ঘাট দখলে টানা হেচড়া : চলছে বকরা আদায়

 

দর্শনা অফিস: কারো জন্য পোষ মাস, আর কারো সর্বনাশ এমনই অবস্থায় পরিণত হয়েছে দর্শনা হল্টস্টেশন এলাকার অভিযুক্ত দালালদের মধ্যে। পৌর কাউন্সিলর, সাংবাদিক ও পুলিশের ওপর হামলা মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে একটি দালালচক্র গা ঢাকা দিলেও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ওপর দালালচক্রের হোতারা। দর্শনা হল্টস্টেশন এলাকায় মাদক ও চোরাকারবারীদের কাছ থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের নামে নিয়মিত বকরা আদায়ের জন্য একাধিক দালালচক্র এখন মাঠে রয়েছে।

জানা গেছে, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে প্রশাসনের কর্তাদের কাছে ধর্ণা দেয়ার হিড়িক পড়েছে দালালচক্রের হোতাদের। একাধিক মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে মিনারুল, ফারুক ও রানা তার সাঙ্গপাঙ্গ সাথে করে দর্শনা ছাড়লেও আধিপাত্ত বিস্তার করতে এলাকায় ভিড়েছে বহুল আলোচিত অভিযুক্ত এক দালালচক্রের হোতা। গতকাল রোববার থেকে তার আনাগোনায় শুরু হয়েছে সমলোচনা। এদিকে দর্শনা হল্টস্টেশনের ঘাটে টোল আদায়ের দায়িত্বভার গ্রহণের জন্য কেউ কেউ দৌঁড়াচ্ছে পুড়াদাহ জিআরপি থানাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্তার দ্বারে। এরই মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জিআরপি ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মামুনের নাম ভাঙিয়ে অলিখিতভাবে দর্শনা হল্টস্টেশনে মাদক ও চোরাকারবারীদের কাছ থেকে টোল আদায় করছে কথিত দালাল ডালিম। ডালিম প্রকাশ্যে টোল আদায়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। ডালিমের কাছে জানতে চাওয়া হলেও সে এসআই মামুনের ওপর দোষ চাপিয়ে দেয়। এসআই মামুনের সাথে মোবাইলফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ডালিমকে কোনো দায়িত্ব দেয়া হয়নি, তাকে আমি চিনিও না। সে যদি টাকা তোলে তবে তাকে গ্রেফতার করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে পুড়াদাহ জিআরপি থানার ওসি সুনিল কুমার ঘোষের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। টোল আদায়ের অভিযোগে দর্শনা হল্টস্টেশন জিআরপি ফাঁড়ির ইনচার্জ এএসআই ফজলুল করিমকে স্ট্যান্ড রিলিজ করেছে কর্তৃপক্ষ। ফলে বৃহস্পতিবার সকালেই হল্টস্টেশন ত্যাগ করেছেন ফজলুল করিম। দর্শনা হল্টস্টেশন এলাকায় একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনার মূলে রয়েছে মাদক ও চোরাকারবারীদের কাছ থেকে টোল আদায়। স্টেশন এলাকার অধিপাত্ত বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে বিরাজ করছে উত্তেজনা। ঘটছে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা। এরই মধ্যে মাসুম বাহিনীকে হটিয়ে মিনারুল বাহিনী ঘাট দখল করলেও বেশিদিন টিকতে পারেনি। মাসুম ও তার সাঙ্গপাঙ্গের অত্যাচারে অতিষ্ট স্টেশন এলাকার মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস বেশিদিন ছাড়তে পারেনি। পরপরই মিনারুল তার সাঙ্গপাঙ্গের অত্যাচার শুরু হয়। মিনারুল বাহিনীর হামলার স্বীকার হয়েছেন দর্শনা পৌর কাউন্সিলর আ.লীগ নেতা হাসান খালেকুজ্জামান। এ হামলার প্রতিবেদন পত্রিকায় প্রকাশের জের ধরেই দালালচক্রের সদস্যরা হামলা চালায় সাংবাদিক চঞ্চল মেহমুদের ওপর। পরপর দুটি হামলার ঘটনায় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা ও থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। ১ মাসের ব্যবধানে হামলাকারীদের সাথে মাসিক চুক্তিকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বের সৃস্টি হয় দর্শনা হল্টস্টেশন জিআরপি ফাঁড়ির ইনচার্জ এএসআই ফজলুল করিমের সাথে। ফজলুল করিমের সাথে দ্বন্দ্বের মাশুল গুণতে হয়েছে ফাঁড়ির কনস্টেবল জিয়াউল হুদাকে। হামলাকারীরা ঈদুল ফিতরের দিন বিকেলে প্রকাশ্য দিবালোকে জিয়াউল হুদার ওপর হামলা চালিয়ে তাকে শারীরভাবে লাঞ্ছিত করেছে। এ ঘটনায় জিয়াউল হুদা বাদী হয়ে পুড়াদাহ জিআরপি থানায় ১১ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করেছেন মামলা। এ ঘটনার পর থেকেই দামুড়হুদা থানা, দর্শনা আইসি ও জিআরপি ফাঁড়ি পুলিশের যৌথ অভিযান শুরু হয়। গ্রেফতার করা হয় দুজনকে। অবস্থা বেগতিক বুঝে এলাকা ছেড়েছে মিনারুল বাহিনীর সদস্যরা। সুযোগকে কাজে লাগানোর অপচেষ্টায় মেতেছে পুরোনো কেউ কেউ। ৩ মাস এলাকা ছাড়া থাকলেও নতুনভাবে দেখা যাচ্ছে অনেকের মুখ। ওপর একটি পক্ষ ঘাটে টোল আদায়ের দায়িত্ব নেয়ার জন্য মেতে উঠেছে। দর্শনাবাসী হল্টস্টেশন দালাল মুক্ত দেখতে চায়। স্টেশনের আধিপাত্ত বিস্তারকে কেন্দ্র করে আর কোনো হামলা-পাল্টা হামলার দৃশ্য দেখতে নারাজ স্টেশন এলাকার সাধারণ মানুষ। চরম আতঙ্কে নয়, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ব্যবসা পরিচালনার জন্য হল্টস্টেশনের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে চুয়াডাঙ্গা-৬ বর্ডার গার্ডের পরিচালক, পুলিশ সুপার ও জিআরপি কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টি কামনা করেছে ভুক্তভোগী মহল।