ছেলে জাহিদের বালিধারার আঘাতে পিতা নজরুল নিহত

একমাত্র ছেলের বিরুদ্ধে মা মালেকা বেগম বাদী হয়ে দায়ের করেছেন হত্যা মামলা
ঘটনাস্থল থেকে ফিরে এমআর কচি/শরিফ রতন: কুলাঙ্গার ছেলে জাহিদ খুন করেছে জন্মদাতা পিতা নজরুলকে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছেলে জাহিদ বালিধারা দিয়ে পিটিয়ে নজরুলকে হত্যা করে। হত্যার পর খুনি ছেলে জাহিদ পালিয়ে গেছে। দামুড়হুদা উপজেলার কানাইডাঙ্গা গ্রামে গতকাল সোমবার এ ঘটনা ঘটে। নজরুলের লাশ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ময়নাতদন্ত হবে।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের কানাইডাঙ্গা দক্ষিণপাড়ার মৃত আবদুস সাত্তারের ছেলে নজরুল ইসলাম মল্লিক ওরফে নজরুল নাপিত (৪৫) বেলা দেড়টার দিকে বাড়িতেই ছিলেন। এ সময় ছেলে জাহিদুল ইসলামের সাথে মাঠের চাষাবাদ নিয়ে কথা হয়। এক পর্যায়ে বাপ ও ছেলে উত্তেজিত হয়ে ওঠে। এ সময় বাড়িতে থাকা বালিধারা নিয়ে ছেলে জাহিদ পিতার ওপর হামলে পড়ে। বালিধারা দিয়ে মুখের ওপর উপর্যুপরি আঘাত করে সে। এতে পিতা নজরুল মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তার আর্ত চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে এলে ছেলে জাহিদ সটকে পড়ে। প্রতিবেশী শাহীন জানান, বাড়ির ভেতরে গিয়ে দেখা যায় নজরুল রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। তাকে আমরা উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা.রাজিবুল ইসলাম তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এদিকে দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশ বলেছে, এ ব্যাপারে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গ্রামসূত্রে জানা গেছে, নিহত নজরুল ইসলামের এক ছেলে ও এক মেয়ে। এর মধ্যে খুনি ছেলে জাহিদ (২২) বছর দেড়েক আগে একই ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামে বিয়ে করে। কৃষক পরিবারের লোক হলেও অর্থনৈতিকভাবে তারা বেশ স্বচ্ছল। নজরুলের মেয়ে ঝরনা খাতুন কানাইডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। ঝরনা জানায়, সে ঘটনার সময় স্কুলে ছিলো। এসে জানতে পারে ভাই জাহিদ তার পিতাকে হত্যা করেছে। ঝরনা আরও জানায়, তার পিতার সাথে প্রায়ই পরিবারের সদস্যদের গণ্ডগোল হতো। প্রতিবেশী কয়েকজন জানায়, স্ত্রী মালেকা বেগমের সাথেও নজরুলের ভালো সম্পর্ক ছিলো না। প্রায়ই ঝগড়া বিবাদ হতো তাদের। অকারণে স্ত্রী মালেকাকে পেটাতেন নজরুল। কয়েক দফা রাগারাগি করে পিতার বাড়িতে চলে যান মালেকা। গ্রামের গণ্যমান্য লোকজন গিয়ে মালেকাকে নিয়ে এসে দেয়। তাতেও জোড়া লাগেনি সংসার। শেষমেশ মাসখানেক আগে মালেকা তার পিতার বাড়ি চন্দ্রবাসে চলে যান। এসব কারণেও সংসারে অশান্তি ছিলো। মায়ের সাথে খারাপ আচরণের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই ছেলে জাহিদ তার পিতা নজরুলের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলো। মা মালেকা দিন ১৫ আগে পিতার মারপিটের কারণেই বাপের বাড়ি চন্দ্রবাস চলে যায়। মাকে বাড়ি না পেয়ে ছেলে জাহিদ ক্ষোভের আগুনে ফুসতে থাকে। সে বলে, মা যখন নেই, তখন আমরাও আলাদা হয়ে খাবো। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডার মাত্রা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে জাহিদ ছুটে গিয়ে মুখে মাথায় আঘাতের পর আঘাত করে।
গতকাল সোমবার দুপুরে বাড়িতে নজরুল আর ছেলে জাহিদই ছিলো। তাদের মধ্যে ঝগড়া-হট্টগোলের আওয়াজ শুনেছে প্রতিবেশীরা। তবে মাঝে মাঝেই এমনটি হয় বলে কেউ তেমন আমল দেয়নি তাদের ঝগড়ায়। কিন্তু নজরুলের আর্তচিৎকার শোনার পর প্রতিবেশীরা আর থেমে থাকতে পারেনি। নজরুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বিপত্তি।
গ্রামের কেউ কেউ বলেছেন, নজরুল কৃষি কাজের পাশাপাশি ক্ষৌরকর্মের কাজ করতেন কানাইডাঙ্গা গ্রামের বাটকেমারীর মোড়ে। তিনি গাঁজা তাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের নেশা করতেন। এ কারণে সংসারের কেউই তাকে পছন্দ করতো না।
ছেলে জাহিদ পিতাকে হত্যার পর পরই সটকে পড়ে। গতকাল বেলা সাড়ে ৪টার দিকে নিহত নজরুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বাড়িতে প্রতিবেশীসহ এলাকাবাসীর ভিড়। কথা হয় তার মেয়ে ঝরনার সাথে। পিতা নিহত হওয়ার খবর সে জানলেও তার মধ্যে অনুতপ্ততা দেখা যায়নি। নজরুল হত্যার খবর শুনে বেলা সাড়ে ৫টার দিকে সেখানে যায় কার্পাসডাঙ্গা ফাঁড়ির পুলিশ। তবে স্বামীর মৃত্যুর খবর শুনে তখনও বাড়িতে ফেরেননি স্ত্রী মালেকা বেগম। নজরুল হত্যার ব্যাপারে দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী জানান, রাত ১০টার দিকে নিহত নজরুলের স্ত্রী মালেকা বেগম বাদী হয়ে একমাত্র ছেলে জাহিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।