চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ: গা গুলিয়ে আসা দুর্গন্ধ : ঘেন্নাটে পরিবেশ

 

মাহমুদ কামরান: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের পরিবেশ শুধু দুর্গন্ধযুক্তই নয়, ভয়াবহ দুষিত হয়ে পড়েছে। সুস্থ মানুষ রোগী দেখতে গিয়ে দুর্গন্ধে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। হাসপাতালের পরিবেশ অতো ভয়াবহ কেন? লোকবল সংকটসহ অনিয়ম তো আছেই, দর্শনার্থীরাও হাসপাতালের পরিবেশ রক্ষায় নূন্যতম আন্তরিক নন।

হাসপাতালে প্রবেশ করলে গা ঘিন ঘিন করে ওঠে। দুর্গন্ধ এতোটাই বিকট যে তা থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই নাকে গুজে রাখেন লেবু গাছের পাতা। নাক ধরে ছাড়া খুব কম মানুষই হাসপাতালে প্রবেশ করেন। কেউ কেউ হাসপাতাল থেকে বেরে হতে না হতে বমিরোধক ওষুধ কিনতে ফার্মেসির দিকে ছোটেন। যথাযথভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করার কারণেই যে এ দশা তা দায়িত্বশীলরাও অস্বীকার করেন না। তবে দর্শনার্থীরাও যে হাসপাতালের পরিবেশ দুর্গন্ধযুক্ত করার জন্য কম দায়ী নন তাও সকলকে স্বীকার করতেই হবে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল প্রতিদিন তিন বার ঝাড়ু, সপ্তাহে একদিন ধোয়া এবং মাসে একদিন পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাগুলো পরিষ্কার করার কথা। বাস্তবে কতোটুকু হয়? দিনে এক দু বার ঝাড়ু দেয়ার দৃশ্য দৃষ্টিগোচর হলেও মাসের পর মাস ধোয়া হয় না। ড্রেনগুলো ময়লা আবর্জনায় আটকে গেছে। বাথরুমগুলো? একটিও ব্যবহারের উপযোগী নয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে থাকা ৬ জন অবশ্য বলেছেন, আমরা হাসপাতালকে আমাদের সাধ্যমতো পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। রোগী ও রোগীর লোকজন যেভাবে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলে পরিবেশ অপরিষ্কার করে তোলে তাতে প্রতিদিন দু বার করে ধুয়েও লাভ হবে না। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নকর্মীদের কাজে তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত হেলথ এডুকেটেড সহকারী দেলোয়ার হোসেন অবশ্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কর্মীদের দায়িত্বে অবহেলার কথা অস্বীকার করেননি। তিনি বলেছেন, আমি বার বার বলেও ওদের দিয়ে কাজ করাতে পারিনে। কে কখন আসে কখন যায় তাও যেমন জানতে পারি না, তেমনই কে কতোটুকু কাজ করছে তাও বোঝা আমার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠছে না। পৌরসভা থেকে বেশ কয়েকজনকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজে নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো। তারা প্রায় আড়াই বছর কাজ করেছে। কয়েক মাস হলো তাদেরকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে পৌরসভা। ফলে পরিবেশ আর দূষণমুক্ত রাখা সম্ভব হয়ে উঠছে না। অপরদিকে হাসপাতালে ভর্তি বেশ কয়েকজন রোগী অবশ্য বলেছেন, হাসপাতালে এতোটাই রোগী ও রোগীর লোকজনের চাপ যে, ভিড় সামলাতে সেবিকাদের নাভিশ্বাস অবস্থা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কর্মীদেরও কারো কারো সেবিকার কাজ করতে দেখা যায়। এরা পরিষ্কারের কাজ করবে কখন?

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের পরিবেশে দুর্গন্ধ সমস্যা অবশ্য দীর্ঘদিনের। পরিবেশ স্বাস্থ্য সম্মত রেখে হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি পৌরসভার তহবিল থেকে বেতন দিয়ে বেশ ককেজনকে হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজে নিযুক্ত করেন। তাতে পরিবেশ কিছুটা উন্নত হলেও স্বাস্থ্য সেবার মান কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নিতে না পারায় পৌর মেয়র হতাশ। তিনি বলেছেন, পৌর তহবিল থেকে বেতন দিয়ে বাড়তি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নকর্মী নিযুক্ত করেছিলাম। রোগীর দর্শনার্থীদের হাসপাতালে প্রবেশাধিকারও সংরক্ষণ করে পরিবেশ সুন্দর করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তাতেও শেষ পর্যন্ত হতাশ হতে হয়েছে। আমরাই আমাদের পরিবেশ দূষিত করি, আমরাই আমাদের প্রয়োজনীয় হাসপাতালকে দূষণমুক্ত রাখতে আন্তরিক হই না বলেই সে ব্যবস্থাও বেশি দিন স্থায়ী করা যায়নি। হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছ থেকে আমরা চিকিৎসা সেবার মান যেভাবে আশা করি সেরকম পেলে অবশ্যই পৌরসভা জনগণের কথা ভেবে আবারও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নকর্মী নিযুক্ত করবে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মাসুদ রানার সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ১শ বেডের হাসপাতালের জন্য প্রয়োজন কমপক্ষে ২০ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী। আছে মাত্র ৬ জন। তাছাড়া আড়াইশ বেডের হাসপাতালের জন্য অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। নির্মাণকাজের জন্য অধিকাংশ ড্রেন বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে দুর্গন্ধ বেড়েছে। বিষয়টি ইতোমধ্যেই গণপূর্ত বিভাগের দায়িত্বশীলদের জানানো হয়েছে। তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেবে বলে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের অদূরেই সিভিল সার্জনের অফিস। সিভিল সার্জন ডা. মো. আজিজুল ইসলাম হাসপাতালের দুর্গন্ধ পান কি-না জানতে চাইলে তিনি তা কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে বলেন, নতুন এসেছি। ইতোমধ্যেই পৌর মেয়রের সাথে কথা হয়েছে। তিনি আবারও হাসপাতালের দিকে নজর দেবেন বলে আমার বিশ্বাস। লোকবল থাকলে পরিষ্কারের কাজটি যথাযথভাবে করানো সম্ভব। হাসপাতালে লোকবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টিগোচরেরও প্রক্রিয়া করা হচ্ছে।