চুয়াডাঙ্গা হাসপাতাল সড়কে যেখানে সেখানে গজিয়ে ওঠা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দৌরাত্ম্য

উৎকোচ বাণিজ্যের কারণে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে রোগী সাধারণের জীবন

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের খামখেয়ালিপনা আর উৎকোচ বাণিজ্যের কারণে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে রোগী সাধারণের জীবন। চুয়াডাঙ্গার হাসপাতাল সড়কে যেখানে সেখানে গজিয়ে ওঠা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের খপ্পরে পড়ে ইতোমধ্যে অনেক মানুষেরই স্বাস্থ্যহানি হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। এমন কী খোদ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের কয়েকটি বিভাগে এ সমস্যা বিদ্যমান। বিষয়টি সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে। চুয়াডাঙ্গা হাসপাতাল রোডের ১৯টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমতি থাকলেও এর অধিকাংশেরই প্রয়োজনীয় কক্ষ ও সরঞ্জামাদি নেই। অবৈধভাবেই পরিচালিত হয়ে আসছে এ ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এদের ল্যাব ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট না থাকলেও অন্যের স্বাক্ষর করে রাখা ব্যবস্থাপত্র দিয়ে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট।

অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল রোডে স্বাস্থ্য বিভাগের নাকের ডগায় গজিয়ে উঠেছে বেশকিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টার। যার অধিকাংশই পরিচালিত হয়ে থাকে অবৈধ পন্থায়। শর্তানুযায়ী  ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীর লোকজন বসার জন্য আলাদা কক্ষ থাকা প্রয়োজন। সাথে বাথরুম ও আলাদা ল্যাবের প্রয়োজন। সেই সাথে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও সহকারী টেকনিশিয়ান থাকা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু চুয়াডাঙ্গার মডার্ন প্যাথলজি ও হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এসব সুবিধা নেই। এ ছাড়া ফেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ইউনাইটেড ক্লিনিক, সততা এক্সরে অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নিউ সততা, ইসলামী হাসপাতাল, চুয়াডাঙ্গা ফিজিও থেরাপি সেন্টার, নিবেদিতা কম্পিউটারাইজড প্যাথলজিতে কোনো নিয়োগকৃত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বা টেকনিশিয়ান নেই। অন্য স্থানে দায়িত্বে থাকা টেকনোলিস্টের স্বাক্ষর করিয়ে রাখা ব্যবস্থাপত্র ও রিপোর্ট ফরমে রিপোর্ট দিয়ে দেয়া হয় রোগী সাধারণকে। অদক্ষ কর্মচারী দ্বারা ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ মনগড়া রিপোর্ট ফরমে বসিয়ে গছিয়ে দেয় রোগী বা তার লোকজনকে। ফলে ভুল রিপোর্ট যাওয়ার আশঙ্কা থাকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে। এতে স্বাস্থ্যহানি বা মৃত্যুর আশঙ্কাও থাকে বলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান।

অভিযোগকারীরা জানান, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অফিস সময়ে হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করলেও অন্য সময়ে ধার করা লোক দিয়ে এ গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানো হয়ে থাকে। কাজী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট না থাকলেও রাত-দিন কার্যক্রম চলে। অভিযোগ আছে হাসপাতালের কিছু চিহ্নিত দালালকে দিয়ে ইসিজি করানো হয়। অভিযোগকারীরা জানায়, চুয়াডাঙ্গায় ডায়াগনস্টিক সেন্টারের জন্য নির্ধারিত ফরমে আবেদন করে শর্ত পূরণ করা না হলেও উৎকোচ দিয়ে অনুমতি মিলে যায়। তবে কাগজ-কলমে শর্ত পূরণ করা হলেও বাস্তবে তা দেখা যায় না। কর্তা ব্যক্তিদের মাসে মাসে উৎকোচ দিয়ে এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার চলে বলে অভিযোগ রয়েছে। আরো অভিযোগ আছে, রক্ত ও প্রসাব পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ব্যবস্থাপত্রে যে চিকিৎসকের সুপারিশ থাকে সেই চিকিৎসকও নির্ধারিত কমিশন পেয়ে থাকেন। দালালদের মাধ্যমে কতিপয় চিকিৎসক এ অবৈধ সুবিধা পেয়ে থাকেন। যেসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সমস্যা থাকে সেখানে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা পরিদর্শনে যাবেন বলে হুমকি দেয়া হলেও পরে আর যান না। টাকার বিনিময়ে তারা ম্যানেজ হয়ে থাকেন বলে অভিযোগকারীরা জানান। দোষী ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে চুয়াডাঙ্গার সচেতন মহল আশা করে।