গোলমালের জের : মুজিবনগরে লেবারকে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট করে হত্যা!

 

ভাঙচুর শেষে ট্রাকে বিক্ষুব্ধ জনতার আগুন : ঘাতক চালককে পুলিশে দিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি

মহাসিন আলী/শেখ সফি: চালক ও হেলপারের ক্ষোভের আগুনে মুজিবনগর উপজেলার যতারপুর-কোমরপুর গ্রামের মাঝে আবুল হায়াত প্রিক্যাডেট স্কুলের কাছে কলাবোঝাই ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা গেছে কলা কাটা লেবার আরশাদ আলী (৪৫)। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা ভাঙচুর শেষে ট্রাকটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া স্থানীয় জনতা ট্রাকচালককে আটক করে মেহেরপুর সদর থানা পুলিশে দিয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে। নিহত আরশেদ আলী মহাজনপুর গ্রামের খাঁপাড়ার মৃত আক্কাস আলীর ছেলে।

নিহতের ছেলে বুলবুল হোসেন জানান, ট্রাকে কলাবোঝাই করা নিয়ে ঘটনার পূর্বে কলা কাটা লেবার আরশাদ আলীর সাথে ট্রাকচালক (খুলনা-মেট্রো-ড-১১-০০-৭০) হাফিজুল ও হেলপারের কথা কাটাকাটি হয়। তারা পরিকল্পিতভাবে ট্রাক থেকে তার পিতাকে হাত ধরে ট্রাকের নিচে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছে।

মহাজনপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমাম হোসেন মিলু প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, মহাজনপুর থেকে কলা নিয়ে ওই ট্রাক বোঝাই করতে মেহেরপুর সদর উপজেলার আমদহ ইউনিয়নের ইসলামনগর মাঠে যাওয়ার পথে ড্রাইভার ও হেলপার পরিকল্পিতভাবে লেবার আরশাদ আলীকে ট্রাক থেকে ফেলে দেয়। এ সময় ট্রাকের পেছনের চাকা তার মাথার ওপর দিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এরপর ট্রাকের চালক ট্রাক নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা ট্রাকটি ধাওয়া করে ও মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের নূরপুর গ্রামের মধ্যে আটক করে। তারা ট্রাকটি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া ট্রাক চালককে আটক করে।

মেহেরপুর ফায়ার সার্ভিসের ওয়ার হাউস ইন্সপেক্টর সেলিম রেজা জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করি। তবে ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই ট্রাকের আগুন নিভিয়ে ফেলে স্থানীয়রা। তবে বিক্ষুব্ধ জনতা ট্রাকের সামনের কিছু অংশ ভাঙচুর করে।

মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকবাল বাহার চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন বিক্ষুব্ধ জনতা ট্রাকটি ভাঙচুর করে ও আগুন ধরিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। তারা মেহেরপুর শহরের কলেজপাড়ার মহিরউদ্দিনের ছেলে ট্রাকচালক হাফিজুলকে (২২) আটক করে পুলিশে দেয়। পুলিশ ট্রাকটি উদ্ধার করে থানায় নেয়। তিনি আরো জানান, গাড়ির হেলপারকে আটকের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। অভিযোগ পেলে চালক ও হেলপারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মহাজনপুর গ্রামের খাঁপাড়ার মৃত আক্কাস আলীর ছেলে নিহত আরশাদ আলী ছিলেন একপুত্র ও ২ কন্যাসন্তানের জনক। প্রায় ৮ মাস আগে তার স্ত্রী নার্গিস স্ট্রোক করে মারা যান। ২ মেয়ে বিবাহিতা। একমাত্র ছেলে বুলবুল বিবাহিত এবং পেশায় একজন লেবার।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিহতের লাশ মুজিবনগর থানায় রয়েছে। সেখানে লাশ ঘিরে স্বজনদের আহাজারি চলছে। আজ মঙ্গলবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মেহেরপুর হাসপাতালমর্গে পাঠানো হবে।