চুয়াডাঙ্গা সদর ইউএনওর বাংলোয় তিন দুস্কৃতির দুর্ধর্ষ হানা

ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সোনার গয়নাগাতি ও নগদ টাকা নিয়ে চম্পট  

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাংলোর দোতলার গ্রিল কেটে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সোনার গহনা ও নগদ টাকা হাতিয়ে নিয়ে সটকেছে কয়েক দুষ্কৃতী। গতপরশু রাত আনুমানিক ৩টার দিকে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণের বাংলোয় এ দুর্ধর্ষ ঘটনা ঘটে।

পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা খবর পেয়ে গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে দুষ্কৃতী ধরতে জোরদার অভিযান শুরু করেছে। গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সন্দেহভাজন দুজনকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। আটককৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কেএম মামুন উজ্জামান তার বাংলোর দোতলায় ঘুমিয়ে ছিলেন। স্ত্রী সন্তানও ছিলেন ঘরে। নিচের ঘরে নির্বাহী অফিসারের অসুস্থ মা ও নৈশপ্রহরী ছিলেন। রাত ৩টার দিকে বাংলোর দোতলার রান্নাঘরের গ্রিল কেটে তিন দুস্কৃতি প্রবেশ করে। ঘরে ঢুকতেই ইউএনওর স্ত্রী কে কে বলে চিৎকার করলে দুষ্কৃতীরা ঘর থেকে বের হয়ে বোরকা এগিয়ে দেয়। ইউএনও কেএম মামুন উজ্জামান যেমন ধার্মিক, তেমনই তার সহধর্মীনিও পর্দানশী। বোরকা এগিয়ে দিয়ে দুষ্কৃতীরা ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে ইউএনও ও তারস্ত্রীকে জিম্মি করে আলমারিতে রাখা নগদ ৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর হাতের দুটি বালা, কানের জোড়া দুল ও তিনটি আংটি খানেকটা চেয়ে নেয়ার মতো করেই হাতিয়ে নেয় তিন দুষ্কৃতীরা। গলায় থাকা স্বর্নের চেন কোথায় তাও জানতে চায় তারা। চেন গলা থেকে খুলে বাইরে ফেলে দিয়েছি বলে জানালে দুষ্কৃতীরা আর বিলম্ব না করে কাটা গ্রীল দিয়েই পালিয়ে যায়। ২৫ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত তিন দুর্বৃত্ত বাংলোতে অবস্থান করে। ওরা প্রথমেই মোবাইলফোনগুলো গোছিয়ে রান্না ঘরের কোনায় লুকিয়ে রাখে। এ সময় তিন দুবৃত্তের আর কোন সহযোগী নিচে ছিলো কিনা তা অবশ্য নিশ্চিত করে জানা সম্ভব।

ইউএনওর স্ত্রী পর্দানশী তাকে বোরকা দিতে হবে, এটা ওরা জানলো কীভাবে? তা ছাড়া নগদ টাকা ও সোনার গয়নাগাটি হাতিয়ে নেয়ার সময় ইউএনওকে যেমন স্যার স্যার করেছে তারা, তেমনই ইউএনওর স্ত্রীকেও ম্যাডাম সম্বোধন করেছে। এসব বিষয় শুনে পুলিশের ধারণা, দুষ্কৃতীরা তথ্য নিয়েই হয়তো বাংলোয় প্রবেশ করেছে। দুষ্কৃতীরা মোট তিন ভরি ওজনের সোনার গহনা ও নগদ ৭ হাজার টাকা নিতে পারলেও ঘরেই কাগজের নিচে লুকিয়ে রাখা কিছু টাকা নিতে পারেনি। ওই টাকা দিন ১৫ আগে ব্যাংক থেকে তুলে অন্যকে দেয়ার জন্য ঘরে রাখা ছিলো। ওই টাকার খবর পেয়েই কি দুষ্কৃতীরা গ্রিল কেটে ঘরে ঢুকেছে? এসব প্রশ্নও ঘুরপাক খেয়েছে। তবে সব প্রশ্নের মধ্যে জোরালো প্রশ্ন ছিলো সদর হাসপাতালের অদূরে উপজেলা পরিষদ কম্পউন্ডের বাংলোয় এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাহস ওই দুষ্কৃতীরা পেলো কীভাবে? পুলিশি টহল দুর্বল নাকি উপজেলা পরিষদ কম্পাউন্ডের নিরাপত্তা নড়বড়ে?

চুয়াডাঙ্গা শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আবুল খায়ের সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে গতকালই ফার্মপাড়ার সুলতান মণ্ডলের ছেলে সোপাং ও ফার্মপাড়ারই অস্থায়ী বাসিন্দা কার্পাসডাঙ্গা বাজারপাড়ার ফারুক চাঁদের ছেলে ইসলামকে আটক করে সদর থানায় নিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। পুলিশ বলেছে, সন্দেহজনকভাবে এদেরকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মূল দুস্কৃতিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ঘটনাটি ডাকাতি নাকি চুরি? এ নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই পুলিশ বলেছে, তিন জনে তো আর দস্যতা হয় না। এটা চুরি।