চুয়াডাঙ্গায় কৃষকলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে কথা রাখলেন না কেন্দ্রীয় নেতারা : কমিটি ঘোষণা ছাড়াই মঞ্চ ছাড়লেন তারা

 

স্টাফ রিপোর্টার: ১৮ বছর পর চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষক লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে কাউন্সিল অধিবেশনে দুই পক্ষের উত্তেজনার ফলে কেন্দ্রীয় নেতারা আধাঘণ্টা পর কমিটি ঘোষণা দেয়ার কথা বলে মঞ্চ ছাড়েন। পরে আর তারা ফেরেননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক তছিরুল আলম মালিক বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা পরে হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপির বাসভবনে দেখা করে ঢাকার পথে রওনা হয়েছেন। যেহেতু কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আসেননি, তাই তার সাথে পরামর্শ করে কমিটি গঠন করা হবে বলে নেতারা বলে গেছেন।

গতকাল রোববার দুপুর ১২টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরের মুক্তমঞ্চে জেলা কৃষক লীগের বিদায়ী কমিটির সভাপতি আজিজুল হকের সভাপতিত্বে সম্মেলন শুরু হয়। উদ্বোধন করেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহা. মোতাহার হোসেন মোল্লা। এসময় তিনি বলেন, বিএনপি জামায়াত ক্ষমতায় এলে কৃষকদের ওপর নির্যাতন চালায়। তাদের হত্যা করে। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে কৃষিতে বিপ্লব ঘটে। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়। তাই আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি। এর আগে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যদিয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন নেতৃবৃন্দ।

স্লোগান আর উত্তেজনা: কৃষক লীগ ছাড়াও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা ও যুব মহিলা লীগের নেতা-কর্মীরা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে জড়ো হন। তাদের কেউ হুইপ ছেলুন জোয়াদ্দারের, কেউ আলী আজগার টগরের অনুসারী। সকাল থেকে সম্মেলন শেষ হওয়া পর্যন্ত দফায় দফায় তারা দুই নেতার পক্ষে মুহুর্মুহু স্লোগান দেয়।

কথা রাখলেন না কেন্দ্রীয় নেতারা: বেলা আড়াইটায় মোহা. মোতাহার হোসেন মোল্লার সভাপতিত্বে কাউন্সিল অধিবেশনের শুরুতেই জেলা কৃষক লীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর যুগ্ম সম্পাদক সমীর চন্দ কাউন্সিলরদের কাছ থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদের জন্য নাম আহ্বান করেন। হুইপ ছেলুন জোয়ার্দ্দার অনুসারীদের পক্ষে বিদায়ী সভাপতি আজিজুল হককে সভাপতি ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবদুর রশিদকে সাধারণ সম্পাদক করার নাম আসে। আলী আজগার টগরের অনুসারীরা সদর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দারকে সভাপতি ও জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান কবীরকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নাম প্রস্তাব করেন।

নাম প্রস্তাবের সময় উভয় পক্ষ একে অন্যকে কটূক্তি করলে উত্তেজনা দেখা দেয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নেতারা আধঘণ্টা পর কমিটি ঘোষণা দেয়ার কথা বলে মঞ্চ ছাড়েন। তারা সার্কিট হাউসে চলে যান। কিন্তু বিকেল ৪টা পেরোলেও ফেরেননি। ফলে একে একে সবাই সম্মেলনস্থান ছেড়ে চলে যান।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে হুইপ ছেলুন জোয়ার্দ্দার এমপি ক্ষোভের সাথে বলেন, সত্যি কথা হচ্ছে চুয়াডাঙ্গায় কৃষক লীগ নেই। নামে অনেকেই নেতা থাকলেও রাজনীতির মাঠে দেখা মেলে না। কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা শুধু সম্মেলন আর প্রস্তুতিসভার সময় মফস্বলে আসেন। অথচ তোফায়েল আহমেদ ও বঙ্গবন্ধুর চার খলিফা দিনের পর দিন আমার বাড়ির বৈঠকখানায় কাটিয়েছেন। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের মফস্বলমুখী হতে হবে।’ দলীয় প্রতিপক্ষের প্রতি ইঙ্গিত করে হুইপ বলেন, যারা চুয়াডাঙ্গায় বিভিন্ন নির্বাচনে নেত্রীর প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়েছেন, তারাই মাইকে বলেছেন, ‘নেত্রী এগিয়ে চলো।’ এখানেও দলের ভেতরে ‘কাউয়া’ ঢুকেছে। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. খন্দকার শামসুল হক রেজা। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর, সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ, কৃষকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি শরীফ আশরাফ আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ সমীর চন্দ্র, সাংগঠনিক সম্পাদক আতিকুল হক আতিক, দফতর সম্পাদক অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম পানু, কৃষিপণ্য ও ফসল বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ আশরাফুল ইসলাম স্বপন ও কার্য নির্বাহী সদস্য মাহবুবুল আলম শান্তি। কৃষকলীগ চুয়াডাঙ্গা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক তছিরুল আলম মালিক ডিউকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস, যুগ্ম সম্পাদক চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মনজু, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক চিৎলা ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান, সদস্য আসাদুজ্জামান কবীর, মাহবুল ইসলাম সেলিম, অ্যাড. তছলিম উদ্দিন ফিরোজ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শরীফ হোসেন দুদু, সাধারণ সম্পাদক মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিক, সহসভাপতি রুবাইত বিন আজাদ সুস্থির, সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জেলা মহিলা লীগের সভাপতি কোহিনুর বেগম, জেলা পরিষদ সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য জেলা মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুন্নাহার কাকলীসহ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া আওয়ামী কৃষকলীগ দেশের প্রতিটি সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। বর্তমানে দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। তাই দেশের এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করতে হবে। তবে পদ নিয়ে ঘরে বসে থাকলে চলবে না। নিজের অবস্থান থেকে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। পরবর্তীতে কমিটির নাম ঘোষণা করা হবে বলে জানান কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।’