ঘর গোছাতেই সময় পার বিএনপির

 

কাউন্সিলের এক বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন থেকে শুরু করে কোনো সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন করতে পারেনি দলটি

স্টাফ রিপোর্টার: দ্রুত সংগঠন শক্তিশালী করে আবারও আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছিলো বিএনপি। কিন্তু সাংগঠনিক কাজ কচ্ছপ গতিতে এগুনোর কারণে ঘর গোছানো সম্ভব হচ্ছে না। কাউন্সিলের এক বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন থেকে শুরু করে কোনো সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন করতে পারেনি দলটি। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনিপির মূল কমিটি গঠনও থমকে রয়েছে। কার্যক্রমেও তেমন গতি নেই। সব মিলে সংগঠন শক্তিশালী করাই বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এক তরফা নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় এলে সরকার পতনের এক দফা টার্গেট নিয়ে এগোয় বিএনপি। এ লক্ষ্যে সে বছর আন্দোলনও করেছিলো। কিন্তু লাভ হয়নি। এর পরের বছর পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়া আবারও দীর্ঘমেয়াদে রাজপথে নামে বিএনপি। কিন্তু ফল ছিলো শূন্য। সঙ্গত কারণে সংগঠনকে শক্তিশালী করে আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। এর অংশ হিসেবে ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ দলের জাতীয় কাউন্সিলও করে। কাউন্সিলে দলকে শক্তিশালী করতে এক নেতার এক পদের বিধান রেখে খসড়া গঠনতন্ত্র অনুমোদন দেয়া হয়। মন্ত্রণালয় ভিত্তিক ২৬টি উপকমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। দলের সদস্য ফি ৫ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকা, মাসিক চাঁদা ৬ মাস না দিলে পদ স্থগিত, এক বছর না দিলে পদ বাতিল, টানা দুই বছর চাঁদা না দিলে তার প্রাথমিক সদস্য পদ স্থগিত, তিন বছর না দিলে প্রাথমিক সদস্য পদ বাতিল করাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয় কাউন্সিলে। এছাড়া স্বল্পসময়ের মধ্যে তৃণমূল বিএনপিকে শক্তিশালী করতে নেয়া হয় নানামুখী পদক্ষেপ। অঙ্গ দলগুলোকে পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।

কাউন্সিলের সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,গত ৬ আগস্ট বিএনপির ৫০২ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি, ১৭ সদস্যের স্থায়ী কমিটি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের ৭৩ জন সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়। এখনও স্থায়ী কমিটির তিনটি পদ ফাঁকা আছে। ছাত্র ও সহ-ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও যুব বিষয়ক সম্পাদক এখনও ঠিক করতে পারেনি। এছাড়া জাতীয় কাউন্সিলের এক বছরেও দলীয় গঠনতন্ত্র বই আকারে প্রকাশ করতে পারেনি বিএনপি। কবে নাগাদ প্রকাশ হবে তা দলের কেউ স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না। গঠনতন্ত্র প্রকাশ না হওয়ায় বিএনপির নির্বাহী কমিটি কত সদস্যবিশিষ্ট, নতুন কী সংশোধনী আনা হলো- এসব ব্যাপারে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও আছেন অন্ধকারে। কার্যত গঠনতন্ত্র ছাড়াই চলছে বিএনপি। এছাড়া নানামুখী পদক্ষেপ নেয়ার পরেও এক নেতার এক পদের বিধান কার্যকর করতে পারেনি দলটি। দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ৬১ নেতা একাধিক পদ ধরে রেখেছিলেন। ‘এক নেতার এক পদ’ বিধানের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ৩০ জন নেতা একাধিক পদ ছেড়ে দেন। ১৫ জন মৌখিকভাবে পদ ছাড়ার ঘোষণা দিলেও এখন তারা উল্টোসুরে কথা বলছেন। তারা এখন নতুন করে ওই পদের জন্য তৎপরতা শুরু করেছেন। বাকি ১৬ জন কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে পাত্তাই দেননি। কাউন্সিলে বিষয়ভিত্তিক অর্থ ও পরিকল্পনা, জনস্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, প্রতিরক্ষা, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি, আইনশৃঙ্খলা ও বিচার ব্যবস্থা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, গবেষণা, শিল্প ও বাণিজ্য, স্থানীয় সরকার ও পল্লি উন্নয়ন, নারী ও শিশু, যুব উন্নয়ন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, শ্রম ও প্রবাসী কল্যাণ, যোগাযোগ ও গণপরিবহন, এনার্জি ও খনিজ সম্পদ, মানবাধিকার, বন্যানিয়ন্ত্রণ, মুক্তিযুদ্ধ, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, মুক্তিযুদ্ধ, ক্ষুদ্রঋণ, সুশাসন ও জনপ্রশাসন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, জাতীয় সংহতি ও এথনিক মাইনোরিটি নামে ২৬টি উপকমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত ছিল। এক একটি কমিটিতে ১২ জন সদস্য রাখারও সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এখনও এই কমিটি গঠন হয়নি। আর সহসা হওয়ার সম্ভাবনাও কম। এছাড়া মাসিক চাঁদার বিষয়ে যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো সে সবও বাস্তবায়ন হয়নি বললেই চলে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের সাংগঠনিক জেলাগুলোর পুনর্গঠন প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে বিএনপি চেয়ারপারসন সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিলেও তা এগুচ্ছে একাবেরই মন্থর গতিতে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ জেলা কমিটি গঠন সম্ভব হলেও অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও এক নেতা একাধিক পদে থাকার আগ্রহের কারণে অন্য কমিটিগুলো গঠন বিলম্ব হচ্ছে। আর বিএনপির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ঢাকা মহানগরকে দুই ভাগে ভাগ করার সব সিদ্ধান্ত নেয়ার পরেও তা কার্যকর করা যাচ্ছে না। এছাড়া জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, শ্রমিক দল ও জাসাসের কমিটি দেয়া হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হয়েছে আংশিক কমিটি। এই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার জন্য যে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে তা নিয়ে সুপার ফাইভ বা সেভেনের নেতারা তেমন কার্যকরী ভূমিকা নিচ্ছেন না। ফলে বেঁধে দেয়া সময় পার হওয়ার পরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হচ্ছে না।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার চেয়ে এখন ঘর গোছানোটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিএনপির। সংগঠন শক্তিশালী করার সব কাজই চলছে। কিন্তু এর গতি খুবই মন্থর। গতি বাড়ানোর বিষয়টিকে এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত।

এ বিষয়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, তৃণমূল পুনর্গঠনের কাজ পুরোদমে চলছে। ক্ষমতাসীন দলের বাধাসহ কিছু জটিলতার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। তারপরও কাজ চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সব ইউনিটের কমিটি গঠন শেষ করা সম্ভব হবে।