ঘুষ কেলেঙ্কারিতে দুদকের অর্ধশত কর্মকর্তা!

 

স্টাফ রিপোর্টার: দুর্নীতির অভিযোগ থেকে রেহাই দেয়ার কথা বলে ঘুষ নেয়ার একাধিক অভিযোগেজড়িয়ে পড়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রায় অর্ধশত কর্মকর্তা। অবৈধ সম্পদেরনোটিশ, অনুসন্ধান, মামলা ও চার্জশিটের ভয় দেখিয়ে ঘুষ দাবি করা হয়েছে বলেঅভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীদের অনেকেই দুদকে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগকরার সাহস না পেয়ে প্রশাসনের বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এ সবঅভিযোগ করছেন। এমন কি ভুক্তভোগীরা তাদের মোবাইলফোনের ভয়েস কল রেকর্ডওঅভিযোগের সাথে জমা দিয়েছেন। এছাড়া কেউ দুদকের নামে হয়রানি করলে বা কেউ চাঁদা বা ঘুষ দাবি করলে দুদকের ফোন নম্বরে (৯৩৫২৫৫২) জানানোর জন্য তিনি অনুরোধ জানান।

জানাগেছে, দুদকের একাধিক কর্মকর্তার মোবাইলফোনে অবৈধ অর্থ লেনদেনেরকথোপকথনের রেকর্ড পেয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। তারা সেগুলো যাচাইবাছাইকরছেন। এরপর তাদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দুদক কমিশনারদেরসাথে আলোচনা করা হবে। সূত্রটি আরো জানায়, এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে দুদকেরউপপরিচালক, সহকারী পরিচালক পর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। একারণে প্রায় অর্ধশত কর্মকর্তার ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

এদিকে, দুদক কর্মকর্তাদের দাবি তাদের নাম পরিচয় ব্যবহার করে প্রতারকচক্র এধরনের ঘুষ লেনদেন করছে। এছাড়া, নিজেদের মধ্যে কেউ দুর্নীতি করছে কি-না, সেটা দেখার জন্য দুদকের আভ্যন্তরীণ কমিটি রয়েছে। এ পর্যন্ত যাদের বিরুদ্ধেঅভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

দুদকসূত্রে জানা গেছে, ঘুষ নেয়ার অভিযোগ গত পাঁচ বছরে নিজেদের ৭৬ জন কর্মীরবিরুদ্ধে নিজস্ব আইনে মামলা দায়ের করেছে দুদক। এর মধ্যে অভিযোগ প্রমাণিতহওয়ায় ৪৭ জনের শাস্তিও হয়েছে। চলতি বছরে দুদকের একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধেব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গত ১৭ জুন দুদকের দু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষগ্রহণের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা করেছে দুদক। তারা হলেন, দুদকের প্রধানকার্যালয়ের উপপরিচালক গোলাম মোস্তফা ও বগুড়া দুদকের সমন্বিত জেলাকার্যালয়ের উপপরিচালক জাহিদ হোসেন। এ দুজনের বিরুদ্ধে এক ব্যবসায়ীর কাছথেকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ৩৭ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ এবং আরও ২০ লাখ টাকা ঘুষ দাবিরতথ্য পায় দুদক। এ অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ের পর তাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেয়াহয়। এছাড়া অনিয়ম ও বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে গত মাসে দুদকের উপপরিচালকমো. আহসান আলী এবং শফিকুল ইসলামকে বাধ্যতামূলক অবসরে যেতে হয়েছে।

দুদকসূত্রটি আরো জানায়, বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি গোয়েন্দানজরদারিতে রাখা হয়েছে যে অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে, তাদেরসহ সবকর্মীর ওপর কড়া নজরদারি রাখতে দুদক পরিচালক সাহিদুর রহমানকে দায়িত্ব দেয়াহয়েছে। কর্মকর্তাদের কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির গন্ধ পাওয়ার সাথে সাথেই দুদকচেয়ারম্যানকে অবগত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।নাম প্রকাশেঅনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন অভিযোগকারী জানিয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রে যাচাই বাছাই নাকরে তাদের কাছে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এ নোটিশের জবাব না দেয়ায় দুদককর্মকর্তারা তাদেরকে অযথা হয়রানি করেছেন। এতে ব্যবসায়ীরা সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছেন বলেও তারা অভিযোগ করেছেন।

দুদকের জনসংযোগকর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, এধরনের অভিযোগ থাকলে তা দুদককেজানাতে হবে। দুদকের নামে কেউ চাঁদা বা ঘুষ দাবি করলে দুদকের ফোন নম্বরে (৯৩৫২৫৫২) জানানোর জন্য তিনি অনুরোধ করেন।