চুয়াডাঙ্গায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের গ্রামের বাড়ি আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়নের প্রত্যেকটি কেন্দ্রেই ভোটারদের অনুপস্থিতিতে পার হলো ১০ম সংসদ নির্বাচন

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী আব্দুর রকিব উদ্দিন আহমেদের গ্রামের বাড়ি আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়নের প্রত্যেকটি ভোটকেন্দ্রে ভোটারের অনুপস্থিতির মধ্যদিয়ে পার হলো ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ জেলার ভোটাররা প্রহসনের নির্বাচনকে পাত্তা না দিয়ে ভোটকেন্দ্রে তাদের ভোট দিতে যাননি। চুয়াডাঙ্গার দুটি সংসদীয় আসনে গতকাল রোববার সকাল ৮টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অধিকাংশ কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে একই চিত্র। কোথাও উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে কোনো ভোটার তাদের ভোট দিতে আসেনি। প্রায় সবগুলো কেন্দ্রই ছিলো ভোটার শূন্য। প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসারসহ ভোটগ্রহণের সাথে সংশ্লিষ্টরা অলস সময় পার করেছেন। তবে কেন্দ্রের বাইরে ও ভেতরে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ভিড় ছিলো লক্ষণীয়। তারা জালভোট দিয়ে ভোটের হার বাড়ানোর চেষ্টায় ছিলো সক্রিয়। এ কাজে অবশ্য ইন্ধন জুগিয়েছে প্রিসাইডিং অফিসাররা। ভোটের হালহকিকত বুঝে বেশির ভাগ প্রিসাইডিং অফিসার নির্বাচনের বুথ তৈরি করতে দেয়া দু হাজার টাকা ব্যয় না করে, তা মেরে দিয়ে যেনতেনভাবে বিদ্যালয়ের ব্যবহৃত বেঞ্চ দিয়ে বুথ তৈরি করেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ সরোওয়াদ্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের, শঙ্করচন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খেজুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুশোডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কাথুলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় এ বিদ্যালয়গুলোতে ভোটারের উপস্থিতি অত্যন্ত কম। চুয়াডাঙ্গা শহরের পলাশপাড়ার রিকশাচালক কাশেম আলী এ প্রতিবেদককে বলেন, ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে আসা ভোটার সাজার জন্য তাকে দিন হাজিরা ৫০০ টাকা দিতে চেয়ে ছিলো এক আওয়ামী লীগ নেতা। তাতে সে রাজি হয়নি। তিনি ওই নেতাকে বলে দিয়েছিলেন, ভাই আমি ধানের শীষে ভোট দিই; এবার ধান মার্কারা ভোট করছে না শুনেছি তাই ভোট দিতে যাবো না। টাকা নিয়ে ভুয়া ভোটার সাজার ইচ্ছা নেই। চুয়াডাঙ্গা শহরের কোর্টপাড়ার বাসিন্দা এক ভোটার নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, এবার আমাদের এলাকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, জাভেদ মোহাম্মদ রফিজ খান নামের একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে ভোটারদের কাছে ভোট চাওয়ার দায়িত্ব দিয়েছে। একে তো সারাদেশে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হচ্ছে। তার ওপর এ ধরনের ছেলেকে ভোটারদের কাছে ভোট চাইতে পাঠানোর কারণে কেউ ভোট দিতে যায়নি। টাকার বিনিময়ে ভোটারদের রিকশায় করে নিজ নিজ ভোটকেন্দ্রে পৌছে দেয়ার দায়িত্বে ছিলো সদর উপজেলার পদ্মবিলা ইউনিয়নের পিরোজখালী গ্রামের রিকশাচালক জহুর। সে দুজন মহিলা ভোটারকে তার রিকশায় তুলে বিপাকে পড়ে এ প্রতিবেদকের দ্বারস্ত হয়। তার রিকশায় বসে থাকা দুজন মহিলা ভোটার তাকে বলছে তারা ধানের শীষে ভোট দেবে। কিন্তু তাদের নিয়ে যেতে চাচ্ছিলো না রিকশাচালক জহুর। তার দাবি, সে নৌকা মার্কায় যারা ভোট দেবে তাদের ছাড়া অন্য কাউকে তার রিকশায় বহন করবে না।

চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে রোববার বেলা ৩টার দিকে দর্শনা সরকারি কলেজ, হিজলগাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দামুড়হুদা হাইস্কুল, কার্পাসডাঙ্গা হাইস্কুল ও কুড়ুলগাছি হাইস্কুলসহ বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ঘুরে দেখা যায়, সেখানে ভোটাররা ভোট দিতে আসছেন না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অপ্রতিরোধ্যভাবে জালভোট দিতে ব্যস্ত রয়েছে। সেখানে কথা হয় দর্শনা প্রেসক্লাবের সভাপতি দৈনিক ভোরের কাগজের দামুড়হুদা উপজেলা প্রতিনিধি দর্শনা পৌর এলাকার পরানপুরের বাসিন্দা আওয়াল হোসেনের সাথে। তিনি জানান, ভোটাররা ভোট দিতে না আসায় ভোটের কাজে সংশ্লিষ্টরা বসে বসে সময় পার করেন। আলমডাঙ্গা উপজেলার যাদবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ (দীর্ঘদিন কারাগারে থাকা  সাধারণ ক্ষমায় মাফ পাওয়া আসামি) বেলা দেড়টার দিকে প্রিসাইডিং অফিসারের কাছ থেকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল মেরে তা ব্যালট বাক্সে ঢোকায়। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে এ অপকর্মে সহযোগিতা করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। জীবননগর উপজেলা শহরের দৌলতগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জীবননগর পাইলট বালিকা বিদ্যালয়, জীবননগর মহিলা কলেজ, নারায়ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোপালনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে ভোটারশূন্য পাওয়া যায়। সেখানে জালভোটার দিয়ে ভোটের হার বাড়ায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

চুয়াডাঙ্গা জেলা নির্বাচন অফিসের কন্ট্রোলরুমের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ভোটের দিন ২টা পর্যন্ত ভোট প্রদানের হার চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ এবং চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ ছিলো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর টহল ভোটের আগের দু দিনের চেয়ে গতকাল রোববার কম ছিলো। ভোট যাই হোক নিদারুণ কষ্টে ছিলো ভোট সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। চুয়াডাঙ্গায় প্রচণ্ড শীত আর অনিশ্চিত শঙ্কায় ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোনো প্রকার বড় ধরনের ঘটনা ছাড়াই শেষ হয়েছে। এ নিয়ে কাউকে কোনো ঝামেলা পোয়াতে হয়নি।