চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টি : বজ্রপাতে দর্শনায় দিনমজুরের মৃত্যু জীবননগরে আহত

মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: সামান্য বৃষ্টিতেই চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা নেমেছে ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ফলে স্বস্তি ফিরেছে ঘরে বাইরে। যদিও সর্বোচ্চর খুব কাছাকাছি ছিলো সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। গতকাল চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াযস রেকর্ড করা হয়। জীবননগর ও দর্শনাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় বৃষ্টির সময় পৃথক বজ্রপাতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ৬ জন। যশোরের কেশবপুরে বজ্রপাতে পিতা-পুত্রের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
দর্শনা অফিস অফিস জানিয়েছে, দামুড়হুদার দর্শনা পরানপুর মাঠে ধান লাগাতে গিয়ে ঘটেছে বিপত্তি। বজ্রপাতে ঝলসে সাঈদ নামের এক দিনমজুরের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরো ৫ দিনমজুর। গতকাল শনিবার সকাল থেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টির মাঝে মাঝেই হয় বজ্রপাত। বৃষ্টি মাথায় দর্শনা পরানপুর বেতোগাড়ি মাঠের নাজিম উদ্দিনের জমিতে ধান লাগাতে যায় পরানপুর মাঝপাড়ার আলী আহম্মেদের ছেলে সাঈদ, নয়ন মণ্ডলের ছেলে নাজিম, ইউনুসের ছেলে মিলন, খেদের মালিথার ছেলে তুজাম, হিম চাঁদের ছেলে গোকুল ও আব্দুল বারেকের ছেলে আপেল। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই ধান লাগাচ্ছিলো তারা। সকাল ৯টার দিকে বিকট শব্দে বজ্রপাত পড়ে সাঈদের ওপর। এতে ঝলসে গিয়ে সাঈদ গুরুতর আহত হয়। সাথে থাকা নাজিম, মিলন, তোজাম, গোকুল ও আপেলও আহত হয়। আহতদের মধ্যে মুমূর্ষু অবস্থায় সাঈদকে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। হাসপাতালের চিকিৎসকরা সাঈদকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ২ সন্তানের জনক সাঈদের লাশ নিজ বাড়িতে আনা হলে স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে আকাশ। গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া। বেদনাবিধুর পরিবেশে গতকালই সন্ধ্যায় স্থানীয় গোরস্তানে সাঈদের লাশ দাফন সম্পন্ন করা হয়। এদিকে আহত ৫ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হলেও কেউ কানে শুনতে পারছে না।।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগর এলাকায় অবশেষে বৃষ্টির দেখা মিলেছে। গতকাল শনিবার সকাল হতে জীবননগর উপজেলায় মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটেছে। বজ্রপাতে জীবননগর শহরে এক যুবক আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এছাড়াও বজ্রপাতে বহু বাসাবাড়ির টিভি-ফ্রিজসহ ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য বিনষ্ট হয়েছে। গত কয়েক সপ্তা ধরে এ উপজেলার ওপর দিয়ে তীব্র দাবদাহ বিরাজমান ছিলো। তাপপ্রবাহের কবলে পড়ে মানুষ ও প্রাণিকূল অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। এ অবস্থার মধ্যে গতকাল সকাল হতে এ উপজেলায় মুষলধারে বৃষ্টি নেমে আসে। সেই সাথে ঘটে বজ্রপাতের ঘটনা। বজ্রপাতে জীবননগর শহরের বসুতিপাড়ার সোমা মিয়ার ছেলে রাজন (২৮) আহত হয়েছে। তাদের বাড়ির আঙিনায় অবস্থিত একটি নারিকেল গাছে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটলে রাজন আহত হয়। এছাড়াও বজ্রপাতে বহু বাসাবাড়ির টিভি-ফ্রিজসহ ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও বজ্রপাতে উথলী সাব-স্টেশনের ট্রান্সমিটার বিনষ্ট হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
অপরদিকে কেশবপুরে বজ্রপাতে পিতা আব্দুল হামিদ (৪৫) ও পুত্র আবু হুরায়রা (১৪) মারা গেছে। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় কেশবপুরের গোবিন্দপুর বিলে পাটক্ষেতে কাজ করার সময় এ ঘটনা ঘটে। বজ্রপাতে পিতা আব্দুল হামিদ ও পুত্র আবু হুরায়রা গুরুতর আহত হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বাবলি দে জানান, মৃত অবস্থায় ওই দুজনকে হাসপাতালে আনা হয়।
দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিলো মোংলায়। সর্বনিম্ন ময়মানসিংহে ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। আবহাওয়া অধিদফতর পূর্বাভাসে জানিয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। দক্ষিণ-পশ্চিম মরসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামোটি সক্রিয়। এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র দুর্বল থেকে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। রংপুর বিভাগের দিনের ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং দেশের অন্যত্র প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।