গাংনীর রাজাপুরবাসীর আতঙ্ক এখনও কাটেনি

ফলোআপ: পুলিশের সাথে এলকাবাসীর সংঘর্ষের মামলার জের

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার রাজপুর গ্রাম এখনও পুরুষশূন্য। পুলিশের সাথে সংঘর্ষের মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করায় গোটা গ্রামের মানুষ গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। পুলিশ কাউকে গ্রেফতার না করলেও সম্ভাব্য গ্রেফতারের আশঙ্কায় বাড়ি থাকতে পারছেন না গ্রামের পুরুষেরা। মামলা প্রত্যাহার ও খলিশাকুণ্ডি গ্রামের মানুষের হুমকিধামকি বন্ধসহ দায়ী পুলিশ সদ্যদের বিরুদ্ধে উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে দাবি জানিয়েছে গ্রামের লোকজন।

স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ আগস্ট রাজাপুর ও পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার খলিশাকুণ্ডি গ্রামের মানুষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে দু পুলিশ সদস্য আহত হলে গ্রামের মানুষের সাথে স্থানীয় কুমারীডাঙ্গা পুলিশ ক্যাম্প পুলিশের সাথে গ্রামের মানুষের দূরত্ব আরও বেড়ে যায়। পুলিশ বাদী হয়ে গ্রামের ৪৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও দেড়শ জনের নামে মামলা দায়ের করে। গ্রেফতার আতঙ্কে ওইদিন থেকেই পুরুষ মানুষ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। সংঘর্ষের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রাজাপুর গ্রামের ভুক্তভোগী লাইলী খাতুন ও মর্জিনা খাতুন জানালেন, কুমারীডাঙ্গা পুলিশ ক্যাম্পের কনস্টেবল আরিফুর রহমান ও এসআই মুস্তাজাব আলী গ্রামবাসীর রক্ষার পরিবর্তে খলিশাকুণ্ডি গ্রামের মানুষের পক্ষ নিয়েছিলেন। আরিফুর রহমান বাঁশ দিয়ে রাজাপুর গ্রামের মানুষের আঘাতের কারণে মানুষ ক্ষেপে যায়। এ ঘটনার দায় অবশ্যই মুস্তাজাব আলী ও আরিফুর রহমানকে নিতে হবে। এখন বাড়িতে পুরুষ মানুষ থাকতে পারছেন না। নারীরা ভীত সন্ত্রস্ত্র হয়ে রাতযাপন করছেন।

এদিকে ঘটনার পর থেকেই খলিশাকুণ্ডি গ্রামের মানুষের হুমকিতে মাঠেও কাজ করতে পারছেন না রাজাপুর গ্রামের কৃষকরা। কৃষক আব্দুল বারী ও মান্নান মিয়া জানিয়েছেন, রাজাপুর ও খলিশাকুণ্ডি গ্রামের মানুষের চাষাবাদ একই মাঠে। রাজাপুর গ্রামের মানুষ দুর্বল প্রকৃতির। তাছাড়া মাথাভাঙ্গা নদী পার হয়ে খলিশাকুণ্ডি গ্রামের ভেতর দিয়েই তাদের চলাচল বেশি। হুমকিধামকির কারণে এখন তারা মাঠে কাজ করতে কিংবা বাজার-ঘাটে যেতে পারছেন না। এ ব্যাপারে পুলিশও কোনো ভূমিকা রাখছে না। তাই অভিযুক্ত এসআই মুস্তাজাব আলীর অপসারণ দাবি করলেন তারা।

এদিকে গতকাল সোমবার বিকেলে গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম শফিকুল আলম, আওয়ামী লীগ নেতা আহসান উল্লাহ মোহন, জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক সোহেল আহম্মেদ, মটমুড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম ও আ.লীগ নেতা মনিরুজ্জামন আতু রাজাপুর গ্রামে যান। সংঘর্ষের দিনে পুলিশের বির্তকিত ভূমিকা তুলে ধরে ক্যাম্প ইনচার্জ ও কনস্টেবল আরিফুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপন করেন। খলিশাকুণ্ডি গ্রামের মানুষের বর্তমান কর্মকাণ্ড ও মামলা প্রত্যাহারের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যানের সহযোগিতা কামনা করে গ্রামবাসী। উপজেলা চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, বিষয়টি আলোচনা সাপেক্ষে সমাধান করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার দুপুরের দিকে কুমারীডাঙ্গা পুলিশ ক্যাম্পের আইসি মোসতাজাব, কনস্টেবল আরিফের সহায়তায় খলিশাকুণ্ডি গ্রামের শহিদুল ইসলাম দেশীয় অস্ত্র নিয়ে রাজাপুর গ্রামবাসীর ওপর হামলা করে প্রায় ১০ জনকে আহত করে। এ সময় দু পুলিশ কনস্টেবলও আহত হন। এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত আইসি মোসতাজাব বাদী হয়ে রাজাপুর গ্রামের ৩৬ জনকে এজাহার নামীয় ও অজ্ঞাত দেড়শ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। ঘটনার দিন আরিফকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হলেও বর্তমানে কুমারীডাঙ্গা ক্যাম্পে বহাল তবিয়তে আছেন এসআই মুস্তাজাব আলী।