জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নিষিদ্ধ

 

স্টাফ রিপোর্টার: জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে (এবিটি) নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আর প্রজ্ঞাপন জারি করার পরপরই পুলিশ, ৱ্যাবসহ দেশের সব গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এর কপি পাঠানো হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের মধ্যদিয়ে জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), হরকাতুল জিহাদ আল ইসলাম, জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজিবি), হিযবুত তাহ্রীর ও শাহাদাত আল হিকমাতের মতোই পরিণতি হলো এটিবির।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে কয়েক দিন আগে পুলিশের তরফ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। প্রস্তাবে বলা হয়, দেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের চেয়ে আনসারুল্লাহ বিশ্বব্যাপী বেশি পরিচিত। তারা আল-কায়েদার মতাদর্শ অনুসরণ করে। প্রস্তাবটি খতিয়ে দেখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করতে গত রবিবার অনুমোদন দেয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার স্বাক্ষরে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আর প্রজ্ঞাপন জারির সঙ্গে সঙ্গে এই জঙ্গি সংগঠনটি নিষিদ্ধ হয়ে গেল বলে কালের কণ্ঠকে জানান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।

গত বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্রসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে তাঁদের প্রাণনাশের হুমকি দেয় আল-কায়েদা-আনসারুল্লাহ বাংলা-১৩ নামের একটি সংগঠন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সদর দপ্তর এক চিঠিতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ ধারা অনুযায়ী আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে নিষিদ্ধ করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানায়। গত কয়েক দিন সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে মন্ত্রণালয়ে একাধিক বৈঠকও হয়।

সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ১২ আগস্ট বরগুনায় একটি মসজিদে জঙ্গি হামলা ও নাশকতার পরিকল্পনা করার সময় সংগঠনটির নেতা মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানীসহ ৩০ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তখনই পুলিশ নতুন এই জঙ্গি সংগঠন সম্পর্কে জানতে পারে। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে নিষিদ্ধ করায় এখন সংগঠনটির জঙ্গি কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সুবিধা হবে। সংগঠনটির সদস্যদের সঙ্গে ধর্মীয় কোনো বিষয়ে মতের মিল না হলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ওরা নাস্তিক আখ্যা দেয়। এরপর তাদের তালিকা করে সে অনুযায়ী হত্যাকাণ্ড সংঘটনের জন্য পরিকল্পিত ছোট ছোট স্লিপার সেল কাজ করে থাকে। সংগঠনটির শতাধিক সক্রিয় কর্মী রয়েছে। তবে সমর্থক আরো বেশি রয়েছে।

ডিবির যুগ্মকমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম পীর ও ইসলামী চিন্তাবিদদেরও বিরোধিতা করে। এরা মূলত উগ্র মৌলবাদী। সংগঠনটি বাংলাদেশের সংস্কৃতির বিরোধিতা করে। পয়লা বোশেখের অনুষ্ঠানকে এরা বৈশাখী পূজা মনে করে। এরাই মূলত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে থাকে। এরা আইএস ও আল-কায়েদার অনুসারী। বহু আগে থেকেই সংগঠনটি আল-কায়েদার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। তবে এখনো সক্ষম হয়নি। এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে তেমন কোনো আদর্শগত পার্থক্য নেই। এমনকি যারা ইসলামকে কেন্দ্র করে রাজনীতি করে তাদের লক্ষ্যও এক। তবে তাদের মধ্যে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব রয়েছে। সংগঠনগুলো বাংলাদেশের সংবিধান এমনকি অস্তিত্বকেই অস্বীকার করে।