চড়া সুদের কবলে পড়ে শতাধিক পরিবার নিঃস্ব : দুজন গ্রাম ছাড়া

 

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদার জয়রামপুর বারুইপাড়ার আলোচিত নাছিমা (৩৫) দেশের প্রচলিত আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রমরমাভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন অবৈধ সুদের কারবার। তার চড়া সুদের কবলে পড়ে এলাকার প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। সুদের টাকা দিতে না পেরে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে দুই পরিবার। এছাড়া সম্প্রতি সুদের টাকা না পেয়ে ফুলমতি নামের ৮০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধাকে মেরে আহত করেছে অবৈধ সুদ কারবারি নাছিমা। টাকা দেয়ার পর শাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়ায় তার হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে ভুক্তভোগী টাকা গ্রহণকারীরা। এলাকার একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ওই অবৈধ সুদের কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন নাছিমা। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এলাকার ভুক্তভোগী মহল।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর বারুইপাড়ার মল্লিকপাড়ার ওসমান আলীর স্ত্রী খাইরুন নেছা (৪০), একই পাড়ার সালামের স্ত্রী শাহিনুর বেগম (৬০), আব্দুর রহমানের স্ত্রী হাজেরা বেগম (৫৫), মৃত আ. জলিরের স্ত্রী রহিলা খাতুনসহ এলাকার বেশকয়েকজন নারী একই সুরে বলেন, আমরা সকলেই গরিব হওয়ায় নাছিমার দোকানে ধারে চাল, তেলসহ বিভিন্ন মালামাল নিতাম। দোকানে বাকির টাকা দিতে না পারায় সে শাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে সুদসহ মোটা অঙ্কের টাকা লিখে রাখে। খাইরুন নেছা বলেন, নাছিমা আমার কাছে দোকান বাকি  বাবদ কিছু টাকা পেতো। আমি ওই টাকা দিতে না পারলে সে শাদা স্ট্যাম্পে আমার স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। আমি মাস দুয়েক আগে আনসার-ভিডিপি ব্যাংক থেকে ৪০ হাজার টাকা লোন তুলে দিই। কিন্ত সে আমার স্ট্যাম্প ফেরত না দিয়ে ওই ৪০ হাজার টাকা পাওনা করে রেখেছে। একইভাবে সালামের স্ত্রী শাহিনুর বেগম বলেন, আমি ৬ মাস আগে শাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নাছিমার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা সুদের ওপর নিই। সে আমার কাছে সুদসহ ৪৪ হাজার টাকা পাওনা করে। আমি তিন মাস আগে পলাশীপাড়া নামক এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা, ওয়েভ থেকে ২০ হাজার টাকা এবং আগুন এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা মোট ৬০ হাজার টাকা লোন তুলে তাকে দিয়েছি। তারপরও আমার টাকা পরিশোধ হয়নি। সে আমার কাছে ৪৪ হাজার টাকা পাওনা করে রেখেছে। আব্দুর রহমানের স্ত্রী হাজেরা বেগম বলেন, আমি ৭ মাস আগে নাছিমার কাছে ৩২ হাজার টাকা (মাসে ৫ হাজার টাকা হারে সুদের ওপর) নিই। আমি আনসার-ভিডিপি ব্যাংক থেকে ৪০ হাজার, ব্র্যাক থেকে ৪০ হাজার, আত্মবিশ্বাস থেকে ১০ হাজার, কারিতাস থেকে ১৫ হাজার এবং জাগরণীচক্র থেকে ১৫ হাজার মোট ১ লাখ ২০ হাজার টাকা লোন তুলে তাকে দিয়েছি। তারপরও সে আমার কাছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পাওনা করে রেখেছে। অপর ভুক্তভোগী রহিলা খাতুন বলেন, আমি বছর খানেক আগে নাছিমার কাছ থেকে সুদের ওপর ৬ হাজার টাকা নিই এবং দোকানবাকি বাবদ ৬ হাজার মোট ১২ হাজার টাকা পেতো। পরে সে আমার শাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে ২০ হাজার টাকা লিখে রাখে। আমি এ পর্যন্ত মোট ৪০ হাজার টাকা দিলেও আমার কাছে এখনও ৪০ হাজার টাকা পাওনা করে রেখেছে। তিনি আরও বলেন, একইভাবে এলাকার প্রায় শতাধিক দরিদ্র পরিবার আজ নাছিমার চড়া সুদের টাকার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এছাড়া মানিকের স্ত্রী বেশুরার কাছে ৪০ হাজার থেকে ৪ লাখ টাকা এবং নূর ইসলামের স্ত্রী হাসিনার কাছে ২০ হাজার থেকে সুদসহ ১ লাখ ২০ হাজার পাওনা করায় তারা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। সুদের টাকা দিতে না পরায় নাছিমা সম্প্রতি মল্লিকপাড়ার মৃত খোরশেদ খাঁর স্ত্রী বৃদ্ধা ফুলমতিকে মারধর করে আহত করে। তার বাম চোখটি নষ্ট হওয়ার উপক্রম। তিনি বর্তমানে ঢাকায় চিকিৎসাধীন আছেন। নাছিমা ওই বৃদ্ধা ফুলমতিকে মারধর করায় এলাকার সচেতন মহল নাছিমার প্রতি সম্প্রতি ফুঁসে উঠেছে। নাছিমার ওই অবৈধ সুদের কারবার বন্ধ করে এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে নাছিমার হাত থেকে রক্ষা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকার ভুক্তভোগী মহল।