চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের বড় বড় বিপণিবিতানগুলোতে অগ্নিনির্বাপনের ব্যবস্থা নেই

অসাবধনতা অগ্নিকাণ্ডের প্রধান কারণ : অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা অশ্যই অগ্নিনির্বাপণের চেয়ে উত্তম

 

খাইরুজ্জামান সেতু/উজ্জ্বল মাসুদ: চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের বড় বড় বিপণন বিপণি কেন্দ্রগুলোতে অগ্নিনির্বাপকের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। আগুন লাগলে পানির অভাবে ফায়ার স্টেশনের সদস্যদের দুর্দশার শেষ থাকবে না। স্টেশন থেকে বা নাদী থেকে পানি তুলে রিজার্ভ ট্যাঙ্কে নিয়ে আগুন নেভাতে গেলে সময় লাগবে অনেক। তাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধিপাবে। এরকমই মন্তব্য করে চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার জাকির হোসেন বলেছেন, বেশ ক’টি বড় বড় মার্কেট স্থাপন করা হলেও পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় আমরা হতাশ।

চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের শহীদ আবুল কাশেম সড়কের আধুনিক টাউয়ারটির নাম মালিক টাওয়ার। বহুতল ভবনের নিচে গাড়ি পার্কিঙের ব্যবস্থা রাখা হলেও পানি সংরক্ষণের বিশেষ ব্যবস্থা নেই। সামনে পাইপও স্থাপন করে অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্যোগ মোকাবেলার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। পাশের ফাতেমা প্লাজারও অভিন্ন দশা। বিশাল মার্কেটের নাম প্রিন্স প্লাজা। এ মার্কেটেও অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনা ঘটলে প্রতিরোধের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। অবাক হলেও সত্য যে সমবায় নিউমার্কেটেও নেই ভূগর্ভে পানি রক্ষণাগার। বড়বাজার জামে মসজিদের সামনের একটি টিউবওয়েল ও ওজুর জন্য সংরক্ষিত পানিই ভরসা। শহীদ হাসান চত্বরে মুন সুপার মার্কেট, আলী হোসেন সুপার মার্কেটসহ পাশে গড়ে ওঠা মার্কেটগুলোরও অভিন্ন দশা। চুয়াডাঙ্গার ব্যবসায়ীদের প্রাণকেন্দ্র ফেরিঘাট রোডের শুধু মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটে পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার জাকির হোসেন। তিনি বলেছেন, চুয়াডাঙ্গা কলেজ রোডেও পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। সম্প্রতি রূপছায়া সিনেমাহলের অদূরবর্তী কাঠগোলার কাঠের আসবাবপত্র তৈরির কারখানায় আগুন লাগলে ফায়ার স্টেশনের সদস্যদের অসহায় হয়ে পড়তে হয়। কয়েক দফা স্টেশন থেকে রিজার্ভট্যাঙ্কে পানি নিয়ে সেই আগুন নেভাতে হয়। এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গা বড় মসজিদপাড়াসহ বেশ কয়েকটি মহল্লা রয়েছে যেখানে পানি দূরের কথা, আগুন লাগলে সরু রাস্তায় গাড়ি নিয়ে ফায়ার স্টেশনের সদস্যদের ঘটনাস্থলে পৌঁছুনোই দুষ্কর। চুয়াডাঙ্গা বড়বাজার নিচের বাজারের বৈদ্যুতিক সংযোগের তারগুলোর বেহাল দশা। এমনভাবে তারগুলো রয়েছে যে, সটসার্কিটের আশঙ্কা বিরাজ করছে। তা ছাড়া বিদ্যুত বিভাগেরও বেশ কিছু গাফিলতি রয়েছে। বৈদুতিক খুঁটিতে বৈদ্যুতিক তারের মাঝের পাখির বাসাগুলোও অপসারণের তেমন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায় না। এ সব কারণে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি অনেক বেশি। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাধ্যতামূলক অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রাখার বিষয়টি আইনে থাকলেও বাস্তবে নেই।

চলতি গরম মরসুমে বেশ কয়েকদফা চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও উঠেছে তাপমাত্রা। তীব্র খরার কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিও বেশি। গতকাল শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রাজশাহীতে ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। চুয়াডাঙ্গায় ছিলো ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গতকাল ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান হ্রাস পাওয়ায় এবং বাতাসে জলীয়বাষ্পের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ভ্যাপসা গরম অনুভূত হয়েছে। বেড়েছে অস্বস্তি। আবহাওয়া অফিস পূর্বাভাসে বলেছে, খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মাঝারি ও কোথাও কোথাও মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। লঘুচাপের বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল, বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারিধরনের ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। চাঁদপুর ও বরিশাল অঞ্চলসহ ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মাঝারিথেকে মৃদু ধরনের তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

স্টেশন অফিসার জাকির হোসেন বলেছেন, যেহেতু খরামরসুম চলছে সেহেতু সকলকেই অগ্নিকাণ্ড থেকে রক্ষাপেতে সকলকে বাড়তি সতর্ক হতে হবে। অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা অবশ্যই অগ্নিনির্বাপনের চেয়ে উত্তম। শহরে অগ্নিকাণ্ডের মূল কারণ বৈদ্যুতিক গোলযোগ, চুলার আগুন ও বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরো। ফলে ব্যবহৃত বৈদুতিক তার ক্রুটিমুক্ত কিনা মাঝে মাঝেই পরীক্ষা করতে হবে। রান্নার পর চুলা নিভিয়ে রাখতে হবে। ধুমপান করলে অবশিষ্ট অংশ নিভিয়ে নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে। মোবাইলফোনে ফায়ার স্টেশনের মোবাইলফোন ও টেলিফোন নম্বর সেভ করে রাখা প্রয়োজন। হাতের কাছে লিখেও রাখা দরকার। কারণ বিপদের সময় নম্বর মনে থাকে না। চুয়াডাঙ্গা ফায়ার স্টেশনের টেলিফোন নম্বর- ০৭৬১ ৬৩১২২ ও মোবাইলফোন নম্বর- ০১৭৪৫ ৪০০৬৯৯।