষণে ভূমিকম্পের মতো কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা। এর পরপরই লাল দেশের (রূপকদেশ) পক্ষে একটি ড্রোন পাঠানো হয় গড়াই নদীর ওপারে শত্রুপক্ষের অবস্থান এবং সেনা সংখ্যা দেখার জন্য। মুহূর্তের মধ্যে ড্রোনটি নদীর ওপারে গিয়ে শত্রুপক্ষের অবস্থানসহ নানা তথ্য সংবলিত ভিডিও বার্তা পাঠায়। এর পরপরই শুরু হয়ে যায় যুদ্ধ। ড্রোনের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী কালার স্মোকসেল নিক্ষেপ করে শত্রু সেনাদের অবস্থান চিহ্নিত করার পর মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান থেকে শুরু হয় অব্যাহত গোলা নিক্ষেপ। ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটারবেগে চলা দুটি বিমানের গোলাবর্ষণে শত্রুপক্ষ কিছুটা পিছু হটে। এ সময় হেলিকপ্টার থেকে কয়েকশ প্যারাকমান্ডো প্যারাসুটযোগে কয়েক কিলোমিটার দূরে নেমে শত্রুপক্ষকে ব্লক করে ফেলে। শুরু হয় সম্মুখযুদ্ধ। মুহুর্মুহু গুলি ও ভারি গোলাবর্ষণের মধ্যেই জল ও স্থলপথে চলতে উপযোগী অর্ধশতাধিক আর্মার্ড পারসোনাল ক্যারিয়ার (এপিসি) গুলিবর্ষণ করতে করতে গড়াই নদী পার হতে থাকে। ততোক্ষণে ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে গড়াই নদীর ওপর একটি বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করে ফেলে লালদেশের সেনাবাহিনীর সদস্যরা। ওই ব্রিজ দিয়ে গড়াই নদী পার হয়ে কয়েকটি ট্যাঙ্কার শত্রুপক্ষের ওপর গোলাবর্ষণ করতে থাকে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপি চলা ওই কাল্পনিক যুদ্ধে জয় হয় লালদেশের। এ সময় যুদ্ধে অংশ নেয়া সেনা সদস্যদের উদ্ধারের পর হেলিকপ্টারযোগে চিকিৎসার জন্য দ্রুত পাঠানো হয় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে।

যুদ্ধজয় শেষে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ মঞ্চে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জয়ের বার্তা পৌঁছে দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীও তাকে ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের তত্ত্বাবধানে ২১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া শীতকালীন এ মহড়া দুর্জয় বাংলা শেষ হয় বৃহস্পতিবার দুপুরে। অনুশীলনে সব মিলিয়ে প্রায় ৮ হাজার সেনা, ২৬৫ প্যারাকমান্ডো, ২টি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান, ২টি পরিবহন বিমান, ২টি এম-১৭ ও ২টি বেল-২০৬ হেলিকপ্টার অংশ নেয়। এর বাইরে সেনাবিহিনীর বিপুলসংখ্যক এপিসি ও ট্যাঙ্ক অংশ নেয় এ শীতকালীন মহড়ায়।

মহড়া শেষে দরবার হলে বক্তব্যকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কাজের প্রশংসা করেন। তার সরকারের আমলে সেনাবাহিনীর উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন। ফোর্সেস গোল-২০৩০’র আলোকে সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে তার সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী ছাড়াও মন্ত্রিপরিষদের বেশ কয়েকজন সদস্য, বিদেশি কূটনীতিক, সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া, নৌবাহিনীর প্রধান ভাইস এডমিরাল এম ফরিদ হাবিব, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল এম ইনামুল বারী, যশোর পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও যশোর এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মতিউর রহমান এবং ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।