চুয়াডাঙ্গায় সড়ক যোগাযোগ অচলাবস্থা : পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে যাত্রী সাধারণের দুর্ভোগ

 

 

আবারো বাস ভাঙচুর : শহীদ হাসান চত্বরে পরিবহন শ্রমিকদের অবরোধ : দূরপাল্লার কোচ চলাচলেও প্রতিবন্ধকতা

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়নি। বরঞ্চ সংকট আরো বেড়েছে। গতকাল সকাল থেকে ইজিবাইক মালিক শ্রমিকেরা বিভিন্ন সড়কে বেশ কয়েকটি বাস ভাঙচুর শুরু করলে পরিবহন মালিক শ্রমিকেরা ফুঁসে ওঠে। এক পর্যায়ে দূরপাল্লার কোচ চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে জেলার আভ্যন্তরীণ রুটে ও দূরপাল্লার যাত্রী সাধারণকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। অবশ্য শহরের রিকশা-ভ্যান আর প্রধান প্রধান সড়কে শ্যালোইঞ্জিনচালিত অবৈধযান চালকদের বেড়ে যায় ভাড়া। অনেকেই বলেন, ইজিবাইক মালিক শ্রমিক ও পরিবহন মালিক শ্রমিকদের বিরোধে এদের পোয়া বারো। সুযোগ বুঝে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুন।

চুয়াডাঙ্গা ইজিবাইক মালিক শ্রমিক বহুমুখি সমবায় সমিতি লিমিটেড গত পরশু মঙ্গলবার ঘোষণা দেয়, কোনো সড়কে কোনো প্রকার যাত্রীবাহি যানবাহন চলাচল করবে না। এ ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে গতকাল বুধবার সকাল হতে না হতেই শুরু করে বাস ভাঙচুর। চুয়াডাঙ্গা থেকে যশোরের উদ্দেশে রওনা হওয়া ৫টি কোস্টার পর্যায়ক্রমে ভাঙতে থাকে ইজিবাইক মালিক শ্রমিকসহ তাদের লোকজন। ভাঙচুরের স্পট হয়ে দাঁড়ায় চুয়াডাঙ্গা-জীবননগর সড়কের কেদারগঞ্জ ও উজিরপুর। দীর্ঘ প্রায় পোনে এক ঘণ্টা ধরে ভাঙচুরের এক পর্যায়ে বাস শ্রমিকরা বাস ঘুরিয়ে নিয়ে শহীদ হাসান চত্বরে এনে বেরিকেড গড়ে তোলে। সকল রুটের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দূরপাল্লার কোচগুলোও সকাল সাড়ে ৭টা থেকে শহীদ হাসান চত্বরে আটকে পড়ে। সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশের হস্তক্ষেপ শুরু হয়। সহকারী পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান ও সদর থানার অফিসার ইনচার্জ আসাদুজ্জামান মুন্সী সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে শহীদ হাসান চত্বরে হাজির হয়ে বেরিকেড তোলার ব্যবস্থা করেন। ২০ মিনিটের মাথায় অবরোধ তুলে নেয়া হলেও পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ তিন দফা দাবি দিয়ে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু করে। চুয়াডাঙ্গার সকল রুটের বাস মিনিবাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে যাত্রী সাধারণকে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়।

অপরদিকে ইজিবাইক মালিক-শ্রমিক সমিতি তাদের যান পৌরসভার সড়কে বের না করার কারণে সড়কগুলো ফাঁকা হয়ে যায়। ইজিবাইকের কারণে ধীরে ধীরে রিকশার সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় হাতে গোনা কিছু রিকশাচালক যাত্রী বহন করতে গিয়ে হিমশিম খেতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা ভাড়া বাড়িয়ে দেন কয়েক গুন। অপরদিকে প্রধান প্রধান সড়কে যানবাহন বলতে শ্যালোইঞ্জিনচালিত হরেক নামের অবৈধযান চলাচল বেড়ে যায়। তারা সুযোগ বুঝে যাত্রী ভাড়া কয়েক গুন বাড়িয়ে দেয়। সচেতনদেরকেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই অবৈধযানে চলাচল করতে হয়। যাত্রী সাধারণের দুর্ভোগের শেষ ছিলো না। চরম হয়রানি হতে হয় তাদের।

গতকাল সকাল থেকে ইজিবাইক মালিক শ্রমিকদের ধর্মঘট, বাস ভাঙচুরের ঘটনার পর পরিবহন ধর্মঘট শুরু হলে প্রশাসনের তরফে সমঝোতার চেষ্টা চলতে থাকে। বিকেলে ইজিবাইক মালিক শ্রমিক সমিতির নেতৃবৃন্দ একটি মূলদাবিসহ ৭টি দাবি নিয়ে জেলা প্রশাসকের নিকট হাজির হন। জেলা প্রশাসক দাবিগুলো শুনে সমঝোতার লক্ষ্যে বৈঠকের জন্য অপেক্ষা করতে বলেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করলেও প্রশাসন চুয়াডাঙ্গা পরিবহন মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে বৈঠকে উপস্থিত করতে পারেনি। ফলে সমঝোতা হয়নি। রাতে অবশ্য চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন, সকাল থেকে বাস চলাচল করবে। পুলিশ সুপারের দফতরে বাস মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক হয়েছে। সদর থানার ওসি এ তথ্য জানালেও রাতে পরিবহন শ্রমিক বা মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের তেমন কারো সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। কারণ চুয়াডাঙ্গা জেলা বাস-ট্রাক সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি এম জেনারেলসহ অধিকাংশেরই মোবাইলফোন বন্ধ ছিলো। তাছাড়া বিগত দিনের মতো ধর্মঘট প্রত্যাহারের খবর প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বা মাইকিং করেও জানানো হয়নি। সাধারণ শ্রমিকদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলেছেন, বাস ভাঙচুরের ঘটনায় দু দিনে দুটি মামলা করা হয়েছে। মিনিবাস মালিক সমিতির যুগ্মসম্পাদক বদর উদ্দীনের দায়ের করা মামলায় ৫ জনকে এবং অপর মালিক সমিতির নেতা একেএম মঈনুদ্দিন মুক্তার দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে ৬ জনকে। এদেরকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত ধর্মঘট চলছে। তাছাড়া সড়ক থেকে শ্যালোইঞ্জিনচালিত অবৈধযান বন্ধ করতে হবে। পরিবহনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ তিন দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গায় পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।

অপরদিকে ইজিবাইক মালিক শ্রমিক সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়েছে, ইজিবাইক চুয়াডাঙ্গা জেলাব্যাপি চালানোর অনুমতি দিতে হবে। তা না হলে বাসগুলো পৌরসভার মধ্যে যাত্রী নিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। আলমডাঙ্গা সড়কের বাসগুলোকে ঘোড়ামারা ব্রিজের নিকট, মেহেরপুর সড়কের বাসগুলোকে কালাম মিয়ার তেলপাম্পের নিকট, জীবননগর সড়কের বাসগুলো ভীমরুল্লায়, ঝিনাইদহ সড়কের বাসগুলোর যাত্রীদের জাফরপুরে নামাতে হবে। যাত্রী বাইরে নামিয়ে বাসগুলো টার্মিনালে আসবে। আর তা না হলে ইজিবাইক মালিক শ্রমিক আন্দোলন চালিয়ে যাবে। চুয়াডাঙ্গায় কোনো প্রকারের যান যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে পারবে না। চলাচল করতে দেয়া হবে না।

উল্লেখ্য, বেশ কিছুদিন ধরে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার বাইরের সড়কে চলাচল করতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। অবশ্য কিছু পয়েন্টে ২০ টাকা হারে বকশিষ দিলে ইজিবাইক চলার সুযোগ দেয় বাস মালিক সমিতির নিযুক্তরা। এ নিয়ে ইজিবাইক মালিক শ্রমিক সমিতি আন্দোলন চালিয়ে আসছে। এরই এক পর্যায়ে গতপরশু মঙ্গলবার সকালে দৌলাতদিয়াড় বাসস্ট্যান্ডে একটি ইজিবাইক ভাঙচুর করা হয়। এর প্রতিবাদ জানাতে ইজিবাইক মালিক শ্রমিক মেহেরপুর সড়কের বঙ্গজের অদূরে জড়ো হয়। সেখানে বাস ভাঙচুর শুরু করে। দৌলাতদিয়াড় বাসস্ট্যান্ডে থেমে থাকা বেশ কয়েকটি বাস ভাঙচুর করা হলে সড়কে বাস শ্রমিকরা বেরিকেড দেয়। পুলিশি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে ত্রিমুখি সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে সদর থানার ওসিসহ আহত হয় কমপক্ষে ২০ জন। এরপর পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘটের হুমকি দেয়। অপরদিকে ইজিবাইক মালিক শ্রমিক সমিতির ঘোষণা দিয়ে জানায়, তারা ইজিবাইক চালাবে না, কোনো যাত্রীবাহী যানবাহনও চলতে দেবে না। সকল প্রকারের যাত্রীবাহি যানবন্ধ থাকবে। এ ঘোষণার পর গতকাল সকাল থেকে বাস চলাচল শুরু করলে ভাঙচুর করে তারা। চুয়াডাঙ্গা-জীবননগর সড়কের উজিরপুর নামকস্থানে কমপক্ষে ৩টি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। ২টি বাস ভাঙচুর করা হয় কেদারগঞ্জে। বাসগুলো হলো- অনয় পরিবহন, নিউ ফাতেমা, যমুনা ডিলাক্স, নিউ মর্ডান, কেজিএন। ঘটনার পর দূরপাল্লার কোচগুলোও চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। অবশ্য গতরাত ১০টার পর কয়েকটি সংস্থার তিনটি কোচ ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।