গাড়াবাড়িয়ায় জাম পাড়তে গিয়ে বিদ্যুতস্পৃষ্টে মৃত্যু : শ্বশুরের লাশ দাফনের পর জনরোষে জামাই

 

স্টাফ রিপোর্টার: যে জামাই বাড়ি যাওয়ার জন্য জাম পাড়তে উঠে বিদ্যুত স্পৃষ্টে মারা গেলেন শ্বশুর। শ্বশুরের লাশ দাফনের কয়েক ঘণ্টার মাথায় সেই জামাই তালাক দিলেন শ্বশুরের মেয়েকে। অবশ্য বিচ্ছেদের আগে শ্বশুরবাড়ি চুয়াডাঙ্গার গাড়াবাড়িয়ায় জনরোষে পড়ে পিটুনির শিকার হতে হয়েছে জামাই বকুলকে। সে হানুরবাড়াদীর আলম হোসেনের ছেলে। বকুলের আচরণে জনরোষ এতোটাই তীব্র ছিলো যে, পুলিশও তাকেসহ তার সাথে আটকেপড়া ব্যক্তিদের উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়। ঘটনটি ঘটে গতকাল সোমবার।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের গাড়াবাড়িয়া ছাগলাপাড়ার আবুল মণ্ডলের মেয়ে শিউলীর সাথে কয়েক বছর আগে বিয়ে হয় হানুরবাড়াদীর বকুলের। বিয়ের সময় যৌতুকের দাবি না থাকলেও পরে মোটরসাইকেল দাবি করে বসে। এ দাবিতে মাঝে মাধ্যেই স্ত্রী শিউলীকে নির্যাতন করতো বকুল। এরই মাঝে শিউলীর কোলজুড়ে সন্তান আসে। তার বয়স এখন দু বছর। গতপরশু শিউলীকে তার স্বামী বকুল নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে বলে খবর পান শিউলীর পিতা আবুল মণ্ডল। এ খবর পেয়ে তিনি গতকাল সকাল থেকেই জামাই বাড়ি হানুরবাড়াদী যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। আমগাছ থেকে আম পাড়েন, কাঁঠালগাছ থেকে পাড়েন কাঁঠাল। এরপর ওঠেন জামগাছে। জামগাছে উঠে বিশেষভাবে তৈরি আখড়া দিয়ে জাম নিজের কাছে নিতে গেলে পেছনে বিদ্যুতের মেন তারে লেগে যায় আংটা। বিদ্যুতস্পৃষ্টে গাছেই আটকে থাকেন। গাছের নিচে থাকা লোকজন দৃশ্য দেখে নিরুপায় হয়ে পড়েন। ইট-পাটকেলও ছুড়তে থাকেন কেউ কেউ। এক পর্যায়ে লিটন নামের একজন উথলী পল্লি বিদ্যুত অফিসে খবর দিয়ে বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ করিয়ে উদ্ধার করেন আবুল মণ্ডলকে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। মারা যান আবুল মণ্ডল। লাশ নেয়া হয় বাড়িতে। শোকের ছায়া নেমে আসে। যে মেয়েকে দেখতে যাওয়ার জন্য জামপাড়তে উঠেছিলেন গাছে, সেই মেয়ে ও জামাইসহ সকলেই ছুটে আসে শোকার্ত বাড়িতে। বিকেলে দাফন সম্পন্ন করা হয়। এর পরপরই শিউলীকে তার স্বামী বকুল হানুরবাড়াদি ফিরে যাওয়ার জন্য বলে। পিতার শোকে কাতর শিউলী তখনও কাঁদছে। এ অবস্থায় বকুল চুল ধরে শিউলকে বাড়ির বাইরে নেয়ার চেষ্টা করে। দৃশ্য দেখে স্থানীয়রা ক্ষোভের আগুনে জ্বলে ওঠে। কালবিলম্ব না করে উপস্থিত জনতা জামাই বকুলকে চড় থাপ্পড় দিয়ে বলে, দফায় দফায় নির্যাতন করো। তাতেও তোমার খায়েশ মেটিনি। পিতার শোকে কাতর মেয়েটাকে জনসম্মুখে মারছো! চড়থাপ্পড়ের পর বকুল ফিরে যায়। তার পিতা অবশ্য শোকার্ত বাড়িতে থেকেই যায়। বাড়ি ফিরে বকুল দুটি মোটরসাইকেলযোগে কয়েকজনকে সাথে নিয়ে শোকার্ত শ্বশুরবাড়িতে হম্বিতম্বি করতে শুরু করে। জনগণ আবারও ফুঁসে ওঠে। তখন কয়েকজন পালিয়ে যায়। বকুলকে মারছে দেখে তার পিতা এগিয়ে যায়। তাকেও পিটুনির শিকার হতে হয়। এক পর্যায়ে তারা ৪ জন একটি ঘরের মধ্যে উঠে বসে। ঘরে ওঠার পর অবশ্য আর মারা হয়নি।

অপরদিকে হানুরবাড়াদীর লোকজন পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ গাড়াবাড়িয়ায় পৌঁছুলে জনগণ বাধা হয়ে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত পুলিশকে ব্যর্থ হয়ে ফিরতে হয়। অবশেষে সালিসে শিউলীর সাথে বকুলের বিচ্ছেদ ঘটানো হয়। বকুল তার শ্বশুরের নিকট থেকে বিগত দিনে আদায় করা ৮০ হাজার টাকা এবং সন্তানের খোরপোশ বাবদ প্রতি মাসে ৫শ টাকা করে দেবে শর্তে বিচ্ছেদ ঘটানোর পর তাকেসহ তার সাথে আটকদের ছেড়ে দেয়া হয়। ঘটনাটি এলাকায় আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। শিউলী সকালে হারালো পিতাকে। বিকেলে ঘটলো স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ।