চুয়াডাঙ্গা শহরে তিন কিলোমিটার রাস্তার বেহাল অবস্থা

 

স্টাফ রিপোর্টার: পিচঢালাই ও কার্পেটিং উঠে গেছে আগেই। চলতি বর্ষা মরসুমে নিচের খোয়া-বালু সরে গিয়ে অসংখ্য স্থানে গর্ত ও খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থা চুয়াডাঙ্গা শহরের ভেতরে তিন কিলোমিটার মহাসড়কের।
মেহেরপুর-ঢাকা মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ এই অংশ দিয়ে এখন যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ সব যানবাহনকে ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে। এতে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ছে। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গা শহরের বাসিন্দাদের ভোগান্তি সীমা ছাড়িয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা শহরের বড়বাজারের শহীদ হাসান চত্বর থেকে আন্তজেলা বাস টার্মিনাল পর্যন্ত এ সড়কের বেহাল নিয়ে গত ১৬ জুলাই জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির মাসিক সভায় ব্যাপক আলোচনা হয়। সভায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগকে তুলাধোনা করেন। একপর্যায়ে সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ নিজেও সড়কটি সংস্কারের তাগিদ দেন। এ সময় চুয়াডাঙ্গা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল হায়দার সড়কের ওই অংশের সংস্কারের জন্য দরপত্র আহ্বানসহ প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এবং শিগগিরই কাজ শুরু হবে বলে উল্লেখ করেন। চুয়াডাঙ্গা সওজ সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ১ জানুয়ারি ঝিনাইদহ থেকে চুয়াডাঙ্গা হয়ে মেহেরপুরের মুজিবনগর পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের দরপত্রের কাজ সম্পন্ন হয়। ৮২ কিলোমিটার সড়কের এই কাজ ১৮০ কোটি ৯৩ লাখ ৯৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিলো। এই ৮২ কিলোমিটারের মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় পড়েছে ৩০ কিলোমিটার। যথাসময়ে অর্থছাড় না হওয়া ও ঠিকাদারের ঢিলেমির কারণে সড়কটির উন্নয়নকাজ আজ পর্যন্ত শেষ করা যায়নি। পর্যায়ক্রমে তিনটি জেলায় আংশিক কাজ হয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা অংশের ২১ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের কাজ চার দফা সময় ও বরাদ্দ বাড়ানোর পরও এখনো শুরুই হয়নি। ওই ২১ কিলোমিটারের মধ্যে পড়েছে চুয়াডাঙ্গা শহরের শহীদ হাসান চত্বর থেকে আন্তজেলা বাস টার্মিনাল পর্যন্ত তিন কিলোমিটার।
চুয়াডাঙ্গা চেম্বারের পরিচালক কিশোর কুমার কুণ্ডু বলেন, তাদের চেম্বার ভবন আন্তজেলা বাস টার্মিনাল-সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত। বড় বাজার থেকে প্রতিদিন সেখানে যেতে খুবই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এদিকে সড়কের বেহালের কারণে বেশ কয়েক মাস আগে থেকে ওই অংশে রিকশা চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। বর্তমানে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চলছে কোনো রকমে। কয়েকজন ইজিবাইক চালক বলেন, সড়কটির অবস্থা যা, তাতে যেকোনো সময় ইজিবাইক চলাচলও বন্ধ করে দেয়া লাগতে পারে। এতে শহরবাসীকে চলাচলে বিপাকে পড়তে হবে। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সম্মান শেষ বর্ষের ছাত্র তানজিল হোসেন বলেন, ওই সড়কের কথা শুনলে রিকশা-ইজিবাইকের চালকেরাও যেতে আপত্তি জানান। আবার হেঁটেও এতোটা পথ যাওয়া যায় না। রিকশাচালক আমজাদ হোসেন বলেন, শহরের ভেতরের প্রধান সড়ক হলেও এখানে এখন রিকশা চালানো খুবই কষ্টকর। তাই তিনি পাড়া-মহল্লার ভালো রাস্তায় রিকশা চালান। ঢাকাগামী একটি বাসের চালক ইকরামুল হক বলেন, এই তিন কিলোমিটার পার হতে যতো সময় লাগে, ভালো সড়কে তার চেয়ে কম সময়ে ৩০-৩৫ কিলোমিটার যাওয়া যায়। বাস-ট্রাকের চালক ও জেলা বাস-ট্রাক সড়ক পরিবহন শ্রমিক ও মালিক সংগঠনের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শহরের ভেতরে একটি সড়কের এমন অবস্থা কল্পনাও করা যায় না। এ সড়ক দিয়ে চলাচলের কারণে বাস-ট্রাকের টায়ার, স্প্রিংসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। এতে সবাইকে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গার সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল হায়দার বলেন, প্রকল্প গ্রহণের পর সড়কটির চুয়াডাঙ্গা অংশের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে ৯ কিলোমিটারে ২০১৪ সাল পর্যন্ত উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের কাজ হয়েছে। বাকি অংশের জন্য গত সাত বছরে কোনো বরাদ্দ আসেনি, কাজও হয়নি। তাই অব্যাহতভাবে ইট-বালু দিয়ে রাস্তা চলাচলের উপযোগী রাখার চেষ্টা চলছে। তিনি আরও বলেন, একনেকে গোটা প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ আরও ১০৫ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। ঠিকাদার নির্বাচন চূড়ান্ত হয়েছে এবং কার্যাদেশও দেয়া হয়েছে। বর্ষা মরসুমের পর শহর অংশের তিন কিলোমিটার কাজ শুরু হবে।