গাংনী হাসপাতালের জেনারেটর নামেই চলে

 

গাংনী প্রতিনিধি: দীর্ঘদিন পরে চালু হয়েছে মেহেরপুর গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তথা হাসপাতালের জেনারেটর। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে বেশ গর্ব প্রকাশ করে। হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার দৈন্যদশার মাঝে জেনারেটর চালু কিছুটা স্বস্তির খবর। বিদ্যুত না থাকলেও লাইট ও ফ্যান চলবে। রোগীদের কাছে এটি যেনো সোনার হরিণ হাতে পাওয়ার মতোই। কিন্তু এই জেনারেটর স্বস্তি নাকি আরও অস্বস্তি বৃদ্ধি করেছে তা নিয়ে কর্তৃপক্ষ ব্যাপক সমালোনার মুখে পড়েছেন। নামেই চলছে জেনারেটর? দিনের আলোয় যাই হোক, রাতের আধারে যে জেনারেটর চানালো হচ্ছে না তা স্পৃষ্ট করেই জানালেন হাসপাতালের কয়েকজন নার্স ও রোগীর স্বজনেরা।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে লোডশেডিং। আশেপাশের দোকানপাট ও বাড়িঘরে বিকল্প লাইট জ্বললেও ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছিলো হাসপাতালে। প্রচণ্ড গরমে রোগীদের প্রাণ যেনো ওষ্ঠাগত। কিন্তু চালু করা হয়নি জেনারেটর। অবশ্য কিছুক্ষণ পরে বিদ্যুত চালু হয়। সাড়ে ৭টার দিকে আবারও লোডশেডিং। কিন্তু জেনারেটরের অবস্থা একই। বিষয়টির খোঁজ নিতে হাসপাতালে গেলে হাসপাতালের কর্মরতরাই কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অবশ্য কিছুক্ষণ পরে হাসপাতালের হিসাব রক্ষক জেনারেটর চালু করেন।

লোডশেডিংয়ের সময় জরুরি বিভাগে রোগী দেখছিলেন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার শরিফুল ইসলাম। তার টেবিলে মিটমিট করে জ্বলছিলো একটি ছোট্ট চার্জার লাইট। হাসপাতালের সার্বিক পরিবেশেই মতোই অসহায়ভাবে মৃদ জ্বলছিলো লাইটটি। জানতে চাইলে শরিফুল ইসলাম বলেন, এ লাইট দিয়ে কিছুই দেখা যায় না। মন বোঝানোর জন্য জ্বালানো হয়। কোনো রোগী আসলে তাদের লাইট ও  মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। জখম ও কাটাছেড়ার সেলাইসহ গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাও চলে রোগীর স্বজনদের মোবাইলের আলোয়। অপারেটর না থাকায় জেনারেটর চলছে না বলে জানান শরিফুল।

হাসপাতালের দোতালায় মহিলা ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা মেলে আরও করুণ চিত্র। নারী ও শিশু রোগীরা গরমে ছটফট করছেন। হাত পাখা না থাকায় কুড়িয়ে পাওয়া কিছু কাগজ দিয়ে অনেকই বাতাস করছেন। নিপোর্ট সেন্টারে অবস্থিথ পুরুষ ওয়ার্ডের অবস্থাও একই। পুরুষ ওয়ার্ডে অবশ্য জেনারেটরের সংযোগই দেয়া হয়নি।

হাসপাতালের কয়েকজন নার্স জানান, মহিলা ওয়ার্ডে জেনারেটর লাইন থাকলেও নার্স ডিউটি কক্ষে নেই। গত এক মাস ধরে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানো হলেও তিনি আশ্বাসের মধ্যেই আটকে রয়েছেন। দিনে মাঝে মাঝে জেনারেটর চললেও গুরুত্বপূর্ণ ওই কক্ষে কর্মরত নার্সরা সেসুবিধা পাচ্ছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাস খানেক আগে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি জেনারেটর মেরামতের মধ্যদিয়ে চালু করে কর্তৃপক্ষ। তখন থেকেই প্রতিদিনই জেনারেটরের জ্বালানি বাবদ বিল করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে ২৪ ঘন্টায় কতোটুকু সময় জেনারেটর চলছে তার হদিস নেই। মাধেমধ্যে এটি চালু হলেও তা আবার বেশি সময় ধরে নয়।

এ বিষয়ে হাসপাতালের হিসাব রক্ষক লিটন হোসেন জানান, জেনারেটরের জন্য এখনো কোনো অর্থ বরাদ্দ আসেনি। কর্তৃপক্ষ রোগীদের কথা চিন্তা করে বিশেষ ব্যবস্থায় জেনারেটর চালাচ্ছে। তবে নির্ধারিত জনবল না থাকায় রাতে জেনারেটর চালানো সমস্যা হচ্ছে। রাতে জেনারেটর চালানোর জন্য নির্ধারিত কাউকে নিয়োজিত করার চিন্তা-ভাবনা চলছে।

তবে বিষয়টি জানতে চেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. অপুর্ব কুমার সাহার মোবাইলে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। হিসাব রক্ষক লিটন হোসেন জানান, জনবলের অভাবে জেনারেটর চালানো অসুবিধা হচ্ছে।