চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের আহ্বানে সর্বস্তরের সাংবাদিকের একাত্মতা ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার: তথ্য মন্ত্রণালয়কে তালকানা মন্ত্রণালয়, প্রবীণ সাংবাদিকের নামের সাথে আপত্তিকর বিশেষণ জুড়ে দিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদন প্রকাশসহ একের পর এক সাংবাদিক এবং সুধীসমাজের চরিত্রহরণ করে সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদে চুয়াডাঙ্গার সাংবাদিকরা একাট্টা হয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা ইউনিট আয়োজিত মানববন্ধন ও স্মারকলিপি পেশ কর্মসূচিতে আলমডাঙ্গা, জীবননগর ও দামুড়হুদা প্রেসক্লাবও একাত্মতা ঘোষণা করে আন্দোলনে শরিক হয়ে অভিযুক্ত পত্রিকার সম্পাদকসহ দায়ী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

ব্শে কিছুদিন ধরে নতুন খবর নামক পত্রিকাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদন প্রকাশ করায় তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে গতকাল বুধবার মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার বরাবর স্মারকলিপি পেশ কর্মসূচি পালন করা হয়। পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার বেলা ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিকরা মানববন্ধন করেন। এ কর্মসূচিতে জেলা সদরের পাশাপাশি আলমডাঙ্গা, দামুড়হুদা, জীবননগর, দর্শনা, ডিঙ্গেদহ, সরোজগঞ্জসহ বিভিন্ন ইউনিটের সাংবাদিকরা অংশগ্রহণ করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিও ছিলো স্বতঃস্ফূর্ত।

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে সাংবাদিকরা অভিযোগ করেন, সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রকাশিত প্রতিদিনের নতুন খবর নামে একটি পত্রিকায় জেলার বর্ষীয়ান সাংবাদিকদের নামে উদ্দেশ্যমূলক মনগড়া ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করছে। তাছাড়া দীর্ঘ প্রায় এক যুগ পর চুয়াডাঙ্গার দুটি প্রেসক্লাব ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিরোধিতা করেও উসকানিমূলক সংবাদ প্রকাশ করে ওই পত্রিকাটি। এরপরও চুয়াডাঙ্গার দুটি প্রেসক্লাব একীভূত হলেও তারা নতুন করে ভাঙন ধরাতে সাংবাদিকদের নাম ব্যবহার করে ভুয়া বিবৃতি পত্রিকায় প্রকাশ করে।  শুধু জেলার সাংবাদিকদের চরিত্র হনন নয়, জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়েও একের পর এক বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ করে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এহেন অসাংবাদিকসূলভ আচরণ বন্ধ ও পত্রিকার মালিক সম্পাদকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানানো হয় মানববন্ধন থেকে।

মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখেন- চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক সংগ্রাম প্রতিনিধি মাহতাব উদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক বাংলাভিশন প্রতিনিধি ও দৈনিক মাথাভাঙ্গার সম্পাদক প্রকাশক সরদার আল আমিন, সাংবাদিক সমিতির সভাপতি দৈনিক করতোয়ার প্রতিনিধি অ্যাড. শরীফ উদ্দীন হাসু, সাধারণ সম্পাদক দৈনিক বর্তমান ও খবরের প্রতিনিধি ডা. শাহার আলী, সিনিয়র সাংবাদিক দৈনিক আকাশ খবরের সম্পাদক প্রকাশক তছিরুল আলম মালিক ডিউক, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাবেক সদস্য সচিব দৈনিক আমাদের সময়ের প্রতিনিধি নাসির উদ্দীন আহমেদ, প্রেসক্লাব চুয়াডাঙ্গার সাবেক সাধারণ সম্পাদক বৈশাখী টেলিভিশনের প্রতিনিধি মরিয়ম শেলী, দামুড়হুদা প্রেসক্লাবের সভাপতি দ্বীন মোহাম্মদ, সাপ্তাহিক চুয়াডাঙ্গা বার্তার সম্পাদক শেখ সেলিম, দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিনিধি শাহ আলম সনি, চ্যানেল আই ও জনকণ্ঠের প্রতিনিধি রাজীব হাসান কচি, আলমডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক আজকালের খবর পত্রিকার আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রতিনিধি হামিদুল ইসলাম আজম ও জীবননগর প্রেসক্লাবের পক্ষে সিনিয়র দৈনিক ইনকিলাবের জীবননগর উপজেলা প্রতিনিধি আফজালুর রহমান ধীরু।

এছাড়াও মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন- দৈনিক দিনকালের প্রতিনিধি মিজানুল হক মিজান, এনটিভি ও দৈনিক মানবজমিনের রফিকুল ইসলাম, আইএনবির অ্যাড. বেলাল হোসেন, এটিএন বাংলা, এটিএন নিউজের প্রতিনিধি রফিক রহমান, সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম, সাপ্তাহিক খোঁজখবর পত্রিকার সম্পাদক জেড আলম, ইনকিলাবের প্রতিনিধি কামাল উদ্দীন জোয়ার্দ্দার, দিনবদলের সংবাদের সম্পাদক রিচার্ড রহমান, এসএটিভি ও দৈনিক সকালের খবরের প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম, একুশের কণ্ঠের এমএ মামুন, নয়াদিগন্তের বিপুল আশরাফ, এশিয়ান টিভির আব্দুস সালাম, গ্রামের কাগজের প্রতিনিধি প্রশান্ত বিশ্বাস, দেশটিভির খাইরুজ্জামান সেতু, আরটিভির কামরুজ্জামান চাঁদ, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার দামুড়হুদা উপজেলা প্রতিনিধি মো. শাহাবুদ্দীন, এশিয়াবাণীর নাসির জোয়ার্দ্দার, মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের ফাইজার চৌধুরী, দৈনিক সমকালের চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি মো. খাইরুল ইসলাম, বিএনএসর প্রতিনিধি চিত্তরঞ্জন চিতু, দৈনিক আকাশ খবরের পত্রিকার শহর প্রতিনিধি অনিক চক্রবর্তী ও সায়মা সুলতানা, মোহনা টিভির আলমডাঙ্গা প্রতিনিধি শেখ শফিউজ্জামান, দৈনিক মাথাভাঙ্গার মামুন কাইরুল, দৈনিক আজকের সূত্রপাতের প্রতিনিধি হোসেন জাকির, মাথাভাঙ্গার ইলিয়াস হোসেন, আজকের আলোর প্রতিনিধি কামরুজ্জামান সেলিম, নওরোজ পত্রিকার প্রতিনিধি ইসলাম রকিব, দৈনিক আমাদের সংবাদ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আলমগীর কবির শিপলু, মানবাধিকারকর্মী নওশের আলী, এনজিওকর্মী বিল্লাল হোসেন, মাথাভাঙ্গার দামুড়হুদা অফিসের তাছির আহমেমদ, দৈনিক আকাশ খবরের আসাদুজ্জামান, মাথাভাঙ্গার  উজ্জ্বল মাসুদ, অনিক সাইফুল, দৈনিক আলোর জগত প্রতিনিধি মাহফুজ মামুন, মাথাভাঙ্গার আলম আশরাফ, জিল্লুর রহমান মধু, মাসুম উদ্দীন মণ্ডল, দেশনিউজের আব্দুস সালাম, আকাশ খবরের আতাউর রহমান রকি, বাংলাদেশ বার্তার প্রতিনিধি কহন কুদ্দুস, দৈনিক বর্তমানের প্রতিনিধি শামসুজোহা পলাশ ও আকাশ খবরের এমএ হাসেম।

পরে সাংবাদিকরা বিক্ষোভ মিছিল সহকারে জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসাইন ও পুলিশ সুপার রশীদুল হাসানের কাছে ৫ দফা দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপি পেশ করেন। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ১। ডিক্লারেশন অনুযায়ী পত্রিকার ঠিকানা গ্রাম- সিংনগগর, ডাকঘর- উথলী, উপজেলা- জীবননগর, জেলা- চুয়াডাঙ্গা মুদ্রণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রকাশক রোজী ম্যানশন, কলেজ রোড, চুয়াডাঙ্গা মুদ্রণ করছে, যা ১৯৭৩ সালের প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাক্ট ১২-ধারার স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং অ্যাক্ট অনুযায়ী পত্রিকার ডিক্লারেশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল বলে গণ্য হবে। বিষয়টি জুডিসিয়াল তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ২। পত্রিকাটি প্রকাশনার পর থেকে উসকানিমূলক ও মানহানিকর ভুয়া সংবাদ প্রকাশ করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করে আসছে, যার আড়ালে রয়েছে চাঁদাবাজি। ৩। প্রতিদিনের নতুন খবর পত্রিকায় গত ৩ আগস্ট ২০১৩ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক সাংবাদিক সহায়তা তহবিল হতে চেক বিতরণকে অবৈধ দাবি করে ওই মন্ত্রণালয়কে তালকানা তথ্য মন্ত্রণালয় শিরোনামে একটি সংবাদপত্রের নীতিমালা বিরোধী সংবাদ প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সমৃদ্ধ সরকার এবং তার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত করে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। ৪। পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রকাশক মো. আসাদুজ্জামান একজন দুষ্টু প্রকৃতির লোক। পত্রিকারটির সম্পাদক মণ্ডলির সভাপতি ও কথিত সত্বাধিকারী হিসেবে দাবিদার সাদিকুর রহমান বকুলের বিরুদ্ধে মাদক চোরাচালানের অভিযোগ খতিয়ে দেখারও দাবি জানানো হয়েছে। তিনি বিজিবির একজন তালিকাভুক্ত চোরাচালানি বলে জনশ্রুতি রয়েছে। ৫। চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রকাশিত নতুন খবর পত্রিকাটি প্রকাশনার প্রথম সংখ্যা থেকে ৩০৬ সংখ্যা ডিক্লারেশনের নির্দেশ মোতাবেক হুসাইন আট প্রেস থেকে মুদ্রণ না করে ঢাকার অজ্ঞাত স্থান থেকে ছাপিয়ে বহুল প্রচার ও বাজারজাত করেছে। বিষয়টি ১৯৭৩ সালের প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনের অ্যাক্ট বর্হিভূত বলেও স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

স্মারকলিপি প্রদানের সময় চুয়াডাঙ্গার সাংবাদিকরা দাবি করেন, আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিতর্কিত প্রতিদনের নতুন খবরের বিরুদ্ধে প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।