চুয়াডাঙ্গায় তাপমাপা যন্ত্রের পারদ নিচেরটা উঠেছে উঁচুতে আর উপরেরটা নেমেছে নিচে

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় তাপমাপা যন্ত্রের নিচের পারদ কিছুটা উঠলেও নেমেছে ওপরে থাকা পার অর্থাৎ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। ফলে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। আকাশে মেঘে গ্রামবাংলায় বড়ি দেয়া গৃহিণীদের কপালের দুশ্চিন্তার ভাঁজ হয়েছে গভীর। চলমান শৈত্যপ্রবাহে চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় শিশু ও বয়স্কদের মাঝে শাসকষ্টজনিত রোগের প্রকপ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ৭৯ শিশু ভর্তি করা হয়েছে।

দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গতকাল রেকর্ড করা হয় শ্রীমঙ্গলে ৮ দশমিক ৫, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো কক্সবাজারে ২৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ এবং সর্বোচ্চ ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও চুয়াডাঙ্গায় তীব্র শীত অনুভূত হয়েছে। দুপুর পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গায় সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। কিছুক্ষণের জন্য সূর্য উষ্ণতা ছড়ালেও দরিদ্র দুস্থ শীতার্ত মানুষের দুর্ভোগের শেষ ছিলো না। শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, তাপমাত্রার কারণে রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৭৯ শিশু। গতরাত ৯টায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। ৭৯ শিশুর মধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ৭১ এবং বাকি ৮ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত বলে জানানো হয়েছে। অথচ শিশুওয়ার্ডে মাত্র একজন স্টাফ নার্সকে সামলাতে হচ্ছে। তিনি হাঁপিয়ে উঠেছেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন বলেন, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ১৫ আসনের বিপরীতে ভর্তি হয়েছে ৭৯ শিশু। এসব শিশুর বেশির ভাগই রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন জানান, চুয়াডাঙ্গায় গতকাল সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সমুদ্রে লঘুচাপের প্রভাবে হালকা মেঘ আছে। মেঘ দু’একদিনের মধ্যে কেটে যাবে এবং ঠাণ্ডা বাড়তে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি। অপরদিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর গতকাল (রোববার) সন্ধ্যা ৬টা থেকে আজ (সোমবার) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানিয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি পশ্চিম দিকে সরে গিয়ে শ্রীলঙ্কার উপকূলীয় এলাকায় অবস্থান করছে। উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন বাংলাদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এছাড়া যশোর, কুষ্টিয়া ও কুমিল্লা অঞ্চলসহ রাজশাহী, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় হালকা অথবা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। রাতের প্রথমভাগ থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। সৈয়দপুর, শ্রীমঙ্গল ও রাঙ্গামাটি অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।

আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ঘরে ঘরে বড়ি দেয়া গৃহিণীদের দুশ্চিন্তা খুব একটা স্থায়ী হচ্ছে না। আজ-কালের মধ্যেই কাটছে মেঘ। বাড়ছে আরো শীত। শীতে শিশুরা নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এ রোগ থেকে শিশুদের রক্ষার উপায় কী? ডা. মো. মাহবুবুর রহমান মিলন বলেছেন, শিশুকে গরম পোশাক, মোজা, টুপি পরিয়ে রাখতে হবে। ঘরের বাইরে অকারণে বের না করাই ভালো। ৬ মাসের শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। ইপিআই’র টিকাগুলো সময়মতো দিতে হবে। আর ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পেতে পরিষ্কার পরিছন্নতার বিকল্প নেই। শিশু পরিচর্যাকারীর হাত বাথরুম থেকে ফেরার সময় ভালো করে সাবান দিয়ে ধুতে হবে। শিশু পায়খানা করলে দ্রুত ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। শিশুর মল পরিষ্কারের পর পরই পরিচর্যাকারীর হাত ভালো করে সাবান দিয়ে ধুতে হবে। বাসি খাবার খাওয়ানো যাবে না। খাবারের পাত্র যেমন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, তেমনই মায়ের দুধ দেয়ার সময়ই পরিষ্কার পরিছন্নতার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ৬ মাসের মধ্যে রোটা ভাইরাস প্রতিরোধক ২টি টিকা দিতে হবে।