চাচার লাঠির আঘাতে জখম ভাতিজার মৃত্যু : খুন মামলা

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা আকন্দবাড়িয়ায় শরিকি জমি নিয়ে বিরোধের নগ্ন বহির্প্রকাশ : সংঘর্ষ

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার দর্শনা আকন্দবাড়িয়ায় চাচার লাঠির আঘাতে জখম ভাতিজা লিপু (১৭) মারা গেছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে পরশু রাতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মারা যায়।

ভাতিজা লিপুর মৃত্যু খবর পেয়ে অভিযুক্ত চাচা রাহাতসহ তার পক্ষের লোকজন গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপন করেছে। লিপুর বড় ভাই লিপটন গতকালই চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় অভিযোগ পেশ করেছে বলে জানা গেছে। সংঘর্ষে লিপ্টন ও তাদের মা তকলিমা খাতুন ওরফে আকলিমা ওরফে তকিও জখম হন। তিনি অসুস্থ অবস্থায়ই ছোট ছেলে লিপুর সাথে ঢাকায় যান। ছেলের মৃত্যুর পর তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে বাঁচানোও অনেকটা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জনিয়েছেন তার সাথে থাকা নিকটজনেরা। গতরাতে লাশ ও আকলিমাকে নিয়ে তাদের নিকটজনেরা চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে রওনা হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত না করায় আজ রোববার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত করানোর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে পুলিশ।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের বেগমপুর ইউনিয়নের আকন্দবাড়িয়া তমালতলাপাড়ার মৃত আবুল কাশেমের কয়েক ছেলের মধ্যে শরিকি জমি নিয়ে বিরোধ দানা বাধে। এক পর্যায়ে ৪/৫ কাঠা করে জমি বণ্ঠনও করেন নিজেরা। বণ্ঠনকৃত জমির যে অংশে রাস্তা করা হবে, সেখানে পূর্ব থেকেই রয়েছে মৃত কাশেম আলীর এক ছেলে রহমত আলীর একটি ঘর। শর্ত অনুযায়ী সেটা সরিয়ে নেয়ার কথা। আজ নিচ্ছি কাল নিচ্ছি করে গত শুক্রবার ঘরটি সরিয়ে নেয়ার চূড়ান্ত কথা ছিলো। তা না সরানোর কারণে বিকেল তিনটার দিকে রহমত আলীর স্ত্রী তকলিমা ও দু ছেলে লিপ্টন এবং লিপুর সাথে রহমত আলীর ভাই রাহাতসহ অন্যদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে বাধে সংঘর্ষ। একপর্যায়ে চাচার লাঠির আঘাতে জখম হয় লিপু, লিপ্টন ও তাদের মা তকলিমা। অপরপক্ষেরও বেশ কয়েকজন আহত হয় বলে তাদর তরফে গতকাল জানানো হয়েছে।

আহত মা ও দু ছেলেকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয়। লিপুর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতাল বা অন্য কোথাও নেয়ার পরামর্শ দেন। নিকটজনেরা প্রথমে খুলনায় নেয়ার উদ্যোগ নিলেও রাতে লিপুকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। সেখানে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসার এক পর্যায়ে লিপু মারা যায়। তার মাথায় গুরুতর আঘাতের কারণেই মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। নিকটজনেরা এরকমই মন্তব্য করেছে।

এদিকে ছোটভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে বড় ভাই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ছেড়ে তার আত্মীয়দের সাথে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় হাজির হয়ে চাচাদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তুলে এজাহার পেশের প্রক্রিয়া করে। অপরদিকে ঢাকা মিডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত না করিয়ে লাশ চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে নেয়া হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সেখানে কেন ময়নাতদন্ত করানো হয়নি তা অবশ্য নিশ্চিত করে জানা যায়নি। তবে একটিসূত্র বলেছে, লিপুরই এক আত্মীয় প্রভাবিত করে সেখানে ময়নাতদন্ত না করিয়ে চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে নিতে তড়িঘড়ি করেন।

দর্শনা অফিস ও বেগমপুর প্রতিনিধি জানিয়েছে, আবর্জনা ফেলা নিয়ে প্রথমে নিজেদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। পরে ঘর স্থানান্তরের বিষয়টি উঠে আসে। তখন লিপুসহ অন্যরা বৃষ্টির কারণে আজ নয়, কাল বলে জানায়। এ সময় উভয়পক্ষই আপত্তিকর কথা বলতে থাকলে সংঘর্ষে রূপ নেয়। বাড়ির ভেতরে ও পথের সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ৬/৭ জন আহত হয়। তবে লিপু ও তার মা এবং বড় ভাই লিপটনই বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়। শেষ পর্যন্ত লিপু মারা গেলো। চাচারা এখন গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে। কেউ কেউ অজ্ঞাত স্থানে চিকিৎসা নিচ্ছে বলেও অভিযুক্ত চাচা রাহাতের পক্ষের লোকজন জানিয়েছেন।