গাজায় এবার জাতিসংঘের আশ্রয় কেন্দ্রে হামলা

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর: এবারজাতিসংঘের জরুরি আশ্রয় কেন্দ্রে হামলা চালালো ইসরাইল। গতকালবৃহস্পতিবার ইসরাইলিসেনাদের বর্বর এ হামলায় ২০ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও প্রায় ২০০ জন গুরুতর আহতহয়েছেন। হতাহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। জাতিসংঘ বলেছে, গাজায় ইসরাইলিহামলার স্বাধীন তদন্ত করবে সংস্থাটি। এ লক্ষ্যে সংস্থাটির মানবাধিকারকাউন্সিলে ইসরাইলের ‘যুদ্ধাপরাধ’ তদন্ত বিষয়ক একটি খসড়া প্রস্তাবে ২৯টি দেশস্বাধীন তদন্তের পক্ষে ভোট দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এর বিপক্ষে ভোটদিয়েছে। যুদ্ধবিরতি ইস্যু নিয়ে মধ্যপ্রাচ্য সফরে আছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বানকি মুন ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। যদিও মুন ও কেরির যুদ্ধবিরতিরআহ্বান উপেক্ষা করে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। এতে গত ১৭ দিনে নিহতেরসংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৭শ’। এছাড়া আহত হয়েছেন প্রায় সাড়ে চার হাজারফিলিস্তিনি। আল মেজান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছেইসরাইলি হামলায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের চেয়ে শিশুরাই বেশি নিহত হয়েছে।

বৃহস্পতিবারগাজান সিটির বেইত হানুনে জাতিসংঘের একটি স্কুলে হামলা চালায় ইসরাইলিসেনারা। যেখানে গাজা থেকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে আসা অসহায় ফিলিস্তিনিরা আশ্রয়নিয়েছিলেন। ইসরাইলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে ওই স্কুলগুলো আশ্রয় কেন্দ্রহিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। গাজার আল-জাজিরা প্রতিনিধি নিকোল জোহানস্টনজানিয়েছেন, বেইত হানুনে জাতিসংঘের স্কুলটিকে বৃহস্পতিবারই জরুরিভিত্তিতেআশ্রয় কেন্দ্রে রূপ দেয়া হয়েছিলো। সেখানে ইসরাইলি সেনাদের বোমা হামলায় ২০ জননিহত ও ২০০ জন আহত হয়েছেন। গাজায় জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থাইউএনআরডব্লিউএর প্রধান রবার্ট টার্নার বলেন, ইসরাইল এ হামলার আগে কোনোসতর্ক বার্তাও দেয়নি। এর আগে বৃহস্পতিবার ভোর রাতে ইসরাইলি ট্যাংকের গোলারআঘাতে ১৬ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের ছয়সদস্য রয়েছেন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান।এভাবে পরবর্তী আরও হামলায় হতাহতের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

স্বাধীন তদন্তবিষয়ে ভোটাভুটি: গাজায় ইসরাইলি হামলার স্বাধীন তদন্ত শুরু করতে বুধবারভোটগ্রহণ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়কপ্রধান নাভি পিল্লাই কাউন্সিলের এক জরুরি বৈঠকে গাজায় ইসরাইলি সেনাবাহিনীরহামলাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য করা হতে পারে এমন সতর্ক করার কয়েক ঘণ্টা পরজেনেভায় এই ভোটগ্রহণ করা হয়। ফিলিস্তিনের আহ্বানে একটি খসড়া প্রস্তাবেরআওতায় কাউন্সিলের ৪৭ সদস্য এই ভোটে অংশ নেন। ভোটাভুটিতে পর্যবেক্ষকেরভূমিকায় ছিলো জাতিসংঘ। ২৯টি দেশ ভোট দিয়েছে স্বাধীন তদন্তের পক্ষে। ১৭টি দেশভোট দেয়া থেকে বিরত ছিলো, যার বেশিরভাগই ইউরোপীয় ইউনিয়নের। স্বাধীন তদন্তেরবিপক্ষে ভোট দিয়েছে শুধু যুক্তরাষ্ট্র। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়এক বিবৃতিতে স্বাধীন তদন্তের সিদ্ধান্তকে হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছে।

হামাসনেতা খালেদ মেশাল বলেছেন, ইসরাইলের বিরুদ্ধে তার যোদ্ধারা এগিয়ে আছে।গাজায় বসবাসকারী ১৮ লাখ ফিলিস্তিনির ওপর থেকে ইসরাইলকে তাদের আরোপিতপ্রতিবন্ধকতা শিথিল করতে হবে এমন শর্ত উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, তিনি মানবিককারণে যুদ্ধবিরতিতে সমর্থন জানিয়েছেন।আল মেজান সেন্টার ফর হিউম্যানরাইটসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গাজায় ইসরাইলি হামলায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদেরচেয়ে শিশুরাই বেশি নিহত হয়েছে। ওই পরিসংখ্যানে ১৩২ শিশুর বিস্তারিত পরিচয়প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইসরাইলি হামলায় নিহত শিশুদের মধ্যে একইপরিবারের ১৮ জন শিশু নিহত হওয়ার মতো ঘটনাও রয়েছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে এমনএকটি ঘটনা ঘটেছে ২০ জুলাই। তাদের মধ্যে একজন ছয় মাস বয়সী শিশু এবং দুজন দুইবছর বয়সী শিশুও রয়েছে। পরদিন ২১ জুলাই অপর একটি হামলায় একই পরিবারের পাঁচশিশু নিহত হয়েছে।

যেভাবে ইসরাইলি হামলার শুরু: ইসরাইলি তিন কিশোরকেঅপহরণ ও হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৮ জুলাই থেকে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে হামলাচালিয়ে আসছে ইসরাইল। হামাসই ওই ঘটনা ঘটায় বলে দাবি করে ইসরাইল। তবে হামাসতা অস্বীকার করে। পরে ফিলিস্তিনি এক কিশোরকে একইভাবে হত্যা ও অপহরণের পরউত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। এরপর গাজা থেকে রকেট ছোড়া হচ্ছে এমন দাবি তুলে ‘অপারেশন প্রটেক্টিভ এজ’ নামে এ হামলা শুরু করে ইসরাইল। এর আগে ২০১২ সালেরনভেম্বরে গাজায় অভিযান চালায় ইসরাইল। তখন ৮ দিনের মাথায় মিসরের মধ্যস্থতায়যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদিদের জন্য ইসরাইলরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে ফিলিস্তিনিদেরসংগ্রামের শুরু। এরপর থেকে নিয়মিত রক্ত ঝরলেও আজও তাদের সেই স্বপ্ন পূরণহয়নি।