চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নার্স সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত : সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নার্স সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে। রোগীদের চাপে হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা বিপাকে পড়েছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত ১০ জন নার্স বিভিন্ন কারণে বাইরে অবস্থান করায় এবং পরীক্ষার কারণে স্টুডেন্ট নার্সদের অনুপস্থিতির কারণে এ সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের নার্সিং ইনচার্জ প্রীতি বিশ্বাস জানান, হাসপাতালের ৩৩ জন সিনিয়র স্টাফ নার্সের মধ্যে তিনজন প্রেষণে বাইরে অবস্থান করছেন। এছাড়া একজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে অপর ছয়জন প্রশিক্ষণে রয়েছেন। নার্সের এ স্বল্পতার পাশাপাশি গত ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে স্টুডেন্ট নার্সরা দায়িত্ব পালন করছে না। যে কারণে একজন স্টাফ নার্স যে ওয়ার্ডে ডিউটি করছেন, সেখানে ধারণ ক্ষমতার তিন থেকে চারগুন রোগীকে সামলাতে হচ্ছে। তাছাড়া স্টাফ নার্স স্বল্পতার কারণে তাদেরকে ৮ ঘণ্টার পরিবর্তে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ডিউটি করতে হচ্ছে। পাঁচদিন ডিউটির পর একদিন ছুটি থাকার নিয়ম থাকলেও গত একমাস ধরে স্টাফ নার্সরা সে সুযোগ পাচ্ছেন না। এতে করে অনেক নার্স নিজেরাই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

সদর হাসপাতালে সরেজমিন গিয়েও এ দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে  শয্যার বিপরীতে অতিরিক্ত রোগী রয়েছে। একজন রোগীর সেবা শেষ না হতেই অন্য রোগীরা ডাকাডাকি শুরু করছেন। মেইল সার্জারি ওয়ার্ডে দেখা গেছে স্টুডেন্ট নার্স না থাকায় স্বেচ্ছাসেবকরা রোগীদেরকে ইনজেকশন ও স্যালাইন পুশ করছেন। অন্যান্য ওয়ার্ডগুলোতে রোগীর আত্মীয় স্বজনরাই রোগীদেরকে ওষুধ খাওয়াচ্ছেন।

অপারেশন থিয়েটারের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টাফ নার্স রোকেয়া বেগম জানান, আগে থিয়েটারে তিনজন সিনিয়র স্টাফ নার্স ও দুজন স্টাফ নার্স সার্জনকে সহযোগিতা করতেন। এখন  মাত্র একজন সিনিয়র স্টাফ নার্সকেই এসব সামলাতে হচ্ছে।

হাসপাতালের মেডিসিন কনসালটেন্ট ডা. পরিতোষ কুমার ঘোষ জানান, স্টুডেন্ট নার্স না থাকায় ভলেন্টিয়ার সাথে নিয়ে ভিজিট করতে হচ্ছে। এতে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্টাফ নার্স বলেন, দেশের অন্যান্য সদর হাসপাতালে নার্সিং ইনস্টিটিউট থেকে স্টুডেন্ট নার্সরা নিয়মিত ডিউটি করলেও পরীক্ষার অজুহাতে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে কোনো স্টুডেন্ট নার্সকে ডিউটিতে পাঠানো হচ্ছে না। এজন্য তারা নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনচার্জ (ভারপ্রাপ্ত) আলোমতি বেগমের খামখেয়ালিপনাকে দায়ী করেছেন।

অপরদিকে আলোমতি বেগম দাবি করেছেন, সারা বাংলাদেশের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটের মেয়েরা ফলাফলে এক নম্বরে রয়েছে। ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে তাদের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরীক্ষা চলাকালে সুযোগ দিতেই হাসপাতালের দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে বিরত রাখা হয়েছে। এটা নিয়ম মেনেই করা হয়েছে। একই কথা জানালেন প্রতিষ্ঠানের ইন্সট্রাক্টর মর্জিনা বেগম ও ফরিদা বেগম।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে হাসপাতালের আরএমও ডা. মাসুদ রানা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়ন জানান, স্টুডেন্ট নার্সদের অনুপস্থিতির কারণে যে সমস্যা হয়েছে তা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।