চতুর্মুখি চাপেও অনড় খালেদা

স্টাফ রিপোর্টার: নিজে অবরুদ্ধ, সিনিয়র নেতারা আত্মগোপনে, সরকার হার্ডলাইনে, হামলা-মামলায় নেতাকর্মীরা দিশাহারা সবমিলে চারদিকে থেকে চাপে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এই চাপ নিয়েই সরকার হটানোর আন্দোলনে আরো কঠোর হতে চান তিনি। নতুন নির্বাচন নিয়ে সমঝোতার পরিবেশ সৃষ্টি না করা পর্যন্ত লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় তিনি। চলমান অবরোধ থেকে লাগাতার হরতাল এমনকি অসহযোগ আন্দোলনে যাওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে তার। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন আদায়ের চেষ্টাও অব্যাহত রাখা হয়েছে।

৫ জানুয়ারি ঢাকায় জনসভা করার মাধ্যমে সরকারবিরোধী আন্দোলন বেগবান করার পরিকল্পনা নিয়ে আন্দোলনের ছক তৈরি করেছিলে বিএনপি। কিন্তু পরিকল্পনা ব্যর্থ করতে সরকার চারদিকে থেকে চাপে ফেলে দেয় দলটিকে। এর অংশ হিসেবে ওইদিন থেকে আজ পর্যন্ত টানা আট দিন বিএনপি চেয়ারপারসনকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এরপর সিনিয়র নেতাদের মধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর রায়কেও আটক করা হয়। এদিকে লন্ডন থেকে বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতেন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে তার বক্তব্য প্রচারও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আরেক দফা চাপে পড়েন বিএনপি চেয়ারপারসন। অন্যদিকে গ্রেপ্তার আতঙ্কে সিনিয়র নেতারা চলে যান আত্মগোপনে। তবে দুর্দিনের সবচেয়ে আস্থাভাজন নেতা হিসেবে পরিচিত দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আটক হওয়ার পরও হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গিয়ে অজ্ঞাত স্থান থেকে প্রতিদিনই নেতাকর্মীদের উদ্দেশে চেয়ারপারসনের বার্তা পেঁৗছে দিচ্ছেন।। সিনিয়র নেতাদের এ অবস্থার পাশাপাশি মাঠের নেতাকর্মীরাও হামলা মামলায় দিশাহারা হয়ে পড়ায় বিএনপি চেয়ারপারসনের চাপ আরো বেড়েছে। গত কয়েক দিনের রাজনৈতিক সহিংসতায় সারাদেশে ১০ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছে শতাধিক।

খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, এত চাপের পরও বিচলিত নন বিএনপি চেয়ারপারসন। বরং আরো কঠোর আন্দোলনের পক্ষেই তার অবস্থান। তিনি সরকার হটানোর আন্দোলন সফল না হওয়া পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় আছেন। আগেই নেতৃবৃন্দকে দেয়া দিকনির্দেশনা কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে তা নিজেই তদারকি করছেন। দৃশত সিনিয়র নেতারা মাঠে না নামলেও সার্বিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের চিত্রে এখন পর্যন্ত সন্তুষ্ট খালেদা জিয়া।
সূত্র জানায়, শেষ পর্যন্ত যদি অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকতে হয় তাতেও বিজয় অর্জন সম্ভব বলে মনে করছেন খালেদা জিয়া। তার পরিকল্পনায় রয়েছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপিকে আরো কঠোর করা। চলমান আন্দোলনের ধরন পাল্টিয়ে গতিও আরো বাড়ানো। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আন্দোলন সফল করার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের আরো কৌশলী হওয়ার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। এছাড়া ‘অবরুদ্ধ’ অবস্থা থেকে গ্রেপ্তার হলেও এর পরবর্তী সময়ে করণীয় বিষয়ে পরিকল্পনা ঠিক করে রেখেছেন বিএনপিপ্রধান। যথাসময়ে সিনিয়র নেতাদের গ্রেপ্তার পরবর্তী কৌশলও জানিয়ে দেবেন তিনি।

সূত্রমতে, চূড়ান্ত সাফল্য পেতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছেন খালেদা জিয়া। এগুলো হলো- নতুন নির্বাচনের দাবিতে করা আন্দোলনের জন্য প্রস্তাব ও অবেরোধের কর্মসূচি ঘোষণার বিষয়ে দলের মধ্যে যে সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছিল তা নিরসন করেছেন। এছাড়া পুরো আন্দোলনের বিষয়টি তদারকিও করছেন তিনি। শুধু আস্থাভাজন নেতাদের সঙ্গে বিশেষ মাধ্যমে কথা বলছেন। আর বিতর্কিতদের ব্যাপারে এবার সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। অবরুদ্ধ অবস্থা থেকেও আশপাশে থাকা নেতা ও কর্মকর্তাদের সব বিষয়ে অবগত করছেন না। এছাড়া দলের পাশাপাশি জোটের নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। অবরোধ চালিয়ে যেতে সংশ্লিষ্টদের দিকনির্দেশনাও দিচ্ছেন। এদিকে কর্মসূচিতে যেসব প্রভাবশালী নেতা গ্রেপ্তার এড়াতে মাঠে না থাকার পাশাপাশি খালেদা জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না তাদের একটি তালিকাও তৈরি করেছেন চেয়ারপারসন। নিষ্ক্রিয়দের স্থলে সক্রিয়দের এরই মধ্যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বিএনপির একটি সূত্রের দাবি, বিএনপি বা ২০ দলের বাইরে বিকল্পধারা, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাসদ, সিপিবিসহ সব রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের প্রতি চলমান আন্দোলনে বিএনপির পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সূত্রমতে, আন্দোলনের মাঠের সমন্বয় করার পাশাপাশি তিনি আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন। এর অংশ হিসেবে গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ থাকা খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মহল নানাভাবে যোগাযোগ করছেন। অনেকে বিভিন্ন মাধ্যমে বার্তা পাঠিয়ে বেগম জিয়ার প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে। দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, চেয়ারপারসনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সভাপতি অমিত শাহ। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের কর্তাব্যক্তিরাও বিভিন্নভাবে বেগম জিয়ার খোঁজখবর নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।