চলে গেলেন অভিনয় শিল্পী খালেদ খান

স্টাফ রিপোর্টার: মঞ্চ-টিভি নাটকের শক্তিমান অভিনয় শিল্পী নির্দেশক খালেদ খান আর নেই। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগীকে শোকসাগরে ভাসিয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে তিনি চলে গেলেন না ফেরা দেশে। তার বয়স হয়েছিলো ৫৫ বছর। ‘ছিঃ ছিঃ তুমি এতো খারাপ…’ বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ইমদাদুল হক মিলনের ‘রূপনগর’ নাটকে খালেদ খানের এ সংলাপটি এখনো মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়। তার ডাকনাম ছিলো যুবরাজ। দেশের নাট্যজগতে তিনি যুবরাজের মতোই বিরাজ করেছেন। মঞ্চনাটক ‘অচলায়তন’, ‘রক্তকরবী’ নাটকে তার অভিনয় দর্শকরা আজো ভুলতে পারেননি। অত্যন্ত শক্তিমান অভিনেতা ছিলেন তিনি। ১৯৭৮ সালে নাগরিক নাট্যদলের ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’তে কাজ করার মাধ্যমে পদচারণা শুরু এ মঞ্চনায়কের। জননন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ধারাবাহিক নাটক ‘এইসব দিনরাত্রি’তে আনিস চরিত্রটি তাকে টিভি দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় করে তোলে।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ জানান, গতকাল তার মরদেহ বারডেমের হিমঘরে রাখা হয়। আজ শনিবার সকালে তার মরদেহ ধানমণ্ডির বাসভবনে নেয়া হবে। সেখানে আত্মীয়-স্বজনরা তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর মরদেহ নেয়া হবে তার কর্মক্ষেত্র ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসে। সেখানে সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা তাকে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপর সকাল ১১টায় তাকে নিয়ে যাওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে নেয়া হবে। সেখানে পিতার কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হবে। খালেদ খান দীর্ঘদিন ধরে দুরারোগ্য মটর নিওরন রোগে ভুগছিলেন। এ রোগে মানুষের শরীরের মাংসপেশীগুলো অকেজো হয়ে যায়।

খালেদ খান ১৯৫৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার ভাই শাহীন খানও একজন অভিনেতা। অসুস্থতার কারণে খালেদ খান অভিনয় ছেড়ে দিয়েছেন বহুদিন আগে। তবে অসুস্থতা সত্ত্বেও বেশ কিছুদিন আগ পর্যন্ত মঞ্চনাটকে নির্দেশনা দিয়েছেন। সর্বশেষ তিনি ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের ভারপ্রাপ্ত ট্রেজারার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পাশাপাশি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের নাটকের ওপর একটি কোর্স করাতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের মেধাবী ছাত্র ছিলেন খালেদ খান। বিজ্ঞাপনে কণ্ঠ দেয়ার পাশাপাশি সুবচনসহ বিভিন্ন নাট্যদলের ১০টিরও বেশি মঞ্চ প্রযোজনা নির্দেশনা দিয়েছেন। অভিনয় করেছেন ৩০টি মঞ্চনাটকসহ ছোট পর্দার অসংখ্য জনপ্রিয় নাটক ও কয়েকটি চলচ্চিত্রে। অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন মোহাম্মদ জাকারিয়া পদক, নূরুন্নাহার স্মৃতিপদকসহ অসংখ্য পুরস্কার।