ঘাতক আজাদ হাজির : হত্যার কথা স্বীকার করে কৃপা পাওয়ার নাটক

চুয়াডাঙ্গা গোষ্টবিহারের সংগ্রামী নাজমাকে ঢাকার বাসায় কীভাবে ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করেছে তার বর্ণনা দিচ্ছে হত্যাকারী

 

বেগমপুর প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা গোষ্টবিহারের সংগ্রামী নাজমাকে ঢাকায় হত্যার পর এবার কৌশলী হয়েছে ঘাতক স্বামী আজাদ হোসেন। সে খানেকটা আকস্মিক নাজমার পিতার বাড়ি গোষ্টবিহারে হাজির হয়ে প্রকাশ্যেই হত্যার কথা অকপটে স্বীকার করে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে চেয়েছে। নাজমার পিতাপক্ষ তাকে ধরে এখন কী করা উচিত তা ভেবে না পেয়ে বাড়িতেই রেখেছে।

আত্মস্বীকৃত ঘাতককে ধরে পুলিশের বদলে বাড়িতে রেখে ঘাতকের নিকটজনদের খবর দেয়া হয়েছে। ঘাতক কেন কৃপা পাবে? নিকটস্থ পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশকে কেন খবর দেয়া হচ্ছে না? এসব প্রশ্নের জবাবে নাজমার পিতাসহ পরিবারের লোকজন বলেছেন, হত্যাকারী বাড়ি এসে আসন গেড়ে হত্যার কথা স্বীকার করলে মারতে হয় নাকি পুলিশে দিতে হয় তাই তো বুঝতে পারছিনে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের তিতুদহ ইউনিয়নের গোষ্টবিহার গ্রামের হতদরিদ্র আলম আলীর মেয়ে নাজমা ৬ বছর আগে ঢাকায় পাড়ি জমায়। অভাব ঘোঁচাতে ঢাকায় শুরু হয় জীবনযুদ্ধ। ঢাকা মিরপুরের রে-এমব্রয়ডারি ফ্যাক্টরিতে চাকরি নেয়। পরিচয় হয় চাঁদপুরের হাজিগঞ্জের পাতানিশা গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে আজাদের সাথে। মন দেয়া-নেয়ার একপর্যায় গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি বিয়ে করে শুরু করে সংসার। বিয়ের কিছুদিনের মাথায় আজাদের মুখোশ খোলে। সে যৌতুকের দাবি তোলে। নানা অজুহাতে নির্যাতন শুরু করে। এরই এক পর্যায়ে গত ২ ডিসেম্বর রোববার সকাল ৮টার দিকে ঢাকার বাইটেক ১৭/৫ নং বাসায় লাশ হয় নাজমা। নাজমার লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরের দিন নিজ গ্রামে দাফন সম্পন্ন করে তার পরিবারের লোকজন। নাজমার মাতাপক্ষের লোকজন নাজমাকে হত্যার অভিযোগ তুলে আজাদের শাস্তি দাবি করতে থাকে। এরই এক পর্যায়ে গতপরশু শুক্রবার রাত ১টার দিকে নাজমার স্বামী আজাদ চুয়াডাঙ্গার গোষ্টবিহারে নাজমার পিতার বাড়িতে হাজির হয়। মেয়ের হত্যাকারীকে নিজ বাড়ির ওপর দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে ওঠে নাজমার পিতার। বিষয়টি গ্রাম্য মাতবরদেরকে জানান নাজমার পিতা। মেয়ের হত্যাকারী স্বেচ্ছায় বাড়িতে উঠেছে এ খবর পেয়ে উৎসুক জনতার ভিড় জমে। নাজমাকে কেন বা কী কারণে হত্যা করা হয়েছে জানতে চাইলে আজাদ অকপটে বলেন, নাজমার গলায় ওড়না বেঁধে ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করেছি। এর জন্য আমি নিজেই দায়ী। এখন আমাকে যা খুশি করেন। আজাদের সরল স্বীকারোক্তিতে স্থানীয়রা হতবাক হলেও প্রশ্ন তুলেছে, সে যদি প্রায়শ্চিত্তই করতে চায়, তাহলে হত্যার কথা থানায় গিয়ে স্বীকার করবে। থানায় না গিয়ে নাজমার পিতার বাড়িতে এসে হত্যার কথা স্বীকার করে সে কৃপা পেতে চাইছে। ঘাতক এখানে এসে এখন পার পাওয়ার পাঁয়তারা করছে। পুলিশে দেয়া উচিত বলেও অনেকে মন্তব্য করেন। নাজমার পিতা-মাতা দরিদ্র। ফলে আজাদকে কী করা উচিত তা ভেবে না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

গতকাল পর্যন্ত আজাদের বাড়িতে খবর পাঠালেও তার পরিবারের কোনো লোকজন এসে পৌঁছায়নি বলে নাজমার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। মেয়ের হত্যাকারীকে নিয়ে কী করবে বা কী করা দরকার তা নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছেন নাজমার পরিবারের লোকজন।