গুলশান হামলার টাকার উত্স স্বর্ণ চোরাচালান : হামলার তত্ত্বাবধান করে দাওলাতুল ইসলাম

 

স্টাফ রিপোর্টার: গুলশানে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় স্বর্ণ চোরাচালানের টাকা থেকে অর্থায়ন করা হয়েছে। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলোর মেধাবী ও দক্ষ কর্মীদের নিয়ে গঠিত দাওলাতুল ইসলাম বাংলাদেশ (ডিআইবি) হলি আর্টিজানে হামলা চালিয়েছে। আর এ হামলার পেছনে জঙ্গিদের থাকা-খাওয়া ও অস্ত্র ক্রয়ের খরচ যোগানো হয়েছে স্বর্ণ চোরাচালানের টাকা থেকে। কয়েক দফায় অর্থায়নের মধ্যে ৫০ লাখ টাকার একটি চালান হুন্ডির মাধ্যমে ডিআইবি’র কাছে এসেছে বলে গোয়েন্দা সংস্থা প্রমাণ পেয়েছে। গত বুধবার রাজধানীর শাহআলী থানা এলাকা থেকে ডিআইবি’র ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান সিফাত দাওলাতুল ইসলাম বাংলাদেশের ওয়েবপেজ আত-তামকীনের প্রধান এডমিন। গতকাল তাদের বিরুদ্ধে শাহআলী থানায় র্যাবের পক্ষ থেকে অস্ত্র আইন, বিস্ফোরক আইন ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার আইনে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ৱ্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে.কর্নেল আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই সংগঠনের সদস্যরা খুবই প্রশিক্ষিত ও দক্ষ। এরা আগে তারা হিযবুত তাহরীর, জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ, হরকাতুল জিহাদ ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (আনসার আল ইসলাম) সদস্য ছিলো। এসব সংগঠন থেকে বেছে বেছে সদস্য নির্বাচন করা হয়েছে। ৩ থেকে ৬ জন পর্যন্ত নিয়ে একেকটি গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। এক গ্রুপের সঙ্গে অপর গ্রুপের কোনো পরিচয় নেই।

আবুল কালাম আজাদ আরো বলেন, প্রত্যেক সদস্যের নাম-পরিচয় গোপন রেখে ভুয়া পরিচয়ে  তারা গ্রুপ গঠন করে। সংগঠনের নিয়ম হচ্ছে, কারো নামের বাইরে তার বাবা-মার পরিচয়, বাড়ির ঠিকানা এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিচয় সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন কেউ করতে পারবে না। এতে করে অপারেশন পরিচালনার সময় কেউ ধরা পড়লে গোয়েন্দারা তার কাছ থেকে কোনো তথ্য উদ্ধার করতে পারবে না।

 

র্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, গ্রেফতারকৃত সদস্যদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলায় তাদেরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এর আগে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে,                গুলশানে হামলা চালানো হয়েছে দাওলাতুল ইসলাম বাংলাদেশের ব্যানারে। এই ব্যানারে তারা হলি আর্টিজানসহ ১১টি হামলা ও তার দায় স্বীকার করেছে। আত-তামকীন ওয়েবপেজের মাধ্যমে তারা আইএসের বার্তা সংস্থা ‘আমাক’ এর সঙ্গে যোগাযোগ করে। র্যাব আত-তামকীন ওয়েবপেজ যাচাই করে ১১ টি হামলার দায় স্বীকার করার তথ্য পেয়েছে। আটক হওয়া ৬ জনের মধ্যে ৫ জন দাওলাতুল ইসলামের আত্মঘাতী টিমের সদস্য বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছিল তারা। স্বর্ণ চোরাচালানের মাধ্যমে তাদের আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করা হতো। তাদের থাকা-খাওয়া ও প্রশিক্ষণের খরচ আসে স্বর্ণ চোরাচালানের টাকা থেকে। এজন্য তাদেরকে চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৱ্যাবের গোয়েন্দা শাখার একটি সূত্র জানায়, সংগঠনটির মূল উদ্যোক্তা সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক। তার সাথে হিযবুত তাহরীরের অপারেশন কমান্ডার তামিম আহমেদ চৌধুরীর সম্পৃক্ততা রয়েছে। এই দু’জন গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার মূল পরিকল্পনাকারী। শোলাকিয়ায় হামলার দিন তামিম আহমেদ চৌধরী ঘটনাস্থলের আশেপাশে অবস্থান করছিল। এই দুই জনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের যোগাযোগ হয়েছিল কি-না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সংগঠনটি গঠন করা হয়েছে অনেকটা আইএসের আদলে বলে ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন। গুলশানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে একটি শাদা কাপড়ের রুমাল উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় জব্দ তালিকায় ১ নম্বর আলামত হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে ওই শাদা কাপড়ের রুমালকে। রুমালে লেখা ছিলো ‘দাওলাতুল ইসলাম বাংলাদেশ টিকে থাকবে’।