চুয়াডাঙ্গায় ঠাণ্ডা-জ্বরের প্রাদুর্ভাবে শিশুর মৃত্যু : চিকিৎসক ও সেবিকাদের নাভিশ্বাস

 

খাইরজ্জামান সেতু: হঠাৎ করেই চুয়াডাঙ্গাতে ঠাণ্ডা-জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। গত ৫ দিনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপতালে ভর্তি হয়েছে ৪২ জন। দুপরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ৮ মাসের এক শিশু মারা গেছে।

প্রতিদিনই ৫০/৬০ জন করে ঠাণ্ডা-জ্বরে আক্রন্ত আর চিকিৎসা নিচ্ছে। জরুরি বিভগ থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক। গতকাল রোববার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ঠাণ্ডা-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ৮ জন। ঠাণ্ড-জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের অধিকাংশই পুরুষ। এদিকে রোগীর চাপ সামাল দিতে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও সেবিকাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। সেবিকারা বলেন, শুধু তো ঠাণ্ড-জ্বর না সাথে আছে অন্য রোগীও। যাদের অ্যাজমা ও হার্টে সমস্যা আছে, তারাও অসুস্থ হয়ে ভর্তি হচ্ছেন হাসপতালে। আর রাত যতো বাড়ে ততো রোগীর চাপ বাড়তেই থাকে। বেড তো দূরের কথা ফ্লোরেও রোগীর জায়গা হচ্ছে না। এতো রোগীর মধ্যেও লোকবল সংকট। সব মিলে আমরা হিমশিম খাচ্ছি রোগীর চাপ সামাল দিতে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. আবুল হোসেন জানান, রোববার সকালে যখন রাউন্ড দিয়েছি তখন মেডিসিনের দুই ওয়ার্ড মিলে রোগী ছিলো ১৩০ জন। ভর্তিরত রোগীদের অধিকংশই ঠাণ্ড-জ্বরে আক্রান্ত।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ডা. আবুল হোসেনকে রাউন্ড দিতে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপতালের মেডিসিন বিভাগের অপর কনসালটেন্ট ডা. পরিতোষ কুমার ঘোষ জানান, আমরা গত কয়েক দিন ধরে অন্য রোগীর পাশাপাশি ঠাণ্ড-জ্বরে আক্রান্ত রোগী বেশি পাচ্ছি। এটা সিজেনাল ফ্লু অর্থ্যাৎ ভাইরাস জ্বর। এই ঠাণ্ড-জ্বর নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। সাধারণত ৫/৭ দিন এই ঠাণ্ড-জ্বর স্থায়ী থাকছে। এটা শুধু প্যারাসিটামল গ্রুপের ওষুধ খেলেই ভালো হয়ে যাচ্ছে। আর ঠাণ্ড-জ্বর হচ্ছে ঠাণ্ড-গরম একসাথে অনুভূতি হওয়ার জন্য। পাশাপাশি আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে। যখন একাধারে ঠাণ্ড বা গরম অনুভূত হয় তখন কিন্তু এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায় না। ঠাণ্ড-গরম একসাথে অনুভূত হলে এই ঠাণ্ড-জ্বরে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয়। এদিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার শিশু আহাদ মারা যায়। তবে সামান্য জ্বরে শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। চিকিৎসক বলছেন অতিরিক্ত জ্বরের কারণে এমনটি হয়েছে।

জানা গেছে, জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলাধীন বড় গাংনী গ্রামের সাইদুর রহমানের ৮ মাস বয়সী শিশুপুত্র আহাদ আলী শনিবারে জ্বরে আক্রান্ত হয়। তাকে রোববার সকালে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খিঁচুনির সাথে তার দু’ বার বমি হয়। বেলা ২টার দিকে শিশু আহাদ মারা যায়। সদর হাসপাতাল সড়কের আবদুল্লাহ ফার্মেসির মালিক জাকির মুনসাদ বলেন, এটা বর্তমানে অনেকটা বিস্ময়ের। ইদানীং সাধারণত জ্বরে মানুষ মারা যায় না। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মশিউর রহমান বলেছেন, অতিরিক্ত জ্বরের কারণেই শিশু আহাদের মৃত্যু হয়েছে।