চুয়াডাঙ্গার জাফরপুর মাঠেও ধানের আবাদে ব্লাস্ট

ঘণ্টায় ঘণ্টায় বদলাচ্ছে বিস্তীর্ণ মাঠের সবুজ ধানক্ষেতের চিত্র

স্টাফ রিপোর্টার: যে ধান-গমের আবাদে দেশে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা আনে, সেই আবাদ গ্রাস করছে ব্লাস্ট। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কয়েকটি অঞ্চলের বিশাল মাঠের বহু বিঘা জমির ধানে ‘ব্লাস্ট’ নামক ভাইরাস লেগে ফলনে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে এনেছে। ধানের শীষে যখন দানা হবে, ঠিক তখনই ব্লাস্টের কারণে শীষ শাদা হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। দৃশ্য দেখে ধানচাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের বেগমপুর ইউনিয়নের পাশাপাশি শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নেরও বেশ কিছু মাঠে বহু বিঘা ধানের আবাদে ব্লাস্ট ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের জাফরপুরের ব্যবসায়ী ও ধানচাষী মামুন অর রশিদ আঙ্গুর বলেছেন, আমার ১৬ বিঘা ধানের আবাদে ব্লাস্ট লেগেছে। একদিক থেকে ধানের শীষ শাদা হতে শুরু করেছে। গতপরশুও যে ধানের আবাদ দেখে মন জুড়িয়ে যাচ্ছিলো, গতকাল সেই আবাদ দেখে হাত উঠেছে মাথায়। ঘণ্টায় ঘণ্টায় ধানের আবাদের চেহারা বদলে যাচ্ছে। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, আমি বিএডিসি নূরনগর খামার থেকে ধানের বীজ কিনে ১৬ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছিলাম। ওই বীজের কারণেই আমার ধানের আবাদে ব্লাস্ট লেগেছে। শুধু তাই নয়, আমাদের জাফরপুরের যারাই বিএডিসির বীজ কিনে আবাদ করেছে তাদের জমিতেই ব্লাস্ট লেগেছে। পাশের জমির মালিক সলিম ধানের খাটোবাবু জাতের আবাদ করে ব্লাস্ট থেকে রক্ষা পেয়েছে। আমির হোসেন নিজের সংরক্ষিত বিরি-২৮ জাতের ধানের আবাদ করেন। তার জমিতে ব্লাস্ট লাগেনি। এরকম অনেক উদাহারণ রয়েছে জাফরপুর মাঠে।

গত শীতের আগের শীতে গমের আবাদে ভয়াবহ ব্লাস্ট লাগে। ফলে গতবারের গমের আবাদ মরসুম শুরুর আগেই কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর, ঝিনাইদহ মাগুরা, যশোরসহ ১০টি জেলায় গমের আবাদ না করার জন্য আহ্বান জানান। ধানের আবাদেও যে ব্লাস্ট লাগতে পারে এরকম কোনো পূর্বাভাস ছিলো না। অথচ বিঘার পর বিঘা ধানের আবাদে ব্লাস্ট লেগে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে এনেছে। যে ধানের আবাদে বিঘা প্রতি ২৫ থেকে ২৯ মন ধান হওয়ার কথা, ব্লাস্টের কারণে সেখানে ধান মিলবে হয়তো দু থেকে তিন মণ। ফলে খরচটাও উঠবে না। প্রতিবিঘা জমিতে ধানের আবাদ করতে কমপক্ষে ৮ হাজার টাকা খরচ হয়। জমি লিজ নিয়ে আবাদ করলে তাতে খরচ আরো কয়েক হাজার টাকা বেশি হয়। এবার ধানের আবাদে যে ক্ষতি হচ্ছে তাতে আগামিতে ধানের আবাদ থেকে অনেক চাষিই মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। ফলে কৃষি বিভাগকে এখনই দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া দরকার। জরুরী ভিত্তিতে ব্লাস্ট প্রতিরোধের মাধ্যমে ফলন বিপর্যয় থেকে রক্ষার কাজে সরকারিভাবে এগিয়ে প্রয়োজন বলেও মন্তব্য সচেতন ধানচাষিদের।

প্রসঙ্গত: চুয়াডাঙ্গার বেগমপুর এলাকায় ধানে ব্লাস্ট রোগে ভয়াবহ ক্ষতির খবর পত্রিকায় গত কয়েকদিন ধরে লাগাতারভাবে প্রকাশিত হয়। কৃষি কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট এলাকার মাঠও পরিদর্শন করেন। প্রদশনী প্লটেও ব্লাস্ট দেখে হতবাক হন কর্তারা।