গুপ্তহত্যার সব তথ্য আমার কাছে আছে : প্রধানমন্ত্রী

 

স্টাফ রিপোর্টার: সাম্প্রতিক সময়ের গুপ্তহত্যার ঘটনায় দুটি রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না, আমি হেড অব দ্য গভর্নমেন্ট (সরকারপ্রধান)। সব তথ্য নিশ্চয়ই আমার কাছে আছে। সরকার বসে নেই। গোয়েন্দা সংস্থাও বসে নেই। তদন্তের স্বার্থে হয়তো সব কথা, সব তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। কিন্তু সূত্রটা জানা যায়। আর সেই সূত্র ধরেই আমরা কথা বলি।’ জাপান, বুলগেরিয়া ও সৌদি আরব সফর নিয়ে গতকাল বুধবার দুপুরে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চট্টগ্রামে এসপির স্ত্রীসহ গুপ্তহত্যাগুলোর ঘটনায় রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়ার কারণে মূল অপরাধীরা আড়ালে চলে যায়া। সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা এ ধরনের কথা বলেন, তারা যদি তথ্য পেয়ে থাকেন, তাহলে তা প্রকাশ করুন। যদি আপনারা মনে করেন আমরা শুধু রাজনৈতিক কারণে বলছি, তাতে জঙ্গিরা পার পেয়ে যাচ্ছে। তাহলে সেই পার পেয়ে যাওয়া জঙ্গিরা কারা? তাদের পরিচয় নাম-ঠিকানা পেয়ে থাকলে আমাদের জানান। জঙ্গি জঙ্গিই। সে যে দলেরই হোক, তারা রেহাই পাবে না। এই আশ্বাস আমি দিতে পারি। সরকার বসে নেই, গোয়েন্দা সংস্থাও বসে নেই।’

পুলিশ পাহারা দিয়ে জঙ্গিদের কারা মিছিল করিয়েছে, তা ভুলে গেলেন?
সাম্প্রতিক গুপ্তহত্যার ঘটনায় দুটি রাজনৈতিক দল (বিএনপি-জামায়াত) সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন নাম নিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করলেও এদের হত্যার প্রক্রিয়া একই রকম। বাংলাদেশে এ ধরনের জঙ্গি তৎপরতা আমরা আগেও দেখেছি। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের সাথে কোনো না কোনোভাবে দুটি রাজনৈতিক দলের যোগসূত্র রয়েছে। এখন যারা ওই দুটি রাজনৈতিক দলকে বাঁচাতে চায়, যারা তাদের রক্ষা করতে চায়, তাদের অপকর্মগুলো ঢাকতে চায়, তারাই এ ধরনের প্রশ্ন উঠায়। এখন আমি যদি এ কথা বলি, তাহলে তাদের কী বলার আছে? সেই একাত্তর থেকে শুরু করেন। আমরা যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করলাম, তখন আমাদের কী বলা হয়েছ? কারা তাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে? একসময় তারা বাংলা ভাইকে মিডিয়ার সৃষ্টি বলেছে। কারা ওই সময় পুলিশ প্রহরা দিয়ে জঙ্গিদের দিয়ে মিছিল করিয়েছে, সেগুলো কি আপনারা এতো তাড়াতাড়ি ভুলে যান? বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিদেশে চাকরি দিয়ে কারা প্রতিষ্ঠিত করেছে? ইনডেমনিটি দিয়ে বিচার বন্ধ করেছে কারা সেই যোগসূত্র খুঁজুন। তাদের সম্পর্কে এতো ভালো কথা বলার কি যৌক্তিকতা আছে আমি বুঝি না। আবার অনেকে ওই দলগুলোকে বাঁচাতে চায়।’

জয় কী অপরাধ করেছে? প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমার ছেলে জয় কী অপরাধ করেছে? আমেরিকায় তদন্তে বেরিয়ে এসেছে কারা এফবিআই কর্মকর্তাকে টাকা দিয়ে কিনেছে। ওই ঘটনায় জড়িত এক বিএনপি নেতার নাম বেরিয়ে আসে। এর মধ্যে দুই স্বনামধন্য সাংবাদিকও রয়েছেন। এর মধ্যে একজন আছেন ‘লাল গোলাপে শুভেচ্ছা নিয়ে যিনি সব সময় থাকেন’। তাকে গ্রেফারের পর আপনাদের অনেকে আকুল-ব্যাকুল হয়ে তার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে দিয়েছেন। তার মানে জয় হত্যাচেষ্টার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সাথেও আপনারা একাত্মতা প্রকাশ করতে পারেন। জয়কে শেষ করে দেয়ার জন্য আমেরিকায় গিয়েও ষড়যন্ত্র করছে তারা। তাই এই গুপ্তহত্যার সাথে যদি তাদের যোগসূত্র পাই, তাহলে কি তা মিথ্যা? যারা ঘোষণা দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করে, তারা এর সাথে জড়িত হবে না, এ ধারণা আপনাদের কোত্থেকে আসে? তার মানে এ ধরনের একটি সন্ত্রাসী দলকে জীবিত রেখেই দিতে হবে! সব সময় বাংলাদেশের মানুষকে আশঙ্কার মধ্যে রাখতে হবে!’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যখন কথা বলি, মনে রাখবেন অমূলক কথা বলি না। একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না, আমি হেড অব দ্য গভর্নমেন্ট। আমার কাছে নিশ্চয় সব তথ্য আছে। হয়তো তদন্তের স্বার্থে সব কথা প্রচার করা যাবে যাবে না, প্রকাশ করা যাবে না। কিন্তু সূত্রটা জানা যায়। আর সেই সূত্র ধরেই আমরা কথা বলি। যারা আড়াল করার কথা বলেন, তারা প্রকৃত জঙ্গিদের রক্ষা করতে চান। জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করতে চান।’

দুটি দল কৌশল পাল্টে গুপ্তহত্যা করছে? প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুটি রাজনৈতিক দল প্রকাশ্যে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে জনরোষে পড়ে কৌশল পাল্টেছে। তারা এখন ‘সফট টার্গেট’ ধরে গুপ্তহত্যা শুরু করেছে। সরকার তাদের বিরুদ্ধে করণীয় ঠিক করছে। গোয়েন্দা সংস্থাও যথেষ্ট তৎপর রয়েছে অপরাধীদের ধরার জন্য। ধর্মের নামে যারা হত্যা করে, তারা কোনো ধর্মেরই নয়। তিনি বলেন, ‘দেশবাসীর প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, গুপ্তহত্যাকারীদের খুঁজে বের করুন। কারা পরিকল্পনা করছে দেখুন। তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিন। সবাই সচেষ্ট হলে এদের প্রতিরোধ করা সম্ভব।’

অতীতেও নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে? ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে দলীয় প্রতীক কোনো বিষয় নয় বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মূলত মেম্বার পদপ্রার্থীদের মধ্যে সহিংসতার ঘটনা বেশি ঘটেছে। দেশে অতীতেও এ ধরনের নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একসময়ে সৌদি আরবে শুধু শ্রমিক পাঠানোর বিষয়টিকেই গুরুত্ব দেয়া হতো। এখন সে পরিস্থিতির গুণগত পরিবর্তন হয়েছে। সেখানে ২০ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছেন। এখন তারা আকামা পরিবর্তনের (নিয়োগকর্তা ও শহর পরিবর্তন) সুযোগ পান। আগে এটা সম্ভব হতো না। এছাড়া এবার নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় নিয়ে সৌদি আরব সরকার নারী শ্রমিকদের সাথে স্বামী বা বাবাকে নিতে অনুমতি দিয়েছে। আর বাংলাদেশেও এখন কর্মী প্রয়োজন। তাই শ্রমিক পাঠানোর চেয়ে দেশে সৌদি বিনিয়োগের ব্যাপারে জোর দেয়া হচ্ছে। সৌদি আরব সফরের সময়ে সৌদি বাদশাহ বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সৌদির আল বাউনি গ্রুপের একটি প্রতিনিধিদল ঈদুল আজহার পর বিনিয়োগের লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসবে। সৌদি আরবের নেতৃত্বে সন্ত্রাসবাদী সামরিক জোটে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবিরোধী যেকোনো উদ্যোগে বাংলাদেশ সহযোগিতা করবে। এই জোটে এখন পর্যন্ত ৪০টি দেশ অংশ নিয়েছে।