চুয়াডাঙ্গায় বিদ্যুত পরিস্থিতির ক্রমাবনতিতে বারুদের মতো ফুঁসছে গ্রাহক সাধারণ

দিনে-রাতে সমানতালে সবক’টা ফিডারে লাগাতার লোডশেডিং : ভ্যাপসা গরমে পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহির্প্রকাশের শঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় বিদ্যুত সরবরাহ পরিস্থিতির দিন দিন উন্নতির বদলে ক্রমাবনতি গ্রাহক সাধারণের মাঝে ক্ষোভের আগুন বাড়িয়ে চলেছে। গত দু দিন ধরে চুয়াডাঙ্গায় ভ্যাপসা গরমে ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিঙে অতিষ্ঠ গ্রাহক সাধারণ ক্ষোভে বারুদের মতো ফুঁসেছে। মেহেরপুরের চিত্রও অনেকটা অভিন্ন। কেন? ওজোপাডিকো চুয়াডাঙ্গার নির্বাহী প্রকৌশলী সবুক্ত গীণ বলেছেন, চাহিদার অর্ধেকও বিদ্যুত পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে লোডশেডিঙের বিকল্প নেই। তবে দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি করার লক্ষে চেষ্টা চলছে।

চুয়াডাঙ্গা বিদ্যুত বিতরণ কেন্দ্রর মাধ্যমে মেহেরপুর, আলমডাঙ্গা ও চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের ৫টি ফিডারের আওতাভুক্ত গ্রাহক সাধারণের সংযোগে বিদ্যুত সরবরাহ করা হয়। চাহিদা ২২ মেগাওয়াট। বেশ কিছুদিন ধরে জাতীয় গ্রিড থেকে কখনো ৯ কখনো ১২ মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহ করা হচ্ছে। উৎপাদনে ঘাটতির পাশাপাশি এলাকায় বিদ্যুত সঞ্চালন ক্ষমতা বৃদ্ধির কাজ চলার কারণে চুয়াডাঙ্গায় বিদ্যুত বরাদ্দের পরিমাণ কমে গেছে। এতে ভয়াবহ আকারে বাড়ছে ক্ষোভ। শুধু তাই নয়, কিছু এলাকার গ্রাহকদের বিদ্যুত সংযোগ দূরে হওয়ার দায়ভার গ্রাহকদের ওপর চাপিয়ে বিশেষ হারে বিদ্যুতের দাম বিদ্যুতের মূল বিলের সাথে আদায় করা হচ্ছে। এতোও ক্ষোভের মাত্রা বেড়েছে। আর চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের প্রাণ কেন্দ্র বড়বাজার এলাকায় বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে পৌর সরবরাহকৃত পানিরও সংকট দেখা দিয়েছে। এর  ক্ষোভও উগরে দিয়ে অনেকে বলেছেন, বড়বাজার এলাকায় দুটি ভিডারভুক্ত গ্রাহক রয়েছেন। বড়বাজার ফিডার আর হাজরাহাটি ফিডার। পৌর সরবরাহকৃত পানির পাম্পটি হাজরাহাটি ফিডারভুক্ত। ফলে পানি সরবরাহের সময় ওই ফিডারে বিদ্যুত থাকলে পানির চাপ থাকে। আর না থাকলে পানি পাওয়ায় দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায়। পানি সবরাহ থাকলেও বড়বাজার ফিডারে বিদ্যুত না থাকলে এ ফিডারের আওতাভুক্ত গ্রাহকদের মোটর চালিয়ে পানি ওপরের ট্যাঙ্কিতে নিতে না পেরে ছাড়েন দীর্ঘশ্বাস। যদিও পানির পাইপের সাথে মোটর সংযুক্ত করা পৌর বিধি মোতাবেক অন্যায়। কেননা, সরবরাহকৃত পানি রিজার্ভ ট্যাঙ্কে জমবে। সেখান থেকে মোটর দিয়ে পানি ওপরে তোলার কথা। এ নিয়মের বদলে হাজরাহাটি ও বড়বাজার ফিডার দুটিতে পানি সরবরাহের সময় বিদ্যুত সরবরাহ চালু রাখার আরজি এলাকাবাসীর। বৃষ্টির পর দিনে তীব্র রোদে মাটি থেকে উঠছে জলীয়বাষ্প। আর তাতেই বাতাসের ঘনত্ব বেড়ে যাচ্ছে। ফলে প্রাণিকূল ভ্যাপসা গরমে হাপিত্যেশ করতে শুরু করছে। আর এর মাঝে যদি না থাকে বিদ্যুত তাহলে মেজাজের পারদ কোথায় গিয়ে চড়ছে? সেই পারদের মাত্রা মশার ভনভনানিতে বাড়ছে বহুগুণ।

চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরে বিদ্যুত সবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হবে কবে? এ প্রশ্নের জবাব জানতে চাওয়া হলে বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের ঝিনাইদহ শাখা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ জানান, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মাগুরা, নড়াইল ও যশোর ওই ৭ জেলার কাজ প্রকল্পের ঝিনাইদহ শাখা কার্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত। সব জায়গায় প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও কাজ ব্যাহত হচ্ছে। প্রকল্পের কাজ চলাকালীন সময়ে সেই এলাকায় বিদ্যুত বন্ধ রাখা হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।  তিনি আরও জানান, চুয়াডাঙ্গায় এখনও ২০ ভাগই কাজ হয়নি। কাজ না শেষ হওয়া পর্যন্ত সমস্যার সমাধান হবে না। তবে কবে নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে তা বলতে পারেননি তিনি। তিনি যে পূর্বাভাস দিয়েছেন, তাতে ডিসেম্বরের শীত। ততোদিন বিদ্যুত গ্রাহক সাধারণের ক্ষোভ সামাল দেয়াই দূরহ। অবশ্য ওজোপাডিকো লিমিটেডের চুয়াডাঙ্গা নির্বাহী প্রকৌশলী সকলের সহযোগিতা চেয়ে বলেছেন, অল্প দিনের মধ্যেই আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার সর্বাত্মক চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দয়া করে আমাদের যেন কেউ ভুল না বোঝে।