চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে উপচে পড়া রোগীর ভিড় : শূন্যপদে চিকিৎসক দেয়ার দাবি

 

কামরুজ্জামান বেল্টু: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে স্বাস্থ্য সেবার মান আশাতীত বৃদ্ধি পায়নি। দীর্ঘদিনেও জরুরি বিভাগে চিকিৎসক পদ সৃষ্টি করা যায়নি। ফলে বহির্বিভাগে উপচেপড়া রোগীর ভিড় সামলাতে কয়েকজন মেডিকেল অফিসারকে হিমশিম খেতে হয়। অপরদিকে অর্থপেডিক সার্জারি কনসালটেন্ট না থাকলেও সার্জারি কনসালটেন্টের সংখ্যা বর্তমানে তিনজনে দাঁড়িয়েছে। ডেপুটিশেনে রাখার কারণেই অতিরিক্ত।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে চক্ষু চিকিৎসক নেই। চর্ম ও যৌন চিকিৎসক পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। নাক-কান-গলার চিকিৎসাও ব্যহত হচ্ছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকার কারণে। শূন্যপদে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে মেডিকেল অফিসার পদ সৃষ্টি না করাই স্বাভাবিক চিকিৎসা ব্যহত হচ্ছে। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসারও এ বিষয়টি অস্বীকার করনেনি। তিনি বলেছেন, সিভিল সার্জন মাঝে মাঝেই শূন্যপদে চিকিৎসক দেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকট আবেদন করেন। তেমন শাড়া মেলে না। তবে বর্তমান সরকার আমলে হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহে কমতি নেই। বহির্বিভাগেই রয়েছে ২৮ পদের ওষুধ। হাসপাতালের ওপারেশন থিয়েটারের ইনচার্জ স্টাফ নার্স রোকেয়া বলেছেন, অপারেশন রোগীর কাউকে কিছুই বাইরে থেকে কিনতে হয় না। সরকারিভাবে সরবরাহ থাকার করণে প্রায় সকল রোগীকেই ওষুধ পথ্য দেয়া হয়। হাসপাতালে চাহিদা মতো লোকবল বৃদ্ধি করা গেলে চিকিৎসার মান বৃদ্ধি করা সহজ হতো।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বর্তমানে সার্জারি কনসালটেন্ট হিসেবে রয়েছেন ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়ন, ডা. এসএম নূরুদ্দিন রুমি ও ডা. তারেক হাসান। সপ্তাহের সোমবারে সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. নয়ন দীর্ঘ সময় ধরে অপারেশন করেন। গতকালও তিনি মেজোর ও মাইনোর মিলিয়ে মোট ২০জন রোগীর অপারেশন করেছেন। গাইনি কনসালটেন্ট থাকলেও অপারেশনে অনিহার অভিযোগ রয়েছে। অর্থপেডিক কনসালটেন্ট হিসেবে ডা. আবু বক্কার সিদ্দিক ছিলেন। তিনি বদলি জনিত কারণে চলে যাওয়ার কারণে গত কয়েক মাস ধরে হাসপাতালে অর্থপেডিক সার্জারি হচ্ছে না বললেই চলে। তার সাথে বেশ কিছুদিন চিকিৎসা দেয়ার কাজে নিয়োজিত থাকার বদৌলতে অর্থপেডিক বিষয়ে অভিজ্ঞতার আলোকে চিকিৎসা দিচ্ছেন সৈয়দ কবীর জন। জটিল সমস্যা হলে অর্থপেডিক সার্জারি রোগী রেফার করা হচ্ছে। দূরে যাওয়া বিড়ম্বনা এড়াতে অনেকেই বেসরকারি হাসপাতালের দিকে ঝুকছেন। তাছাড়া দালাল তো লেগেই থাকে।

গতকাল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে সরেজমিন জানা গেছে, বহির্বিভাগেই চিকিৎসা নিয়েছে প্রায় ৪শ রোগী। বহির্বিভাগে উপচেপড়া রোগীর চাপে চিকিৎসকদের হিমশিম খেতে হয়। মেডিকেল অফিসারদেরই পালাক্রমে জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালনের কারণে তাদের বহির্বিভাগে দায়িত্ব পালন অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ কারণে কয়েকজনকে বহির্বিভাগের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। উপায় না পেয়ে একজন মেডিকেল অ্যাসিসটেন্টের নিকটই পাঠানো হয় অধিকাংশ রোগী। তিনি চিকিৎসা দেন, না পারলে রেফার করেন। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসার মান বৃদ্ধি করতে হলে শূন্যপদে চিকিৎসক দেয়ার পাশাপাশি প্রয়োজন কর্মরত চিকিৎসকদের যথাসময়ে অফিসে উপস্থিত, রাউন্ড এবং যথা সময়ে তথা দুপুর দুটায় বাড়ি ফেরা। নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে হাসপাতালে উপস্থিত এবং নির্ধারিত সময়ের আনেক আগেই হাসপাতাল ত্যাগের কারণে চিকিৎসা সেবার মান মুখ থুবড়ে পড়ছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে দুজন শিশু বিশেষজ্ঞ থাকলেও একজন লম্বা ছুটিতে। অপরজন সামলাচ্ছেন। রোদ বৃষ্টি গরমের মধ্যে হাসপাতালে শিশু রোগীর চাপ বেড়েছে। গতকালই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ২৮ শিশুকে ভর্তি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে গতকাল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিলো প্রায় তিনশ। জেলা সদরের হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান নিশ্চিত করতে হলে দায়িত্বশীলদের বিশেষ দৃষ্টি দেয়া দরকার বলে মনে করছে সচেতন মহল।