চুয়াডাঙ্গার নেহালপুরের ত্রাস আরজুল্লাহর পতনে এলাকায় বইছে স্বস্তির বাতাস

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদরের নেহালপুরের ত্রাস আরজুল্লাহর লাশ ময়নাতদন্ত শেষে নিজ গ্রামে দাফন সম্পন্ন করে পরিবারের লোকজন। এদিকে আরজুল্লাহর মৃত্যু সংবাদে এলাকার মানুষের চোখে মুখে লক্ষ্য করা গেছে চাপা আনন্দ। মুখ মুখে অনেকেই আরজুল্লাহর অজানা অধ্যায়ের বর্ণনা দিয়েছেন।

এলাকা ঘুরে জানা গেছে, আলমডাঙ্গা মুন্সিগঞ্জের গড়পড়ি গ্রাম থেকে দেশ স্বাধীনের পরপরই আলিমুদ্দিন শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া গ্রামে খালুর বাড়িতে এসে ওঠে। সেখান থেকে নেহালপুর পূর্বপাড়ায় বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের সুবাদেই নেহালপুর গ্রামে স্থায়ী বসবাস গড়ে তোলেন আলিমুদ্দিন। সেখানেই জন্ম হয় ছেলে আব্দুল্লাহ ওরফে আরজুল্লাহর। বয়স হলে পার্শ্ববর্তী কুন্দিপুর গ্রামে বিয়ে করে আরজুল্লাহ। সেই সাথে ডিঙ্গেদহ বাজারে পলাশের আত্মীয় সোহাগের ফার্নিচারের দোকানে কাজ নেই। দাদা তপনের হার ধরে বিভিন্ন কিলিংমিশনে অংশ নিয়ে নিজেকে গড়ে তোলে সে। দাদা তপনের মৃত্যুর পর পলাশের ছত্রছায়ায় থেকে কসাইয়ের দায়িত্ব পায় সে। প্রথম দায়িত্বটা পালন করে ফুলবাড়ি গ্রামে অজ্ঞাত যুবক ইমন হত্যাকাণ্ডের মধ্যদিয়ে। এরপর হানুরবাড়াদি গ্রামে থ্রি মার্ডার, গ্রামের ছেলে মাহাবুল মার্ডার, জীবননগর পিয়ারতলায় জবাই, মমিনপুর সরিষাডাঙ্গায় ডাবল মার্ডার, বড়সলুয়া গ্রামের আদম মেম্বার হত্যা, ছয়ঘরিয়া গ্রামের জামাল হত্যা, বোয়ালিয়া গ্রামের মোজাম হত্যা, সর্বশেষ সিরাজ মেম্বার হত্যাকাণ্ডের সাথে আরজুল্লাহ জড়িত ছিলো বলে এলাকাসূত্রে জানা যায়। সর্বশেষ নেপথ্যে থেকে মাখালডাঙ্গা, নেহালপুর চৌধুরীপাড়া এবং ছয়ঘরিয়া গ্রামের  ২৫-৩০ জনের মতো লোকবল নিয়ে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও নিজ এলাকায় নিরব চাঁদাবাজি করলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। আরজুল্লাহ পলাশ বাহিনীর সদস্য হিসেবে এলাকায় নেতৃত্ব দিতো। পলাশের মৃত্যুর পর নিজেকে কিছুটা গুটিয়ে নেয় সে। পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় এলাকা থেকে গা ডাকা দেয় সে। তবে আরজুল্লাহর মৃত্যুর পর তার বাহিনীর অনেক সদস্য এবং নেপথ্যে থাকা মদদ দাতারা একটু নড়ে চড়ে বসেছে। তার মৃতদেহ দেখে অনেকেই মন্তব্য করেছে তাকে গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যার পূর্বে সন্ত্রাসীরা তার শরীরে অনেক ক্ষতের চিহ্ন সৃষ্টি করে।

এদিকে আরজুল্লাহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় তার প্রথম স্ত্রী দু সন্তান ফেলে ঢাকাতে চলে যায়। পরে গ্রামে দ্বিতীয় বিয়ে এবং সর্বশেষ তৃতীয় বিয়ে করে ঘরে স্ত্রী এনে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিলো বলে স্থানীয়রা জানান। তবে আরজুল্লা নিজেকে রক্ষা করতে বিভিন্ন সময় নিভিন্ন সংগঠনের সাথে যোগাযোগ রেখে চলতো। যার কারণে তার অনেক সহযোগী অনেক আগেই চলে গেলেও সে চতুরতার সাথে নিজেকে রক্ষা করে রেখেছিলো। এদিকে আরজুল্লাহকে কে বা কারা হত্যা করেছে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। হত্যার সাথে জড়িতদের খুঁজতে পুলিশ এরই মধ্যে জালবিস্তার করেছে। তবে আরজুল্লাহর মৃত্যুতে এলাকায় স্বস্তির বাতাস বইছে বলে অনেকেই মন্তব্য করেছে।

উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গা সদরের নেহালপুর চায়ের দোকান থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার ৫ দিনের মাতায় আরজুল্লাহর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। হাসাদহ-মহেশপুর সড়কের কানাইডাঙ্গা রাস্তার পার্শ্ববর্তী থেকে জীবননগর পুলিশ আরজুল্লাহর লাশ উদ্ধার করে।