চুয়াডাঙ্গায় জবাই করে যুবক খুন : তিনজন আটক

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা শহরের আরামপাড়ায় দুর্বৃত্তরা মিলন হোসেন (২৬) নামে এক যুবককে জবাই করে ও খুঁচিয়ে খুন করেছে। সদর থানা পুলিশ রোববার বেলা ১০টায় ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো ছুরি উদ্ধার করেছে। নিহত মিলন চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজপাড়ার শরীফ মণ্ডলের ছেলে।  সে একটি ওয়েল্ডিং কারখানায় কাজ করতো।

যেভাবে লাশের খবর পাওয়া গেলো: চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি (তদন্ত) ফারুক হোসেন জানান, থানার টিএন্ডটি ফোনে সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি আরামপাড়ায় আমবাগানে একটি লাশ পড়ে আছে বলে খবর দেন। পুলিশ খবর পেয়ে এসআই কাইয়ুম হোসেনকে লাশ উদ্ধারে পাঠানো হয়। পুলিশ এ সময় লাশের পাশে হত্যার কাজে ধারালো একটি ছুরি উদ্ধার করে। খবর পেয়ে এ সময় নিহত মিলনের মা আনোয়ারা বেগমসহ এলাকাবাসী ছুটে আসেন। লাশ উদ্ধারের কিছু সময় পর ঘটনার নেপথ্য উন্মোচন এবং সন্দেহভাজনদের ধরতে অভিযানে নামে পুলিশ। এ সময় শহরের দুটি স্থান থেকে ৩ জন কিশোরকে আটক করা হয়। গত মধ্যরাত পর্যন্ত অবশ্য কাউকে আটক করা হয়নি বলে সদর থানা থেকে জানানো হয়েছে।

একাধিক সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী মিলন খুনের সাথে জড়িত সন্দেহে আটককৃতরা হলো- চুয়াডাঙ্গা মাঝেরপাড়ার আব্দুস সালামের ছেলে বেকারিশ্রমিক আশাদুল (১৭), আরামপাড়ার মায়ার ছেলে সুজন (১৫) এবং একই পাড়ার হানিফের ছেলে রাজু (১৪)।

2nd2 copy

হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে পুলিশের বক্তব্য: ওয়েল্ডিং শ্রমিক মিলন হোসেন খুনের নেপথ্য সম্পর্কে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি গাজী মো. ইব্রাহিম জানিয়েছেন, এ ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত। খুনের ধরণ ও আশপাশের পরিস্থিতি দেখে মনে হয়েছে বন্ধুদের হাতে খুন হতে পারে মিলন। ওসি (তদন্ত) ফারুক হোসেন জানান, লাশের পাশে একটি ছুরি পাওয়া গেলেও হত্যাকাণ্ডে একাধিক ধারালো অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে। কারণ মিলনের মেরুদণ্ড বরাবর যে গভীর ক্ষত পাওয়া গেছে তা সম্ভবত অন্য ধারালো অস্ত্রের। পূর্ব বিরোধের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে,  এ ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। আর তদন্তও শুরু হয়েছে এ পথ ধরেই। তাছাড়া নিহত মিলনের আগের কর্মকাণ্ড, চলাফেরা  সম্পর্কেও খোঁজখবর নেয়া হয়েছে। যেখানে খুনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে সেখানে নিয়মিত আড্ডা দিতো মিলন, বসাতো নেশার আসর। এ নেশার আড্ডাকেই অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা।

নিহতের পরিবার যা বলে: নিহতের মা আনোয়ারা বেগম জানান, শনিবার বিকেল ৩টায় বাড়ি থেকে কারখানার উদ্দেশে বের হয় মিলন। ওইদিন রাতে কারখানা থেকে কাজ শেষ করে আর বাড়ি ফিরে আসেনি। গতকাল রোববার সকালে খবর পেয়ে ছেলের রক্তাক্ত লাশ দেখেন তিনি। সদর উপজেলা ডিহকৃষ্ণপুর গ্রামের সিরাজুলে মেয়ে সোনিয়ার সাথে দেড় বছর আগে বিয়ে হয় মিলনের। তবে গতকাল বাড়িতে গিয়ে প্রতিবেশীদের কাছে জানা গেছে, স্বামীর ওপর রাগ করে সপ্তাখানেক আগে বাপের বাড়ি চলে গেছে সোনিয়া।

মিলন মায়ের দোয়া নামক স্টিল কিং দোকানে কাজ করতো। ওই দোকানের স্বত্বাধিকারী মনিরুজ্জামান মানিক জানিয়েছেন, অন্য দিনের মতো শনিবার কাজ শেষে সন্ধ্যায় মিলন চলে যায়। তবে এর বেশি তিনি জানাতে পারেননি।

পুলিশের আটক নাটক নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া: মিলনের লাশ উদ্ধারের সময় চুয়াডাঙ্গা শহরের একটি বেকারি কারখানাশ্রমিক মাঝেরপাড়ার সালামের ছেলে কিশোর আশাদুল কৌতূহল বশত ঘটনাস্থলে যায়। লাশ দেখে বলে ওঠে ‘ওমা! এ যে আমার বন্ধু’ আর সাথেসাথেই শাদা পোশাকে থাকা পুলিশ সদস্যরা তাকে তুলে নিয়ে যায়। এমনটাই বলেছেন সেখানে উপস্থিত থাকা লোকজন। অথচ আশাদুলের কর্মস্থলে গিয়ে তার সহকর্মী ও বেকারি মালিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগের রাতে সে ডিউটিতে ছিলো। এমনকি লাশ দেখতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সে তার কারখানায় কাজ করছিলো। শুধু নিহতের বন্ধু পরিচয় দেয়াতে তাকে আটকের ঘটনায় জনমনে তীব্র ক্ষোভ দেখা গেছে। অনেককেই বলতে শোনা গেছে এ ধরণের আটকের ঘটনা হয়তো প্রকৃত খুনিদের আড়াল করে দিতে পারে।

প্রায় একই ভাগ্য বরণ করতে হয়েছে আরামপাড়ার মায়ার ছেলে শিশু সুজনের। নিহত মিলনের লাশ যেখানে পড়েছিলো তার পাশেই বাড়ি সুজনের। ভোরে বাড়ির পাশে লাশ দেখতে পেয়ে সে দ্রুত প্রতিবেশীদের খবর দেয়। এতে সকালে কেউ টের পেলো না অথচ সুজন পেলো কীভাবে? এর ওপর ভিত্তি করেই তাকেও আটক হতে হয়েছে, এ অভিযোগ প্রতিবেশীদের। আর লাইব্রেরি কর্মচারী পোস্টঅফিসপাড়ার দোকান মালিকদের পরিচিত মুখ শিশু রাজুর কপালে জুটেছে একদম অন্যরকম পুরস্কার। মিলনের মৃত্যুর খবর নিহতের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েই যতো বিপত্তি। ঠাঁই হয়েছে হাজতখানায়। অবশ্য বয়স বিবেচনা করে হয়তো তাকে গারদে না ঢুকিয়ে সদর থানার ডিউটি অফিসারের রুমে চাদর মুড়ি দিয়ে রাত কাটাতে দিতে সদয় হয়েছেন থানার কর্তা। এ চিত্র দেখা গেছে গতরাতে। অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, মসজিদপাড়ার কামরুল (১৭) নামে এক কিশোরকেও নাকি আটক করেছে পুলিশ।

অবশ্য এদের আটকের ব্যাপারে সকাল থেকেই সদর থানার ওসি গাজী মো. ইব্রাহিমসহ অন্য পুলিশ কর্মকর্তারা সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন। তারা বরাবরই আটকের বিষয় অস্বীকার করে এসেছেন। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্র ওই ৩ শিশুর আটকের খবর নিশ্চিত করেছে। মিলন খুনের বিষয়ে শহরের সচেতনমহল বলেছেন, চুয়াডাঙ্গা শহরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি কোনোভাবেই কাম্য নয়। খুনের নেপথ্য উন্মোচনে পুলিশ যেকোনো পদক্ষেপ নিতে পারে। তবে সংশ্লিস্টদের অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত যাকে তাকে আটক করে ঘটনা যেন ভিন্নখাতে চলে না যায়। পার না পেয়ে যায় প্রকৃত খুনি অথবা খুনিরা। মিলন খুনের ঘটনায় আটক শিশুদের ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা চলছে বলেও শোনা গেছে।

সর্বশেষ অবস্থা: ঘটনাস্থল থেকে মিলনের মৃতদেহ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে পাঠায় পুলিশ। সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে দাফন সম্পন্ন হয়। মধ্যরাতে মিলন খুনের সাথে জড়িতদের ধরতে সদর থানার ওসির নেতৃত্বে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নেমেছে।