চুয়াডাঙ্গার আলুকদিয়ায় দু নারীর জিন নিয়ে বাণিজ্য

খাসি মেরে শিরনির প্রাক্কালে একের বিরুদ্ধে অপরের অবস্থান ॥ উত্তেজনা প্রশমনে পুলিশ
কামরুজ্জামান বেল্টু: চুয়াডাঙ্গার আলুকদিয়া চকপাড়া ও মোল্লাপাড়ায় দু নারী জিনের নামে বাণিজ্যের ফাঁদ পেতে বসেছেন। এক রোগীর খাসি পেড়ে শিরনির প্রস্তুতিকালে দু নারীর দু রকম তথ্যে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ কথিত জিনভর করা চৌকাঠ উদ্ধার করলেও জিন নিয়ে দু নারীর মনগড়া গল্পে গলাবাজি থামেনি। যদিও যে খাসি পেড়ে শিরনির কথা ছিলো, সেই খাসি ১১ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিব্যি ঘুরছেন রোগী মেহেরপুর দরবেশপুরের পাখি ভ্যানচালক আনারুল। অথচ ওই খাসি নিয়ে টানাটানির মাঝে পড়ে গুরুতর আহত হয়ে গত ৪ দিন ধরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আলুকদিয়া চকপাড়ার রহিমা খাতুন। একই সময় তার ছেলে লিমনও আহত হন। তবে তিনি চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের আলুকদিয়া চকপাড়ার নূর হোসেনের স্ত্রী মুনিহার খাতুন কয়েক বছর ধরে মনগড়া গল্পের ফাঁদে বাড়িতে বার বসান। তিনি দাবি করেন, তার ওপর ৭টি জিন ভর করে। ওই জিনে নাকি সব রোগীর সকল প্রকারের রোগ সেরে দেয়। এ কথা বলে বাড়ির উঠোনে বসানো চৌকাঠে বসে দীর্ঘদিন ধরেই অর্থবাণিজ্য চালিয়ে আসছেন তিনি। মুনিহার বলেন- ‘কয়েক বছর আগে কবরস্থানের কাঠ কিনে এক শুক্রবার জুম্মার আজানের সময় তা আনতে দিয়ে দেখি, একটি কবর থেকে কঙ্কাল উঠে পাখি হয়ে গাছে গিয়ে বসলো। আমি ক্ষমা চেয়ে বললাম, আর কোনোদিন কবরের কাঠ কিনবো না। সেই থেকেই ওরা আমার ওপর ভর করে।’ অপরদিকে আলুকদিয়া মোল্লাপাড়ার কাতব বিশ্বাসের স্ত্রী রহিমা খাতুনের দাবি তার কাছে আসে তিনজন জিন। ছোটবেলা থেকেই ভর করে। ওরা স্বপ্নে কিছু গাছও দিয়েছে। সেই গাছ স্বামী মাঠ থেকে এনে দেয়। তা রোগীদের মাঝে দিলে রোগ ভালো হয়ে যায়। এসব মনগড়া কল্পিত গল্পের ফাঁদে হরহামেশাই পড়ে এলাকার সরলসোজা মানুষ। স্থানীয় সচেতন যুবসমাজ এ তথ্য দিয়ে বলেছে, গত শুক্রবার দু নারীর এক আত্মীয় রোগী নিয়ে ঘটে এলাহী কা-। শেষ পর্যন্ত আনতে হয় পুলিশ। পুলিশ এসে কিছু মালামাল উদ্ধার করলেও তা দৌলাতদিয়াড়ের এক ব্যক্তির মাধ্যমে এক দফায় ১৫শ ও এক দফায় ৮শ মোট ২৩শ টাকা দিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে স্থানীয়রা বলেছেন, মেহেরপুর দরবেশপুরের আনারুল ইসলাম নামের এক পাখি ভ্যানচালক সম্প্রতি অসুস্থ হন। তাকে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয় আলুকদিয়া চকপাড়ার মুনিহার খাতুনের (৪০) কাছে। তিনি তার ওপর জিন ভর করার অভিনয় করে বলেন, একটি খাসি জবাই করে এখানে শিরনি করতে হবে। আর ওই খাসির রক্ত দিয়ে একটা তাবিজ করে দিলে খারাপ জিন আর থাকবে না। এ কথায় কান দিয়ে সরলসোজা আনারুলসহ তার পরিবারের লোকজন গত শুক্রবার একটি খাসি ছাগল নিয়ে হাজির হন আলুকদিয়ায়। খাসি জবাইর আগে আলুকদিয়া মোল্লাপাড়ার অপর ভ- নারী রহিমার কাছে গেলে তিনি বলেন, খাসি না দিলেও হবে। একটি মুরগি এখানে জবাই করে শিরনি করলেই ওই দুষ্টু জিন আমার জিনে তাড়িয়ে দেবে। এ মন্তব্যে বিভ্রান্তের মধ্যে পড়েন আনরুল ও তার লোকজন। খাসি জবাই হবে কি হবে না তা নিয়ে যখন দোলাচাল তখন ভ- মুনিহারসহ তার লোকজন ক্ষোভে ফুঁসতে শুরু করেন। রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। জিন হাসিল করা রহিমা খাতুনের সাথে বিরোধে মেতে ওঠে। তার নাম ধরে গালিগালাজও দেয়। এ সময় বিষয়টি না বুঝে মুনিহারের সাথে ঝগড়ায় মত্ত হন প্রতিবেশী নজরুল ইসলামের স্ত্রী রহিমা খাতুন। শুরু হয় চুলোচুলি। মারপিট। রহিমা খাতুন ও তার ছেলে লিমন আহত হয়। উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়। রহিমা খাতুনকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে।
এদিকে খাসি জবাই করে শিরনি করতে এসে বিরোধ ছড়ানো সেই আনারুলের সাথে গতকাল মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওরা যে ভ- তা প্রথমে বুঝতে পারিনি। ওদের কথা শুনে খাসিটা জবাই করলে লস হয়ে যেতো। সেই খাসিটা বিক্রি হয়েছে ১১ হাজার টাকা। আমার অসুস্থতাও আর নেই। ওরা উল্টো পাল্টা বলে আমাকে সত্যি সত্যিই ভয়ে কাবু করে দিয়েছিলো। ভেবেছিলাম, খাসি মেরে শিরনি না করলে বোধহয় বাঁচবো না। এখন দেখছি সবই মিথ্যা। ভাগ্যিস ওদের ঝগড়াটা হয়েছিলো বলেই রক্ষা।