চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কের মাথাভাঙ্গা ব্রিজের পাশেই হচ্ছে নতুন ব্রিজ

জহির রায়হান সোহাগ: চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা ব্রিজটি ঝুঁকিপুর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ফলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ দ্রুত নতুন ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তুতি নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল রোববার সার্ভে করা হয়েছে। সার্ভে রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রণয়ন করা হবে নকশা। তারপরই শুরু হবে নির্মাণ কাজ। তবে তা শুরু হতে কতোদিন লাগবে তা এখনই নিশ্চিত নয়। সংশ্লিষ্টদের আশাবাদ, আগামী বছরেই নতুন ব্রিজ নির্মাণ শুরু হবে।
বর্তমান ব্রিজটির উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে সড়ক ও জনপথের জমি থাকলেও চুয়াডাঙ্গা শহর প্রান্তের একাংশে নির্মাণ করা হয়েছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি সৌধ। পাশেই মসজিদ। ফলে ব্রিজের উত্তর প্রান্তে তথা কাঁচাবাজার প্রান্তেই নতুন ব্রিজটি নির্মাণ করা হবে। গতকাল রোববার সার্ভে টিমসূত্র এরকমই তথ্য জানিয়েছে।
জানা গেছে, গত বছরের ২৫ অক্টোবর মালভর্তি একটি ট্রাক যাওয়ার সময় ব্রিজের মাঝখান ধসে নদীতে পড়ে। বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হলেও ব্রিজটি ধসে ফুটো হওয়ায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। ব্রিজটির মাঝে অন্তত ৩০ বর্গফুট এলাকা দেবে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে সড়ক ও জনপথ এবং প্রশাসনের কর্মকর্তারা ব্রিজের ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। ফলে সাময়িকভাবে মেহেরপুরের সাথে সড়কপথে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে চুয়াডাঙ্গা সড়ক ও জনপথ বিভাগ ভাঙা স্থানে স্টিলের পাত বসিয়ে সংষ্কার করে দিলে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে ঝুঁকি কাটেনি। সড়ক ও জনপথ বিভাগের চুয়াডাঙ্গা নির্বাহী প্রকৌশলী দ্রুত নতুন ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। এরই ভিত্তিতে সার্ভেসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নিদের্শনা মেলেন। গতকাল তারই অংশ হিসেবে সার্ভে করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা সড়ক বিভাগসূত্রে জানা গেছে, ১৯৫৮ সালে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় ১৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের মাথাভাঙ্গা ব্রিজটি। স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী বোমা মেরে ব্রিজটির ক্ষতি সাধন করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ব্রিজটি পুনরায় সংষ্কার করা হয়। গত বছরের ২৫ অক্টোবর ভারী যানচলাচলের কারণে ব্রিজটি ধসে পড়লে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। পরে স্টিলের পাত বসিয়ে ব্রিজটি যানচলাচলের উপযোগী করা হয়। তবে চুয়াডাঙ্গা সড়ক বিভাগ ইতোমধ্যে ব্রিজটি নতুনভাবে তৈরি করার উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। ১৪০ মিটার দৈর্ঘের ব্রিজটি নতুনভাবে নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ব্রিজটি পরিদর্শন করে সড়ক বিভাগ থেকে নিযুক্ত সার্ভে টিম। তারা ব্রিজটির চারপাশ পর্যবেক্ষণ এবং যন্ত্র দিয়ে মাপজোক করেন।
সার্ভে টিমের প্রধান জামাল উদ্দিন জানান, ব্রিজটি বর্তমানে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যদি অত্যন্ত ভারী যানবাহন চলাচল করে তবে বিপদের আশঙ্কা বেশি। ব্রিজটি নতুনভাবে তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক বিভাগ। আমরা পর্যবেক্ষণ করে রিপোর্ট প্রদান ও সয়েল টেস্টের রিপোর্ট তৈরি করে ডিজাইন সেকশনে পাঠানোর পর নকশা পাওয়া যাবে। গতকালই সার্ভে টিমের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সড়ক উপ-বিভাগের প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম জানান, তৎকালীন ব্রিজটি নির্মাণ করে জেলা পরিষদ। সে সময়ে ঢালাইয়ের মাধ্যমে ব্রিজ নির্মাণ করা হতো বলে টেকসই হতো না। মাথাভাঙ্গা নতুন ব্রিজটি তৈরি করা হবে প্রি-স্ট্রেস কনক্রিট বা পিসি গাভার প্রযুক্তিতে যা প্রায় ১শ’ বছর পর্যন্ত টেকসই থাকে। ব্রিজ নির্মাণ কাজের সকল প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সার্ভে টিমের রিপোর্ট ও সয়েল টেস্টের রিপোর্ট ডিজাইন সেকশনে পাঠালে তারা ডিজাইন দিলে ডিপিপি তৈরি করা হবে। ডিপিপি সড়ক বিভাগের বিভিন্ন দফতর থেকে প্রধান দফতর ও সড়ক ও মহাসড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে যাবে। পরে পরিকল্পনা কমিশনে গেলে প্রি-একনেক ও একনেক মিটিং শেষে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে দরপত্র আহ্বান ও ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে নির্মাণকাজ শুরু হবে। তবে আগামী অর্থবছরের ডিসেম্বর মাসে কাজ শুরু হতে পারে বলে জানান তিনি।