চুয়াডাঙ্গার অধিকাংশ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদন নেই : নেই প্যাথলজিস্ট ও টেকনিশিয়ান

এক্স রে কক্ষ নয় বিধিসম্মত নয় : উৎকোচ না দিলে নবায়ন হয় না লাইসেন্স

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার অধিকাংশ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। অতিরিক্ত টাকা খরচের ভয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্য প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এসব ডায়াগনস্টিক তাদের কার্যক্রম অবৈধভাবেই চালিয়ে যাচ্ছে। এতে সরকার যেমনি রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

অভিযোগকারীরা জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে বিভিন্ন নামে ৩৬টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চোখে পড়লেও আড়ালে অনেকেই অবৈধ। অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, টেকনিশিয়ান ও তাদের প্রয়োজনীয় অনুমোদন নেই। কিন্তু সিভিল সার্জন অফিসকে ম্যানেজ করে দিব্যি কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে রোগী সাধারণ ঝুঁকির মধ্যে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাচ্ছে। সম্প্রতি এক অভিযোগ থেকে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে যেসব অনুমোদনহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে, তারা নির্ভয়ে দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম। কেউ কেউ সিভিল সার্জনের মাধ্যমে অনুমোদন পাওয়ার জন্য আবেদন করলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। অনেকে লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য আবেদন জমা দিলেও তা রয়েছে অন্তরালে। সূত্র জানায়, লাইসেন্স নবায়নের জন্য ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে এক হাজার টাকা জমা দিতে হয়; কিন্তু এ প্রক্রিয়ার প্রথমেই ধাক্কা খান ডায়াগনস্টিক মালিকেরা। সিভিল সার্জন অফিসের দিতে হয় নগদ ৫ হাজার টাকা। এখান থেকে ফাইল খুলনায় গেলে সেখানেও দিতে হয় পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা। কারো যদি এক বছর বা দু বছর লাইসেন্সের মেয়াদ ফেল হয়; সেক্ষেত্রে এ রেট কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। ফলে সাধারণ ডায়াগনস্টিকের মালিকেরা সিভিল সার্জনকে ম্যানেজ করেই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ এক হাজার টাকার ট্রেজারি চালান দেখিয়েই ছোটখাটো সমস্যা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান থেকে নিজেদের রক্ষা করেন। তারা ট্রেজারি চালানের দোহাই দিয়ে বলেন লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা হয়েছে। দেখা যায়, ত্রুটিপূর্ণ ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোয় আনাড়ি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল পরীক্ষা-নিরীক্ষার ঝক্কি থেকেই যাচ্ছে। সূত্র জানায়, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এক্স-রে বিভাগের অনুমোদনের জন্য পরমাণু শক্তি কমিশনে আবেদন করতে হয়। চুয়াডাঙ্গার অধিকাংশ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এক্স-রে বিভাগের অনুমোদন নেই। আবার আগে অনুমোদন নেয়া থাকলেও অনেকেই তা নবায়ন করনেনি। ফলে এখানেও সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একই সাথে সরকারি বিধি না মেনেই এক্স-রে বিভাগগুলো তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা রয়েছে। এক্স-রে বিভাগের রঞ্জনরশ্মির রে মানুষের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে চিকিৎসকেরা জানান। সেক্ষেত্রে এক্স-রে বিভাগের কক্ষের দেয়াল ১০ ইঞ্চি মোটা, দরজায় মোটা প্লেনশিট, পুরুষ-মহিলাদের জন্য আলাদা টইলেট, ওয়েটিং রুম ও ডাকরুম থাকা অত্যাবশ্যক। কিন্তু চুয়াডাঙ্গার কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এক্স-রে বিভাগ এ বিধি মানছে না। ফলে রাস্তায় চলাচলকারী সাধারণ মানুষ ও রোগীরা এক্স-রে রুমের রে থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। প্রাথমিকভাবে এসব দেখভাল ও যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্ব থাকে সিভিল সার্জনের ওপর। এ জন্য অফিসের বড়বাবুকে ম্যানেজ করেই বিধিকে থোড়ায় কেয়ার করছেন অভিযুক্তরা। লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে গড়িমসির কারণ হিসেবে ডায়াগনস্টিক মালিকেরা জিভিল সার্জনকেই দোষারোপ করেন।

অভিযোগ রয়েছে, অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও জনবল না থাকলেও কাগজে-কলমে দেখিয়ে কার্যক্রম চলছে অবাধে। চুয়াডাঙ্গা ইসলামী হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, তিসা এক্স রে, মেডিনোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সনো ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আব্দুল্লাহ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, এ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নিবেদিতা কপিউটরাইজড প্যাথলজি, গ্রিন লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, জনসেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্রাইম ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদন নবায়ন করা না থাকলেও দিব্যি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে মালিকগণ। প্যাথলজি বিভাগে রক্ত, মল, মূত্র, কফ ইত্যাদি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অধিক লাভ বলে লাইসেন্স ছাড়াই অনেকে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে স্বল্প খরচ হলেও সমিতির মাধ্যমে বাড়তি টাকা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। সেই অনুযায়ী টাকা নেয়া হয়।

অভিযোগকারীরা জানান, অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্যাথলজিস্ট ও টেকনিশিয়ান নেই। নির্দিষ্ট কিছু প্যাথলজিস্ট ও টেকনিশিয়ানের সই করা কাগজপত্র রেখে দেয়া হয়। আর পরীক্ষা করে কর্মচারীরা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এমনটি হয় বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী মাথাভাঙ্গাকে জানান। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে ভুক্তভোগীরা আশা করে। সার্বিক বিষয়ে মন্তব্য চাওয়ার জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. খন্দকার মিজানুর রহমানের মোবাইলফোনে রিং দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।