চুয়াডাঙ্গা ইম্প্যাক্টে অপারেশনের পর ২০জন নারী-পুরুষ চোখ হারিয়ে গুণছেন অনিশ্চয়তার প্রহর

৫ মে ২৪ জন রোগীর অপারেশনের পর গণইনফেকশন দেখা দিলে ঢাকায় পাঠিয়েও মেলেনি প্রতিকার
স্টাফ রিপোর্টার: কেউ কিছুটা কম দেখতেন, কারো চোখে নেমে এসেছিলো ধুসরতা। সুস্থতা পেতে চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্টে চোখের অপারেশন করিয়ে ২০ জন একটি করে চোখ হারিয়ে এখন অনিশ্চয়তার প্রহর গুণছেন। একটি চোখের দৃষ্টিশক্তি তো গেছেই, অপরটিও কি অন্ধ হয়ে যাবে? এ প্রশ্ন নিয়ে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন গ্রামের ২০ জন নারী-পুরুষ ক্ষোভের আগুনে জ্বলছেন। তবে ওদের ক্ষোভ প্রশমনে ইম্প্যাক্ট ফাউন্ডেশনের খরচে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেও প্রত্যাশিত সুফল না পাওয়ায় পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।
জানা গেছে, গত ৫ মার্চ চুয়াডাঙ্গা কেদারগঞ্জের ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোমিরয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে ২৪ জন রোগীর একটি করে চোখে অপারেশন করা হয়। অপারেশনের একদিন পরই ছাড়পত্র দেয়া হয়। ২৪ জনের মধ্যে ২০জনের চোখে তীব্র যন্ত্রণা দেখা দেয়। প্রাথমিক পরীক্ষায় ধরা পড়ে ইনফেকশন। অপারেশনের চোখে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, চোখের অপারেশনের সময় চোখ তুলে নিয়েছে কিনা সেটাই এখন সন্দেহ। অপারেশন করা চোখে দৃষ্টিশক্তি পরিষ্কার হওয়ার বদলে তীব্র যন্ত্রণাসহ দৃষ্টিশক্তি না থাকার কারণে ক্ষোভের মাত্রা দিনদিন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠছে। এক পর্যায়ে এদের নেয়া হয় ঢাকার ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউ ও ভিশন আই হাসপাতালে। সেখানে নিয়ে চিকিৎসা দিয়েও অপারেশনের চোখে দৃষ্টি ফেরানো যায়নি, তবে ইনফেকশন অপর চোখে ছড়ানো থেকে রক্ষার চেষ্টা চালানো হয়েছে।
যারা চোখের অপারেশন করিয়ে চোখ হারিয়ে অনিশ্চয়তার প্রহার গুণছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন চুয়াডাঙ্গা গাইদঘাটের গোলজার হোসেন, আলুকদিয়ার ওলি মোহাম্মদ, আলমডাঙ্গার বাড়াদী এনায়েতপুরের খন্দকার ইয়াকুব আলী, খাসকররার লাল মোহাম্মদ, চুয়াডাঙ্গার সোনাপট্টির আবনী দত্ত, আলমডাঙ্গা মোড়ভাঙ্গার আহমেদ আলী, হারদীর হাওয়াতন, দামুড়হুদা লক্ষ্মীপুরের তৈয়ব আলী, মদনার মধু হালদার, আলমডাঙ্গা নতিডাঙ্গার ফাতেমা খাতুন, খাস-বাগুন্দার খবিরন নেছা, জীবননগর সিংনগরের আজিজুল হক, দামুড়হুদা চিৎলার নবীছদ্দিন, মজলিশপুরের সাফিকুল ইসলাম, আলমডাঙ্গা রংপুরের ইকলাস, দামুড়হুদা কার্পাসডাঙ্গার গোলজান, সদাবরীর হানিফা, আলমডাঙ্গা স্টেশনপাড়ার কুতলি খাতুন, কুটি পাইকপাড়ার উষা রাণী ও দামুড়হুদার বড় বলদিয়ার আয়েশা খাতুন।
২০ জনের চোখে অপারেশনের পর ইনফেকশনে দৃষ্টিশক্তি হারানোর বিষয়ে বিস্তারিত জানতে গেলে ইম্প্যাক্ট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা কেদারগঞ্জস্থ ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ডা. সাফিউল কবির জিপু ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ৪ ও ৫ মে দুদিনে মোট ৬০ জন রোগীর চোখের অপারেশন করা হয়। ৫ মে অপারেশন করা রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে ছাড়পত্র দেয়ার পর দেখা যায় ২০ জনের চোখে ইনফেকশন। দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য ইম্প্যাক্টের খরচে তাদের ঢাকার ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও ভিশন আই হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়। তাছাড়া কেন চোখে ইনফেকশন হলো তা জানতে ইম্প্যাক্ট হাসপাতালে ব্যবহৃত ওষুধ পথ্য পরীক্ষার জন্য আইসিসিভিডিআরবি-তে প্রেরণ করা হয়। সেখান থেকে পাওয়া প্রতিবেদনে দেখা গেছে ওরাবুলু নামের ব্যবহৃত কিডসে গার্ম নেগেটিভ সেসিলি ব্যাক্টরিয়ার অস্থিত্ব রয়েছে। এ থেকেই অপারেশেনর রোগীদের চোখে ইনফেকশন হয়েছে বলে আমরা ধারনা করছি। তাছাড়া ঢাকাতেও যখন রোগী পাঠানো হয় তখন ওই রোগীদের চোখের ইনফেকশনের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে একই ব্যাক্টেরিয়ার নমুনা পাওয়া গেছে।
অপারেশন করেছিলেন ডা. শাহীন। ইম্প্যাক্ট ফাউন্ডেশনের সংগ্রহকৃত ওষুধ পথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। যে চোখে অপারেশনের পর রোগ নিরাময় হওয়ার কথা সেই চোখে ইনফশনে এখন দৃষ্টিশক্তি নেই। এর ক্ষতিপূরণ কে দেবে? স্পষ্ট জবাব মেলেনি, তবে ইম্প্যাক্ট ফাউন্ডেশনের চুয়াডাঙ্গা প্রশাসনিক কর্মকর্তা পুনঃপুন দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, আমরা তো ভালোর জন্যই চেষ্টা করেছি। ওষুধের মধ্যেই বাসা বাধা ব্যাক্টেরিয়া সর্বনাশ ডেকে এনেছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রেখেছি। এসব খরচ ইম্প্যাক্টই বহন করছে।